নবাব সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দিয়ে…

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

তিনি স্যার নবাব সলিমুল্লাহর ‘নাতি’! দুবাইয়ে আছে তাঁর সোনার কারখানা। চলতেন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। তাঁর বাবা নাকি ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মালিকানা রয়েছে তাঁর। মন্ত্রী, সাংসদসহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করতেন তিনি। এরপর ফেসবুকে তিনি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতেন। পরে মাউন্ট এলিজাবেথে বিনা খরচে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হাজারের বেশি মানুষের কাছ থেকে আত্মসাৎ করতেন কোটি কোটি টাকা। এসব অভিযোগ উঠেছে আলী হাসান আসকারির বিরুদ্ধে।
রাজধানীর ধানমন্ডিসহ রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গতকাল বুধবার এই আলী হাসান আসকারিসহ (৪৮) পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতারক হাসান আসকারীর কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত তাঁর ভুয়া কোম্পানির প্রচারপত্র, নবাব পরিবারের অ্যামবুশ সিল, ওয়াকিটকি সেট, ভিওআইপি সরঞ্জাম, বিদেশে পাঠানোর নামে তৈরি করা সাড়ে ৩০০ মেডিকেল সনদ, ল্যাপটপ ও কয়েকটি মুঠোফোনের সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপকমিশনার মো. মাইফুজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও গত ২৪ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় হওয়া মামলার ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের মূল হোতা আলী হাসান আসকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলী হাসান মাউন্ট এলিজাবেথের মালিক সেজে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভুক্তভোগীরা ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের। আলী হাসান গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা টাকা ফেরত পেতে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন।
প্রতারণার শিকার ও মামলার বাদী ফেনীর স্কুলশিক্ষক আবদুল আহাদ সালমান প্রথম আলোকে বলেন, গত মে মাসে আলী হাসান আসকারি তাঁকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। আলী আসকারি নিজেকে নবাব সলিমুল্লাহর নাতি বলে পরিচয় দেন। মন্ত্রী, এমপি, শিল্পপতিসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ছিল তাঁর ছবি।

সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথের সামনে তার নিয়োগ করা কর্মীদের সঙ্গে ব্যানারসহ ছবিও ছিল। পরে আলী হাসান তাঁর সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের মধ্যে দেখা হয়। এক পর্যায়ে আলী হাসান বলেন, মাউন্ট এলিজাবেথে তিনি ৪০০ জনকে বিনা খরচে চাকরি দিতে চান। তবে প্রত্যেকর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ৮০০ টাকা ও চিকিৎসা সনদের জন্য ৭৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে।
আবদুল আহাদ বলেন, আলী হাসানের কথায় মুগ্ধ হয়ে তিনি ফেনীর ৪০০ দরিদ্র যুবকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আলী হাসানের হাতে তুলে দেন। এরপর থেকেই আলী হাসান লাপাত্তা। তার সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে মাউন্ট এলিজাবেথের সামনের ব্যানারের ছবিতে থাকা সিঙ্গাপুরের একটি নম্বরে ফোন করলে সেখান থেকে বলা হয়, আলী হাসান তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। পরে তিনি ধানমন্ডি থানায় আলী হাসানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন।

সূত্র: প্রথমআলো