জমে উঠেছে নওগাঁর কুরবানীর পশুর হাট

নিজস্ব প্রতিবেদক,নওগাঁ:
ঈদুল আজহা উপলক্ষে নওগাঁর বিভিন্ন স্থানের পশুর হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। এতে গরুর মালিকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ক্রেতারা বলছেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় গরুর দাম কম ও সহনীয়। তবে অধিকাংশ হাটেই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশু কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

গত এক সপ্তাহ ধরে নওগাঁর আটটি হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি হাটেই প্রচুর গরু উঠছে। ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় গরু কেনাবেচাও হচ্ছে কম। হাটগুলোতে দেশীয় গরুর প্রাধান্যই বেশি এবং ভারতীয় গরুর সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কম দেখা গেছে।

শুক্রবার জেলার মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাটে কথা হয় উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি আব্দুস সোবহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশী জাতের দুটি বকনা বাছুর ও দুটি ষাঁড় অনেক যত্ন করে বড় করেছি। আশা করেছিলাম, গরুগুলো বিক্রি করে লাভের মুখ দেখব। কিন্তু বাজারে নেওয়ার পর ক্রেতারা দাম বলা দেখে হতাশ হচ্ছি। এখন গত মঙ্গলবার সতীহাটেও গরুগুলো বিক্রির জন্য তুলেছিলাম। কিন্তু দাম কম বলায় বিক্রি করিনি। আজও দাম প্রত্যাশায় চেয়ে ক্রেতারা কম বলছে। শেষ পর্যন্ত বাজার এই রকম থাকলে লোকসান গুনতে হবে।’

মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী দেলওয়ার হোসেন, জাহিদুল ইসলাম ও জিয়াউল হক বলেন, তাঁরা মৌসুমি ব্যবসায়ী। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্থানীয় খামারি ও গৃহস্তদের কাছ থেকে গরু কিনে হাটে বিক্রি করেন তাঁরা। কিন্তু নানা জায়গা থেকে আসা গরুর ব্যাপারীরা এবার হাটে কম আসছেন। অল্প সংখ্যক ব্যাপারী যাঁরা আসছেন, তাঁদের কাছেই গরু কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে তাঁরা গরু প্রতি প্রত্যাশার চেয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করে লোকসান গুনছেন।


নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র খামারী আনিছুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরে গরু ব্যবসায়ীরা পাল্লা দিয়ে গরু কিনে, এতে গরুর মালিকেরাও লাভবান হয়। এবার ব্যবসায়ীরা কম দেওয়ায় মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গত বুধবার মহাদেবপুর উপজেলা মাতাজী হাটে গরু কিনতে আসা আব্দুল জব্বার, জাহাঙ্গীর আলমসহ ছয়-সাতজন ক্রেতা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম মনে হচ্ছে। বাজেটের মধ্যেই গরু কিনতে পেরে তাঁরা খুশি।

তবে তাঁরা অভিযোগ করেন, গরু প্রতি ৩০০ টাকা খাজনা নেওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের কাছ থেকে ৪৫০ টাকা করে খাজনা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছে দেওয়া খাজনার রসিদে দেখা গেল, রসিদের টাকার পরিমান ঘরটি ফাঁকা রয়েছে।

শুধু ক্রেতাদের কাছ থেকে খাজনা নেওয়ার কথা থাকলেও বিক্রেতাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন। মাতাজী হাটে কথা হয় গরু বিক্রেতা মহাদেবপুরের বাবুল আখতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরু বিক্রির জন্য ইজারাদারের লোকজন হাট-কমিটি ফান্ডের কথা বলে ১০০ টাকা খাজনা নিয়েছে। টাকা নিলেও আমাকে রসিদ দেওয়া হয়নি। বিক্রেতার কাছ থেকে খাজনা নেয়, এই নিয়ম এবারই প্রথম দেখলাম।’

ওই হাটের ইজারাদার স্বপন হালদার মুঠোফোনে জানান, পশুর হাটে কোনো অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে না। এই হাটের ডাক (ইজারা) অনেক বেশি। প্রশাসন টোল (খাজনা) আদায়ের যে নির্দেশনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী আদায় টোল আদায় করে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। এরপরেও টোল বেশি নেওয়া হচ্ছে না।’

খাজনার রসিদে টাকার পরিমান ঘর ফাঁকা হচ্ছে কেন- এব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমার লোকেরা ভুলবশত দুই-একটি রসিদে এমনটি করতে পারে।’

মহাদেবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন, পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় ঠেকাতে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে। গত শনিবার ও বুধবার মহাদেবপুর হাটে অতিরক্ত টোল আদায়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী দিনেও প্রতিটি হাটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, পশুর হাটগুলোতে যে কোনো প্রকার অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক ইউএনও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সার্বক্ষণিক তদারকি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ইজারাদাররা প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদাল করলে প্রয়োজনীয় ইজারা বাতিল করে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
স/শ