নতুন গবেষণা: ‘চিনির বিকল্প জিরো ক্যালরিতে বাড়ে হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোকের ঝুঁকি’

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

চিনির বিকল্প হিসেবে জিরো ক্যালরির ‘কৃত্রিম চিনি’ ইরিথ্রিটলের ব্যবহার বিশ্বে এখন বেশ জনপ্রিয়। কোমল পানীয় থেকে শুরু করে অনেক খাদ্যপণ্যে ইরিথ্রিটল ব্যবহার করা হচ্ছে দেদারসে। তবে এসব কৃত্রিম চিনি হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়— দীর্ঘ তিন বছরের এক গবেষণায় এমন তথ্য পেয়েছেন একদল গবেষক।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ন্যাচার মেডিসন নামক একটি জার্নালে এ গবেষণার তথ্য প্রথম প্রকাশ করা হয়েছে। খবর এবিসি নিউজের।

গবেষকরা জানিয়েছেন, যেসব বয়স্ক ব্যক্তি অতি মাত্রায় ইরিথ্রিটল গ্রহণ করেন এবং ইতোমধ্যে হার্টের রোগে ভুগছেন তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তিন বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যারা হার্ট এবং রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত জটিল রোগ— হার্ট অ্যাটাক, রক্ত জমাট, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছেন  তাদের মধ্যে ইরিথ্রিটলের মাত্রা বেশি ছিল।

তবে গবেষকরা আবারও এও বলেছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও অনেক বেশি গবেষণা প্রয়োজন। এখনই শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কোনো কিছু বলা যাবে না এবং ইরিথ্রিটলকেই দোষারোপ করা যাবে না। বিশেষ করে যেহেতু এই গবেষণার ফলাফল সবার কাছে সাধারণীকরণযোগ্য না।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) তথ্য অনুযায়ী, ইরিথ্রিটল হলো একটি ‘চিনি অ্যালকোহল’ যেটি প্রাকৃতিকভাবে তরমুজ, নাশপাতি এবং আঙ্গুরে পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীতে কৃত্রিম ইরিথ্রিটল খাবারের মিষ্টতা এবং স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করার প্রচলন ঘটে।

এফডিএর অধীনে হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি পরীক্ষা সমীপে ওঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মানুষ, গড়ে প্রতিদিন ৩০ গ্রামের বেশি ইরিথ্রিটল গ্রহণ করেন।

বিশ্বব্যাপী এই কৃত্রিম চিনি অধিক জনপ্রিয় হওয়ায় কোমল পানীয়, ডায়েট খাবার এবং অন্যান্য খাবারে ইরিথ্রিটিল ব্যবহার একটি সাধারণ উপকরণে পরিণত হয়েছে।

অবশ্য এফডিএর মতো যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত বলেছে, ইরিথ্রিটল বা কৃত্রিম চিনি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ না। তবে এগুলোর দীর্ঘকালীন প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না।

 ইরিথ্রিটলের বিকল্প?

যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে ১৭ চা চামুচ চিনি অথবা ২৭০ গ্রাম ক্যালরি গ্রহণ করেন বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়।

মার্কিন ডায়েটিশিয়ান আন্না টেইলর ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিককে বলেছেন, খাবার অথবা পানীয়কে মিষ্টি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হলো তাজা অথবা হিমায়িত ফল।

টেইলর পরামর্শ দিয়েছেন, খাবারে মিষ্টি যোগ করার জন্য ইরিথ্রিটলের বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়ার মতো হার্বাল (ভেষজ) ব্যবহার করা যায়, যেটি নকল চিনি না। তবে গবেষকরা হুশিয়ারি দিয়েছেন, চিনির বিকল্প হিসেবে অন্য যেসব পণ্য আছে সেগুলো ভারী করার জন্য ইরিথ্রিটল মেশানো হয়।

প্রাকৃতিক চিনি যেমন মধু, ম্যাপেল সিরাপ, অ্যাগাভ এবং কাঁচা চিনি— গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোস মিশ্রিত চিনির চেয়ে বেশি পুষ্টি, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং অন্ত্রের প্রিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া প্রদান করে। কিন্তু এগুলোর মধ্যেও ফ্রুকটোস কর্ন সিরাপ থাকে, যা বিপাকতন্ত্রের দীর্ঘকালীন সমস্যার জন্য দায়ী।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, বিষন্নতা এবং হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে চিনির মাত্রা কমাতে হবে। এর বদলে বিভিন্ন ধরনের ফল এবং শাক-সবজির ওপর জোর দিতে হবে।

ডায়েটিশিয়ান টেইলর বলেছেন, স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো— কোনো চিনিই ব্যবহার না করা। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘এটি সত্য সোডা, মিষ্টি চা, ফলের জুস, চিনি, কফি-চায়ে বিকল্প চিনি সবকিছুতেই চিনি আছে। এজন্য সাধারণ পানি খান! অন্তত ফ্লেভার ছাড়া চা, কফি, বুদবুদে পানি অথবা পানিসমৃদ্ধ ফল খান।’