নওগাঁ পৌরসভার অর্ধেক সড়কবাতিই জ্বলে না

কাজী কামাল হোসেন, নওগা:
নওগাঁ শহরের অধিকাংশ এলাকায় এমনিতেই পর্যাপ্ত সড়কবাতি নেই। তার উপর মেরামতের অভাবে অচল হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ সড়কবাতি। ফলে, সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার হয়ে পড়ছে নওগাঁ শহরের অধিকাংশ রাস্তা। এতে সমস্যায় পড়ছেন রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নারীরা। কর্তৃপক্ষের দেখভালের অভাবে এ পরিস্থিতি বলে অভিযোগ পৌরবাসীর।

সমস্যার কথা মানছেন পৌর কর্তৃপক্ষও। পৌরসভার মেয়র নজমুল হক বলেন, ‘অধিকাংশ সড়কবাতি নষ্ট হয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে গত দুই মাস ধরে সড়কবাতির সংযোগগুলো মেরামত কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়া বাতি নতুন করে না লাগানোয় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। তবে আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে সড়কবাতিগুলো ঠিক করা হবে।’

নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় কাগজে-কলমে চার হাজার ২০০টি সড়কবাতি থাকলেও প্রধান সড়ক ও পাড়া মহল্লার অনেক রাস্তায় রাতের বেলা সড়কবাতি জ্বলে না। পৌর কর্তৃপক্ষ ঠিক কতগুলো সড়কবাতি বর্তমানে বিকল হয়ে আছে এই সংখ্যা জানাতে পারলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অর্ধেকেরও বেশি সড়কবাতি অনেক দিন ধরেই অকেজো হয়ে আছে।

প্রধান সব সড়কে আশপাশের দোকানের বাতি আর নিয়ন সাইনবোর্ডের আলোতে যতটুকু আলোকিত হয়, তা দিয়েই পথচারী ও যানবাহনের চলাচল করতে হয়। তবে দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সড়কে অন্ধকার নেমে আসে। সবচেয়ে খারাপ পাড়া মহল্লার ছোট রাস্তুাগুলোর। প্রধান রাস্তাগুলোতে কিছু সড়কবাতি এখনও সড়কবাতি সচল থাকলেও ছোট রাস্তাগুলোতে প্রায় সব সড়কবাতি অচল হয়ে পড়েছে।

ফলে সন্ধ্যা নামলেই এসব রাস্তায় ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার নেমে আসে। রাতেই বেলা এসব ছোট রাস্তাগুলোতে আতঙ্ক নিয়ে পথচারীরা চলাচল করেন। অন্ধকারের সুযোগে এসব রাস্তায় প্রায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অনেক রিকশাচালক রাতের বেলা এসব পথে যাত্রী পরিবহন করতে চান না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটি বাতি নষ্ট হলে নতুন করে লাগাতে অনেক সময় লেগে যায়। এলাকার কাউন্সিলরদের বারবার জানালেও কোনো কাজ হয় না। পৌর কর্তৃপক্ষের যথাযথ দেখভালের অভাবে সড়কবাতিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে থাকছে।

গত রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়কগুলোর (বালুডাঙ্গা-ব্রিজের মোড়, তাজের মোড়-ঢাকা রোড, ব্রিজের মোড়-ডিগ্রির মোড়, কেডির মোড়-মুক্তির মোড়, হাসপাতাল রোড, কাচারি রোড, কালিতলা রোড) বেশিরভাগ সড়কবাতিই জ্বলছে না। ছোট বা গলি রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ।

বিজিবি রোডের নামাজগড় মাদ্রাসা থেকে তাজের মোড় পর্যন্ত ১৫টি সড়কবাতির মধ্যে জ্বলছে মাত্র চারটি। সরিষাহাটির মোড় থেকে জনকল্যাণ মোড় পর্যন্ত সাতটি সড়কবাতির মধ্যে শুধু একটি সড়কবাতি জ্বলতে দেখা গেছে। গোস্তহাটির মোড় থেকে নাপিতপাড়া পর্যন্ত ১৭টি সড়কবাতির মধ্যে মাত্র ৮টি সড়কবাতি জ্বলছে। পাড়া-মহল্লার গলিপথগুলোর ৮০-৯০ শতাংশ সড়কবাতিই জ্বলে না।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের পার-নওগাঁ হাজিপাড়ার বাসিন্দা স্বপন কুমার রায়, জিল্লুর রহমান, মিলনকুমার দাশ সহ ছয়-সাতজন জানান, প্রায় ছয়-সাত মাস হলো মহল্লার গলি রাস্তাগুলোতে কোনো সড়কবাতি নেই। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার নেমে আসে। ফলে গলিপথগুলোতে আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। অথচ প্রথম শ্রেণির পৌরসভার বাসিন্দা হিসেবে কর ঠিকই দিতে হচ্ছে।

চকদেব ডাক্তার পাড়ার বাসিন্দা আনোয়ারা খাতুন সিল্কসিটি নিউজচকে বলেন, ‘সরিষাহাটির মোড় থেকে ডাক্তারপাড়া সরকারি গোরস্থান মোড় পর্যন্ত এই এলাকায় কোনো ল্যাম্পপোস্ট জ্বলতে দেখি না। ফলে রাতের বেলা এই রাস্তা দিয়ে অনেক ভয়ে পথ চলতে হয়।’

৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম নজমুল হক মন্টু বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে গত ডিসেম্বরে প্রায় ১০০টি সড়কবাতি লাগিয়েছি। তবে এখনও আরও ১০০টি বাতি লাগবে। এগুলোর জন্য মেয়রের কাছে আবেদন করেছি।’

পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা সটসার্কিট বা ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ঘটলে অনেক বাতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় দুষ্টু মানুষেরা সড়কবাতিগুলো ইট ছুঁড়ে নষ্ট করে দেয়। আবার অনেক সময় সড়কবাতিগুলো চোরের দল চুরি করে নিয়ে যায়। পৌরসভায় ৪ হাজার ২০০ লাইটপোস্ট আছে। এর মধ্যে ২ হাজারের মতো লাইটপোস্টে বাতি নেই। আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে সবখানেই বাতি লাগানো হবে।’
স/শ