নওগাঁয় ভোট কেন্দ্রে দুর্বৃত্তের হামলায় তিন সাংবাদিক আহত, ক্যামেরা ভাংচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর দুপুর পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে দেখা যায়। কিন্তু দুপুরের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। দুপুরের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেন্দ্রে ঢুকে জোর করে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ আসতে থাকে। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধর ও হেনন্তার শিকার হয়েছেন অন্তত তিনজন সাংবাদিক।

আজ শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। দুপুর ১টার দিকে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে শহরের নওগাঁ সরকারি ডিগ্রী কলেজে ঢুকে জোর করে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ উঠে। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধর ও হেনন্তার শিকার হন এসএ টিভির স্টাফ রিপোর্টার হেতায়েত উল্লাহ সীমান্ত, নওগাঁ প্রতিনিধি তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যামেরাপার্সন শহিদুজ্জামান। এ সময় এসএ টিভির ক্যামেরা ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

১নং ওয়ার্ডের নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজ পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আল হাসিব পরাগ জানান, দুপুর ১টার দিকে বুথের ভেতর ঢুকে পড়ে কিছু দুবৃর্ত্তরা। এ সময় তারা জোর করে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তারপর আর কোনো গোলযোগ হয়নি। বেলা ১১টার দিকে ওই ওয়ার্ডের বরুনকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে জোর কেরে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ হয়। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে প্রায় আধাঘন্টা ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। পরে আবার ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার অভিযোগ করেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চললেও দুপুরের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা নওগাঁ সরকারি ডিগ্রী কলেজ, চকগরীব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরজি নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়, সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোর করে ঢুকে পড়ে ব্যালটে সিল মেরেছে। এ ঘটনার পর নির্বাচনকে আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা চলে না। কেন্দ্র দখল করে জোর করে সিল মারার ঘটনায় কেন্দ্রে উপস্থিত আমার কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও তারা ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়নি।

বিএনপির প্রার্থী নজমুল হক বলেন, সকাল থেকে যেভাবে ভোটাররা যেত কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিচ্ছিল। পরাজয় নিশ্চিত জেনে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগের কর্মী-সর্মথকেরা কেন্দ্র দখল করে জোর করে সিল মারে। অভিযোগ পাওয়ার পরেও পুলিশ যথাযথ সময়ে ভূমিকা পালন করেনি। তারপরেও জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোনো গোলযোগ হয়নি। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে জোর করে ব্যালটে সিল মারার যে অভিযোগ করেছে তার কোনো ভিত্তি নেই। পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা মিথ্যা অভিযোগ করছে।

নওগাঁ পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, পৌরসভার ৪১টি কেন্দ্রের মধ্যে দুই-তিনটি কেন্দ্রে দুপুরের দিকে গোলযোগ করার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষনিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বড় ধরণের কোনো গোলযোগ হয়নি। কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিতও করা হয়নি। ভোটগ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন, ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিল পদে ৫৭জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৯জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা, বিএনপির নজমুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল, জাতীয় পার্টির ইফতারুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আতিকুল ইসলাম।

এদিকে একই দিন নওগাঁর ধামইরহাট পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ধামইরহাট পৌরসভায় বড় ধরণের কোনো গোলযোগের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

ধামইরহাট পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ধামইরহাটে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পৌরসভায় ৭০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে। ধামইরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৩জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৭জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৬জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।