নাইমই কেবল সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন

সমালোচকরা বলবেন আরে ৫০ বলে ৬৪ রান! স্ট্রাইকরেট ১৩০.৬১; এ আর এমন কী? তাও দু’বার জীবন পেয়ে। হ্যাঁ, এটা সত্য, আজকাল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ওপেনারদের যারা বড় ইনিংস খেলেন, তারা ১৭ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থাকলে নির্ঘাত- ১৪০ কিংবা তার বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট অন্তত ৭৫ থেকে ৮০ রানের ইনিংস খেলে ফেলতেন।

নাইম শেখ তা পারেননি; কিন্তু তারপরও তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। কারণ বাঁ-হাতি নাইম শেখের ওই ইনিংসটির ওপর ভর করেই শেষ পর্যন্ত দেড়শো পার হয়েছে (১৫৩) বাংলাদেশের।

বলে রাখা ভাল জিম্বাবুয়ের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজের পর আজই প্রথম দেড়শোর ঘরে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।

শুরু এদিনও ভাল হয়নি। লিটন দাস (৬) আবার আড়ষ্ট! দেখে মনে হলো নার্ভাস। তিন নম্বরে প্রমোশন পাওয়া তরুন শেখ মাহদিও (০) ফায়েজ বাটের অসাধারণ রিটার্ন ক্যাচের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন।

২১ রানে ২ উইকেট পতনের পর নাইম আর সাকিবই শক্ত হাল ধরেন। তাদের ওই জুটিই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে ১৫৩ পর্যন্ত।

নাইম শেখের কৃতিত্বের ভাগিদার টিম ম্যানেজমেন্টও। তারা সৌম্য সরকারকে পাল্টে এ ম্যাচে আবার নাইম শেখকে একাদশে ফিরিয়ে এনেছেন।

সেই মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে শুরু। তারপর বাংলাদেশ যতগুলো টি টোয়েন্টি ম্যাচে খেলেছে, তার সবকটাতেই ছিলেন নাইম শেখ। এমনকি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে ওমান ‘এ’ দল আর শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের সাথেও ওপেন করেছেন নাইম।

কিন্তু হুট করে তাকে বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে বাদ দেয়া হয়েছিল। তাতে লাভ হয়নি। তার বদলে খেলতে নামা সৌম্য সরকার আউট হয়ে গিয়েছিলেন মাত্র ৫ রানে। আজকে তার বদলে সুযোগ পেয়েই নাইম ক্যারিয়ারের তিন নম্বর টি-টোয়েন্টি ফিফটির দেখা পেলেন। তাও বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে আবার নেমেই প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।

অবশ্য ভাগ্যও তাকে এতদুর এনেছে। না হয় ১৭ আর ২৬ রানেই আউট হয়ে যেতে পারতেন নাইম শেখ। প্রথমবার ফায়েজ বাটের বলে জিতেন্দার সিংএক্সট্রা কভারে নাইমের ক্যাচ ফেলে দেন। বল তার হাতে লেগে ছক্কা হয়ে যায়। আর ২৬ রানে নাইমকে জীবন দেন প্রজাপতি। এবার বোলার ছিলেন মোহাম্মদ নাইম। তাকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে সোজা প্রজাপতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন নাইম।

বল ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তার হাত ফস্কে বেরিয়ে যায়। তারপর অবশ্য নাইম আর ভুল করেননি। চেষ্টা করেছেন একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি রানের চাকা সচল রাখতে। অবশ্য এই কাজে তাকে ভালই সঙ্গ দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।

তৃতীয় উইকেটে নাইম আর সাকিব ঠিক ৯ ওভারে ৮০ রানের বড় জুটি গড়েন। যাতে সাকিবের অবদান ছিল ৪২। ২৯ বলে ১৪৪.০০ স্ট্রাইকরেটে এ ইনিংসটি সাজানোর পথে সাবলীল খেলেছেন সাকিব। অ্যাপ্রোচও আক্রমণাত্মক ছিল। নিজের স্বর্ণ সময়ের সেরাটা উপহার দিতে না পারলেও সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটা সাকিবের স্বচ্ছন্দ ইনিংস।

লিটন আর নাইম মিলে তিনবার জীবন পেলেও সাকিব খানিক দূর্ভাগা। কারণ পয়েন্টে ঠেলে দৌড় দিয়েছিলেন নাইম। সাকিব কভার করতে পারেননি। ইলিয়াস আকিবের ডিরেক্ট থ্রো ভেঙ্গে দেয় উইকেট। সাকিব আউট হবার পর আর কেউ অন্য প্রান্তে বেশিক্ষণ ব্যাট করতে পারেননি।

ওদিকে নাইমও কালিমউল্লাহর বলেই ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। এরপর শুরু হয় আসা আর যাওয়ার পালা। অধিনায়ক রিয়াদ ছাড়া পরে আর কেউ দুই অংকে পা রাখতে পারেননি। সোহান (৩), আফিফ (১), মুশফিক (৪) ও সাইফউদ্দিন (০) চট জলদি ফিরেছেন বিগ হিট নিতে গিয়ে। কিন্তু একজনেরও টাইমিং ভাল হয়নি।

সোহান আউট হয়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার জিসান মাকসুদের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে। আফিফ ক্যাচ দিয়েছেন এক্সট্রা কভারে, পেসার কালিমউল্লাহর বলে। অফ ফর্মের মুশফিক উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়েছেন ৪ রানে।

সাইফউদ্দিন উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন ফায়েজ বাটকে; কিন্তু তিনিও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন লং অফে। এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংসটির ইতি ঘটান ফায়েজ বাট। তার বলে উইকেট উপড়ে যায় রিয়াদের।

তিন পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত দ্রুত গতির বোলার ফায়েজ বাট, বিলাল খান ও কালিমউল্লাহ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখেন। তিজনের বলের লাইন ও লেন্থ অনেক ভাল ছিল। আলগা ডেলিভারি কম করেছেন তিনজনই।

ফায়েজ আর বিলাল সমান তিন উইকেট দখল করেন। অপর ফাস্ট কালিমউল্লাহর ঝুলিতে জমা পড়ে ২ উইকেট।

ওমান বোলাররা দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে ব্যাটসম্যানকে হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখতে হয় এবং আলগা ডেলিভারি কম করে কিভাবে রানের গতি কমিয়ে রাখার পাশাপাশি উইকেটের পতন ঘটাতে হয়।

বাংলাদেশের বোলাররা কি তা পারবেন?

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ