নওগাঁয় আবাদি জমি থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন

কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ:
নওগাঁর সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের সালেবাজ এলাকায় আবাদি জমি থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে আশপাশের ফসলি জমি ও সড়ক ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কাছাকাছি থাকা কয়েকটি বসতঘরও হুমকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি রুস্তম আলী ও মামুনুল হক মামুন নামে দুই ব্যক্তি এর নেপথ্যে রয়েছে।

 
আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সালেবাজ এলাকার দাসকান্দি-হাঁপানিয়া সড়কের সঙ্গে লাগানো আবাদি জমিতে বোরিং করে ভূগর্ভস্থল থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পাইপের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে ফেলা হচ্ছে পাশের জমিতে। সেখান থেকে ট্রাক্টর এবং ছোট ট্রাকে করে বিক্রির জন্য বালু নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। চারপাশে রয়েছে পটল, ভুট্টা ও বেগুনের খেত। বালু উত্তোলনে স্থান থেকে ৫০-৬০ গজ দূরেই দাসকান্দি-হাঁপানিয়া সড়কের ওপর স্থাপিত একটি কালভার্ট রয়েছে। ৩০০-৪০০ গজ দূরেই রয়েছে কয়েকটি বসতঘর।

 
স্থানীয় ২০-২৫ বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে মামুন সালেবাজ এলাকায় রাস্তার পাশে তাঁর নিজের দুই বিঘা জমিতে বালু উত্তোলন শুরু করে। প্রায় ছয় মাস ধরে তাঁর যুক্ত হয়েছে রুস্তম আলী নামের আরেক ব্যক্তি। শ্যালোমেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থল থেকে বালু তোলার ফলে পাশের অন্য মানুষের ফসলি জমি ধসে পড়ে। পরে ওই কৃষকেরা বাধ্য হয়ে বালু উত্তোলনের জন্য তাঁদের জমি ইজারা দিয়েছেন। শ্যালোমেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থল থেকে বালু তোলায় আশপাশের আরও অনেক আবাদি জমিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও জমি ধসে গেছে। বালু বহনের জন্য ব্যাবহৃত ট্রাক চলাচলের কারণে এলাকার রাস্তাঘাট বেহাল হয়ে পড়েছে।

 
বালু উত্তোলন স্থানে কথা হয় শফিকুল ও খবির উদ্দিন নামের দুই শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এখানে মামুন ও রুস্তমের নির্দেশে এখানে বালু ও মাটি তোলা হয়। বালু ভর্তি প্রতি ট্রলি ১ হাজার ৩০০ টাকা ও মাটি ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

 
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, জমি থেকে বালু তোলার ফলে আশপাশের ফসলি জমি শেষ হয়ে যাচ্ছে। দুই বিঘা জমি দিয়ে শুরু করলেও এখন ১০-১২ বিঘা আবাদি জমি জুড়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। পাশের আরও জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু তোলা অব্যাহত থাকলে এক সময় মাঠের সব ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাবে।

 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সালেবাজ গ্রামের দুইজন গৃহবধু জানান, মেশিন দিয়ে বালু উঠানোর ফলে আশপাশের জমি যেভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। এভাবে বালু তোলা চলতে থাকলে তাঁদের বসতঘরও ভেঙ্গে পড়বে।

 
বালু উত্তোলনকারী মামুনুল হক মামুন বলেন, ‘নিজের জমিতে বালু ও মাটি উঠাই। অন্যের জমি জোর করে দখল করে তো বালু বা মাটি উঠাচ্ছি না।’

 
কীর্ত্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যেখানে বালু তোলা হচ্ছে সেটা আবাদি জমি। ওই স্থানে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য উপজেলা সমন্বয় সভায় একাধিকবার বিষয়টি উত্থাপন করেছি। এসিল্যান্ড একবার সেখানে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানাও করেছে। কিন্তু তারপরেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। স্থানীয় কৃষকদের সমস্যার কথা চিন্তা করে ওই স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

 
তিনি বলেন, বালু উত্তোলনকারী মামুন ও রোস্তম মাদক ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগে থানায় মামলাও রয়েছে।

 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, সালেবাজ এলাকায় কৃষি জমিতে বালু উঠানোর বিষয়ে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হয়। কিন্তু সেখানে আবারও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বিষয়টি তিনি জানেন না। কোনোভাবেই আবাদি জমিতে বালু উঠাতে দেওয়া যাবে না।

 
সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবারও সেখানে বালু উঠানো হচ্ছে এ বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স/শ