নতুন সড়ক আইন দ্রুত কার্যকর হচ্ছে না!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দাবির চাপে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। জাতীয় সংসদে আইনটি পাস করার পর প্রজ্ঞাপন হয়েছে। কিন্তু এরপর গত প্রায় সাত মাসেও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এতে করে শিগগিরই এ আইন বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।

নতুন এ আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কে ‘হত্যা’ বাড়ছে। বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দিনে কমপক্ষে ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটছে। অভিযান চললেও ঢাকার সড়কে বিশৃঙ্খলা কমছে না বরং দিন দিন বাড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে চলা অভিযানে ঢাকায় পরিবহন মালিকরা জরিমানা ও শাস্তির প্রতিবাদে বাস বন্ধ রেখে বিপর্যয় তৈরি করেছে। জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

এরই মধ্যে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করতে গত বুধবার সরকারের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে এ নোটিশ পাঠানো হয়। আইন কার্যকর করতে সাত দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করতে বলা হয় তাতে। মন্ত্রিপরিষদসচিবসহ আট সচিবকে এ নোটিশ দেওয়া হয়।

এর পরই মূলত গত বৃহস্পতিবার তিন মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির বৈঠক হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নতুন আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ ও বাস্তবসম্মত সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে এ কমিটি করা হয়। কমিটিতে আরো আছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। কমিটি গঠনের প্রায় দুই মাস পর গত বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠক হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আইনের যেসব ধারা নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে সেগুলো তাঁরা দেখেছেন। এটাকে আরেকটু ভালো করে দেখে অংশীজনদের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করা হবে। আইনে কিছু যোগ-বিয়োগ করতে হলে তা পর্যালোচনার পর বিবেচনা করা হবে। তিনি দাবি করেন, বিধি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে।

পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণকারী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বিভিন্ন মালিক সমিতি তাদের দাবিগুলো আগামীকাল সোমবার সরকারের কাছে তুলে ধরবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তি ও জরিমানা কমাতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা আইন প্রণয়নের আগে থেকেই আন্দোলন করে আসছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তারা মাঠে আন্দোলন করেছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারকারী পরিবহন মালিকদের একটি চক্র দ্রুত বিধিমালা করতে বাধা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

নতুন আইনটির প্রক্রিয়া ও প্রস্তাব ১১ বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল পরিবহন মালিকদের চাপে। আইনের খসড়াটি ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পর বিভিন্ন ধারা সংশোধনের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট পালন করে।

এরপর গত বছরের জুলাই ও আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে খুদে শিক্ষার্থীদের ৯ দিনের টানা আন্দোলনের পর ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়া অনুমোদন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এর বিরোধিতা করে ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট করে। অবশ্য পরে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়। প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় ৮ অক্টোবর। সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের ১(২) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার গেজেটের মাধ্যমে যে তারিখ নির্ধারণ করবে, সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হবে। আইন কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় আইনটি কার্যকর হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুর রহিম বক্স দুদু বলেন, ‘সরকার ও আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া না হলে এ আইন বাস্তবায়িত হবে না।’

একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘আমরা আগামী সোমবার আমাদের দাবিগুলো আবার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেব।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এক মাসের মধ্যে বিধিমালা তৈরি করতে পারব। তারপর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আমরা কোনো পক্ষের চাপে নেই।’

তবে আইনটি বিধিমালা প্রণয়নের আগেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন আইনজীবী জোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন করার পর বিধিমালা হওয়ার আগেই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একইভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হওয়ার পরই সাংবাদিকদের ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। তাহলে এই সড়ক আইনের ক্ষেত্রে বিধিমালার অজুহাত তোলাটা অযৌক্তিক। আর বিধিমালা করতে সাত মাসেও কোনো কাজ হয়নি কেন—এটাও প্রশ্ন।’

এরই মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে সভাপতি করে গঠিত ২২ সদস্যের কমিটি ১১১টি সুপারিশ তৈরি করেছে। এর মধ্যে দ্রুত সময়ে সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করে প্রজ্ঞাপন জারির সুপারিশও আছে।