নওগাঁ-আত্রাই সড়ক: ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা, আতঙ্কে এলাকাবাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ ও আত্রাই প্রতিনিধি:

আত্রাইয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের মির্জাপুর নামক স্থানে আবারও ফাটল দেখা দেয়ায় যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফাটলের সংবাদ পেয়ে গত শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান ওই স্থান পরিদর্শণ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসন, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন স্তারের সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সাথে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

এ দিকে সড়কে ফাটল দেখা দেয়ায় এলাকাবাসিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকার হাজার হাজার জনগন তাদের আবাদি ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। নওগাঁ শহরের সাথে আত্রাই উপজেলাবাসীর যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা, রাস্তার কাজে বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজের মাধ্যমে সরকারি লাখ টাকা পকেটে তোলায় পরপর দুই বছর একই স্থানে ভেঙ্গে যায়। উধ্বর্তন কর্মকর্তার নজদারিতে দ্রুত সড়কটি সঠিক ভাবে রক্ষা করা ও অনিয়ম-দুনীর্তিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এলাকাবাসী।

52654 copy
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানিপুর, মির্জাপুর, রসুলপুর, হাটকালুপাড়া এলাকায় আত্রাই নদী ও ছোট যমুনা নদীর মোহনা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দুই নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলেই মুহূর্তের মধ্যে ভয়াঙ্কর রূপ ধারন করে। গত ২০১৪ সালের ২৩ আগষ্ট ভোর রাতে আত্রাই-নওগাঁ চলাচলের একমাত্র আঞ্চলিক সড়কের মির্জাপুর নামক একই স্থানে ভেঙ্গে যায়। এতে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানি বন্দি হয়ে পরেন দেড় লাখ মানুষ। সড়কটির দুই পাশে ব্লক দেয়া ও স্লুইস গেইট নির্মাণের দাবি জানানো হয়ে আসছিলেন এলাকাবাসির। ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস পর সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে ভাঙ্গা স্থানটি মেরামতের জন্যে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

index.jpg66 copy
স্থানীয়রা জানান, সংশ্লিষ্টার ব্লক দেয়া ও স্লুইস গেইট নির্মাণে কোন উদ্যোগ না গ্রহণ করেই টাকা বরাদ্দের পর তরিঘরি করে নাম মাত্র মাটি কেটে রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। সড়কটি সঠিকভাবে মেরামত না করায় নওগাঁ-আত্রাই সড়কের পুরোপুরি যানবাহন চলাফেরা করতে পারে না। এতে সাধারণ যাত্রীদের  গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ফলে আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার তিন লাখ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

 
মির্জাপুর গ্রামের জাহিদ হাসান জানান, ভাঙ্গেনের আগে সড়ক যে উচ্চতায় ছিল তার চেয়ে এ বছর ৫ থেকে ৭ ফিট সড়ক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের একেবারে গোরা (নীচ) থেকে মাটি কেটে সড়কটি মেরামত করা হয়েছে।

 
ভবানীপুর গ্রামের আবুল কালাম জানান, ভাঙ্গাস্থানে সড়কের কাজ করার সময় কোন সিডিউল টাঙ্গানো হয়নি। এছাড়াও সড়কটি সোজা না করে পানির চাপের দিকে বাঁকা করে মেরামত করা হয়েছে। বাঁকা করে মেরামতের ফলে পানির  একটু চাপ সহ্য করতে পারবে না সড়কটি।

 

শাহাগোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম জানান, গত বছরও একই স্থানে ভাঙ্গনে ৪২ লাখ টাকা খরচ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাদ্দের টাকা লুটপাট করায় এ বছরও সড়কটি ভেঙ্গে যায়। সেই স্থানে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

index copy
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্টার তার না করে এক-তৃতীয়াংশ কাজ করে বাঁকি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ওই স্থানে ব্লক এবং একটি স্লুইট গেইট নির্মাণের দাবি জানানো হলেও তার কোন উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। নিম্নমাণের কাজ করার ঘটনায় জড়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

 

রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর ভাঙ্গনের স্থানটি মেরামতের সময় রাস্তার একেবারে নিচ থেকে মাটি ও বালু তুলে  দায় সাড়াভাবে রাস্তটি মেরামত করায় ভেঙ্গে গেছে। গত কয়েক দিন আগে উজান থেকে নেমে আসা সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। এ বছরও বন্যায় যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 
উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের আজাদ সরদার জানান, গত বছর সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের প্রায় ৩০ বিঘার ধান সম্পন্ন নষ্ট হয়ে যায়। তাদের মত এলকার হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ বছরও ওই স্থানের অবস্থা ভালো নয় এমন জেনে এখন পর্যন্ত কোন জমিতে আমন ধান চাষ করার জন্যে জমি তৈরী করতে সাহস পাইনি।

 
নওগাঁর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে সেখানে একটি স্লুইট গেইট নির্মাণ ও রাস্তার দুই পাশে ব্লক দেয়ার। পরপর দুই বছর ভাঙ্গন স্থানটি মেরামত করার সময় অনিয়ম ও টাকা লুটপাটের প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশুলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বন্যায় পানির বেশি চাপ হলে কোন কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাশাসক ড. আমিনুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মির্জাপুর স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদের ভিত্তিতে পরিদর্শণ করা হয়েছে। সড়কটি স্থায়ীভাবে রক্ষা করার জন্যে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অপর প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও রাস্তাটি প্রয়োজনের তুলনায় নিচু হওয়ায় সড়কটি উপর দিয়ে দ্রুত আরো মাটি ফেলে রক্ষা করার জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স/অ