নর্থ সাউথের ছাত্রীর মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনার আলামত পায়নি পুলিশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর উত্তরায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ‘দুর্ঘটনাজনিত’ কারণে মৃত্যু হয়েছে। বিবিএ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। নাম আফরিদা আহমেদ, বয়স ২০ বছর। তাঁর বাবা বেনজীর আহমেদ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। স্বজনরা দাবি করেছে, গত সোমবার বান্ধবীর সঙ্গে রিকশায় থাকা আফরিদা উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান। আরেকটি সূত্রে জানা যায়, মিনিবাসের ধাক্কায় গাড়িতে থাকা ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আফরিদা মারা গেছেন বাড়ির বারান্দা থেকে নিচে পড়ে। পরিবার পথদুর্ঘটনায় এই মৃত্যু হয়েছে দাবি করে থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে সন্দেহ করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে পরিবারের আপত্তিতে কোনো মামলা হয়নি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই মঙ্গলবার লাশ দাফন করে ফেলে পরিবার। এদিকে প্রাণবন্ত এই ছাত্রীর আকালমৃত্যুতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে তাঁর সহপাঠী, শিক্ষক ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁরা খবর পেয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আফরিদা মারা গেছেন। তবে কিভাবে তা ঘটেছে তা জানেন না কেউ।

আনলাইন পোর্টাল ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে উত্তরায় আফরিদার গাড়িকে ধাক্কা দেয় একটি মিনিবাস। প্রথমে তাঁকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ও পরে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়। সোমবারই তাঁকে মৃত ঘোষণা করে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে আফরিদার মরদেহ দাফন করা হয়।

গতকাল বুধবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. শাহজাহান বলেন, ‘উত্তরায় বাসার কাছে দুর্ঘটনা ঘটেছে। রিকশা বা গাড়িতে ছিল সে। এর বেশি আমাদের জানা নেই। ’ তিনি আরো জানান, শুক্রবার বাদ জুমা বাসার কাছে এবং শনিবার গুলশান আজাদ মসজিদে দোয়া ও মিলাদ হবে।

গতকাল বিকেলে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে ১০ নম্বর সড়কে আফরিদাদের বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে দেখা যায়। বাড়ির নিচেই তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বেনজীর আহমেদ। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এক বান্ধবীর সঙ্গে রিকশায় যাচ্ছিল। ওদের কাজ ছিল। ১২ নম্বর সেক্টরের রাস্তায় একটি মাইক্রোবাস ধাক্কা দেয়। প্রথমে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওরা বলে পারবে না, তাই অ্যাপোলোতে নেওয়া হয়। আর বাঁচাতে পারলাম না। ’

কোন গাড়ি কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটাল সে বিষয়ে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সকাল ৮টা সাড়ে ৮টা। অফিসে যায় সেসব মাইক্রোবাস। কেউ তো বের করতে পারেনি। আমার মেয়ে তো চলে গেছে। তাই আর খোঁজ নিইনি। ’ পুলিশ এসেছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে এসেছিল। হাসপাতালেও গেছে। আমরা কিছু করিনি। ’ দুর্ঘটনা ও পরিবারের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মানসিক অবস্থা এখন ভালো নয়। ’

আফরিদাদের গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজনকে দুর্ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘দুর্ঘটনা তো বাড়িতেই হয়েছে!’ তাঁর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আর কিছু বলেননি।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা নয়, আফরিদা মারা গেছেন বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে। ঘটনার পর আমরা ওই বাড়িতে গেছি। আফরিদার ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। দোতলার বারান্দা থেকে তিনি গাড়ির গ্যারেজের ছাদের ওপর পড়ে গিয়েছিলেন। পরিবারের সবাই একে দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছে। ’

এখন স্বজনরা সড়ক দুর্ঘটনা বলছে, জানালে পরিদর্শক রাজ্জাক বলেন, ‘তাঁরা এখন কেন সড়ক দুর্ঘটনা বলছেন, জানি না। আমরা সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করি। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় মামলা হয়নি। ’ ঘটনাটি আত্মহত্যাও হতে পারে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কোনো অভিযোগ নেই, দুর্ঘটনা—এমন দাবি করে আবেদন করলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়। ’

দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন আফরিদা। তাঁর জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি তিনি ওই দেশেই লেখাপড়া করতে যেতে চাইছিলেন বলে বন্ধুরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে।

সূত্র:কালের কণঠ