নগরীতে চিতই পিঠা বানিয়ে জীবন চলে শিশু তাহাবুলের

নূপুর মাহমুদ:

জীবন জীবীকা আর ক্ষুধা নামক হিংস্র জন্তুর থাবায় ক্ষতবিক্ষত ছোট্ট শিশু তাহাবুলের (১০) জীবন। ক্ষুধার তাড়নায় ভাতের অভাবে এই অল্প বয়সেই তাকে নামতে হয় কঠিন এক সংগ্রামে। দায়িত্ব নিতে হয় নিজেকে নিজের।কাজ না করলে পেটে যে তার ভাত জুটবে না তা বুঝে যায় অবুজ বয়সেই।

তাই তো চিতই পিঠা বানিয়ে যেমন অন্যের খাবারের ব্যবস্থা করছে। তেমনি করে জুটছে নিজের দুবেলা দুমুঠো ভাতের সন্ধান। রাজশাহী নগরীর সোনাদিঘী মোড়ে ছোট একটি ভ্যান গাড়িতে করে, নিজ হাতে চালের আটা দিয়ে চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করছে শিশু দোকানদার তাহাবুল ইসলাম।

তার বাড়ি মান্দা থানার চৌবাড়িয়া গ্রামে। বাবা মা ভাই বোন সবাই সেখানেই থাকে। তবে সে একাই রাজশাহী নগরীর দাসপুকুর এলাকায় একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে রাত টুকু যাপন করে।

তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার জীবনের সমস্তটা শ্রম আর চেষ্টা দিয়ে সংগ্রাম অব্যহত রেখে যাচ্ছে একটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য, দুবেলা খাবার জন্য । তবে সমাজ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য পদ্ধতির কারণে অভাবী ও দরিদ্র মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দবোধ খুব একটা আসে না তার। তবুও শিশুটির পথ হেটে যেতে হয় একা একা কাজ করে।

তার ভ্যানের সামনে দাড়িয়ে চিতই খেতে দেখা এক স্কুল শিক্ষককের সাথে কথা হলে। তিনি বলেন, তাহাবুলের উদ্দেশ্য, শিশুরাই জাতীর ভবিষ্যত মর্মবানী বানী থাকলেও কে কতটা সেই বানীকে মূল্যবোধের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেই। “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুই অন্তরে ”… অন্তনির্হিত কোমলমতি শিশুর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্র সমাজ উদাসিন হয় সে দেশের প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শংকা তৈরী হয়।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহী শহর ও গ্রামীন জনপদে দরিদ্র পরিবারের অসংখ্য শিশু কিশোররা ভাত কাপড়ের অভাবে মৌলিক জীবনের প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে বয়সে ইচ্ছে খুশির ভেলায় ভেসে স্বপ্ন রঙ্গিন ঘুড়ি হওয়ার কথা সে বয়সেই অসংখ্য শিশু এক মুঠো ভাতের সংগ্রামে কখনও চিতই পিঠা বা অন্যন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

জীবন সংগ্রামের কথা জানতে চাইলে শিশু তাহাবুল বলেন, তাদের সংসারের সে ছোট ছেলে। সংসারে তিন বেলা ভালো করে খাবার জোটে না। তাই সে এই পেশা কে বেছে নিয়েছে। যে সময় তার পড়াশুনার কথা, সে বয়সে কাজে ব্যস্ত শুধু দুমুঠো ভাতের জন্য। সন্ধ্যাবেলা থেকে রাত ১০ টা পযন্ত চলছে তাহাবুলের ব্যবসা। ভিড়ের মধ্যেই নিজেই  চিতই বানিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে এক হাতেই সামলিয়ে যাচ্ছে ক্রেতাদের।

পড়াশুনা নিয়ে কথা বললে তাহাবুল বলেন, রাজশাহীতেই একটা স্কুলে ভর্তি হবো সকাল থেকে স্কুলে পড়বো আর রাত করে এই ব্যবসা করবো। আমি ও শিক্ষিত হতে চায়, কিন্তু পরিবারের তো  সামথ্য নাই যে, আমাকে পড়াবে। তাই ব্যবসায় চালিয়েই লেখাপড়া করার ইচ্ছে আছে।

স/অ