নওগাঁর তাল গাছের সাম্রাজ্যে তাল পিঠার মেলা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
আর এই তাল সাম্রাজ্যকে ঘিরে বসেছে তাল পিঠার মেলা।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা তালতলীতে (তালসড়ক) তিন দিনব্যাপী এই তালপিঠা উৎসবের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। এর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই আবহাওয়া ছিল বৈরী। কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আবার কখনও মুষলধারে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুরের পর থেকেই তাল সাম্রাজ্য ঘিরে বসা তাল পিঠামেলাকে কেন্দ্র করে নানা প্রান্ত থেকে আসা হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। দর্শনার্থীরা সারি সারি তালগাছের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ও পিঠার স্বাদ নিতে মেতে উঠেছেন। তিনদিন ব্যাপী এ পিঠা মেলায় ১০টির বেশি স্টলে তালের তৈরি নানান ধরনের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসে আছেন উদ্যোক্তারা।

এবার মেলায় এসব স্টলে তালের তৈরি ফুলঝুরি, জামাই পিঠা, খেজুর পিঠা, তাল জিলাপি, তাল কেক, তালক্ষীর, মুইঠা পিঠা, গড়গড়া, তাল রুটি, কান মুচুরি, ডাল বড়াসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ধরনের বিচিত্র সব পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি পিঠার দাম ১০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও বাড়ি থেকে বানিয়ে আনা পিঠার পাশাপাশি বিভিন্ন স্টলে পিঠা তৈরি করতেও দেখা গেছে।

পরিবার নিয়ে নওগাঁ সদর থেকে পিঠা উৎসব দেখতে আসা গোলাম রাব্বানী বলেন, এই সড়কের ছবি ফেসবুকে অনেক দেখেছি কিন্তু কখনো দেখা হয়নি। ইচ্ছে ছিল আসবো। এরই মধ্যে শুনলাম সেখানে তালপিঠা মেলা বসবে এজন্য আজকে পরিবার নিয়ে দেখতে আসলাম। তাল গাছের এমন সারি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। পাশাপাশি মেলাতে বিভিন্ন রকম তালের পিঠা দেখলাম ও খাইলাম।

মান্দা উপজেলা থেকে আসা সুলতানা জেসমিন বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে এই মেলা দেখতে এসেছি। এসে অনেক তালগাছ আর তাল দিয়ে বানানো অনেক রকম পিঠে দেখলাম যা আগে কখনো দেখিনি। বাড়ি গিয়ে আমিও তাল দিয়ে পিঠা বানাবো যেগুলো আগে কখনো খাওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে।

পিঠা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এই তালগাছগুলি আমি লাগিয়েছিলাম। আজকে সেই সব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটিকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। মানুষজন এই সড়ক দিয়ে যখন যায়, তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু প্রশান্তি পায়। আমি নিজেও এলাকায় এলে তালগাছগুলি দেখতে আসি। একটা অন্য রকম প্রশান্তি অনুভূত হয়।

মন্ত্রী আরও বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা-পুলির আয়োজন। আর এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই প্রতি বছরের মতো এবারো শুরু হয়েছে নিয়ামতপুরের হাজিনগর ইউনিয়নের তালতলিতে তাল পিঠার মেলা। সড়কটি পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে উপজেলা পরিষদ তাল পিঠা উৎসবের যে আয়োজন করেছে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে মানুষ একটা নির্মল বিনোদন পাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা অনেক ধরনের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এ প্রজন্ম।

অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমতিয়াজ মোরশেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ প্রমুখসহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।