নওগাঁয় চার বছর পর মা’কে ফিরে পেলেন নোয়াখালীর ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
চার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মাকে ফিরে পেয়ে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল নওগাঁর সাপাহার উপজেলায়। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার দিঘীর হাট এলাকায় এই দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসের দিকে দিঘীর হাট বাজার এলাকায় অচেনা মস্তিস্ক বিকৃত এক বৃদ্ধার আগমন ঘটে। দীর্ঘ সাত-আট মাস ধরে ওই বৃদ্ধা বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘরের ছাউনির নিচে রাত কাটিয়ে দিনের বেলায় যেখানে সেখানে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তেন। আবার রাতের বেলায় তিনি বাজার এলাকায় এসে রাত যাপন করতেন। মাঝে মধ্যে বাজার এলাকার আরিফ ফটোস্ট্যাট দোকান মালিক মো: রমজান আলী ওই বৃদ্ধার খোঁজ-খবর নিতেন। বৃদ্ধা বেশী কথা না বলায় দীর্ঘ দিনের খোঁজ-খবরের সাথে সাথে রমজান আলী ওই বৃদ্ধার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে তার নাম, কোন সময়ে তার গ্রামের নামসহ তার ঠিকানা খোজার চেষ্টা করতেন। অবশেষে রবিবার বিকেলে তিনি তার পূর্ণ ঠিকানা উদ্ধার করেন এবং নোয়াখালীর লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায় মোবাইলে কথা বলে বৃদ্ধার দেওয়া ঠিকানা খুঁজে পান। থানার মাধ্যমে তিনি ওই বৃদ্ধার ছেলের সাথে কথা বলতে সক্ষম হন। সংবাদ পেয়ে বৃদ্ধার ছেলে তৎক্ষনাৎ নওগাঁর সাপাহারের উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
সোমবার সকালে তিনি সাপাহারে পৌঁছে দিঘীর হাট এলাকায় গিয়ে বৃদ্ধার সামনে দাঁড়ালে মা-ছেলের মধ্যে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত স্থানীয়রা হতবাক হয়ে যায় বৃদ্ধা ও তার ছেলের মায়া-মমতা দেখে। তারা একে অপরের সাথে দীর্ঘক্ষণ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
ঘটনা স্থলে গিয়ে পাগল বৃদ্ধার ছেলে সোহেল রানা (২৮) এর সথে কথা বলে জানা যায়, বিগত সাত বছর পূর্বে তার মার মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে। সেসময় তার মা তার নিজের সন্তান মারিয়ম (৬) নামের এক মেয়ে ও আব্দুল কাদের (৩) বছরের এক ছেলেকে সাথে নিয়ে বাড়ী হতে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে ছিলেন। খোঁজাখুঁজির প্রায় তিন বছর পরে ভারতের আসাম রাজ্য থেকে সোহেল রানা তার মাকে উদ্ধার করতে পারলেও বোন মরিয়ম ও ভাই কাদেরকে হারিয়ে ফেলে তারা আজও নিখোঁজ রয়েছে। ভারত থেকে উদ্ধারের মাত্র কয়েক মাস পর তার মা আমিনা বেগম আবারো বাড়ী থেকে সকলের অজান্তে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হন। এর পর ছেলে সোহেল রানা ও তার পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে মাকে আর ফিরে না পেয়ে তাকে খোঁজার হাল ছেড়ে দিয়ে বাড়ীতে বসে ছিলেন।
হঠাৎ দীর্ঘ চার বছর পরে নওগাঁ জেলার সাপাহার হতে তার মার বর্ণনাসহ মোবাইল ফোন পেয়ে কিছুক্ষনের জন্যও আর স্থির থাকতে পারেননি তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার দিঘীর হাট এলাকায়। আর এসে ঠিক খুঁজেও পেয়েছেন তার গর্ভধারিনী মাকে। সোহেল রানা তার মাকে খুঁজে পেয়ে ধন্য হয়েছেন। মাকে হারিয়ে যেতে দেবেন না বলে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন সোহেল রানা।
মাও তার ছেলেকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। সে কখন যাবে তার নিজ গন্তব্যে পাগল অবস্থায় নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় এলো-মেলোভাবে বলছিলেন বৃদ্ধা আমিনা বেগম। মস্তিস্ক বিকৃত বৃদ্ধা মহিলা লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার টামটা গ্রামের মো. শামসুল হক এর স্ত্রী।
ঔরসজাত দুই সন্তানকে হারিয়ে বর্তমানে এক ছেলে সোহেল রানা ও স্বামী শামসুল হক রয়েছে তার পরিবারে। সোমবার দুপুর দেড়টার সময় তারা দিঘীর হাট এলাকা থেকে রাজশাহীর বাসে উঠে নিজ গন্তব্যে রওয়া হন।
স/শা