নওগাঁয় ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি নিয়ে আড়ৎদার-পাইকার বিরোধ

নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁ পৌর মাছ বাজারের আড়তে ডিজিটাল মিটারে মাছ বেচাকেনা নিয়ে দুইপক্ষের বিরোধ শুরু হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আড়ৎদাররা ডিজিটাল মিটার চালু করতে চাইলেও পাইকরারা তা মানতে নারাজ।ইতোপূর্বে পাইকারি বাজারে একাধিকবার প্রশাসন গিয়ে ডিজিটাল মিটার চালু করার জন্য নির্দেশনা দেয়। সে মোতাবেক রোববার সকাল ৮টা থেকে আড়তদাররা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করে।
জানাগেছে- গত প্রায় ৫০ বছর থেকে নওগাঁ পৌর মাছ বাজারে মাছ বিক্রি হয়ে আসছে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ২২টি আড়তে বেচাকেনা হয়। জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকেও মাছ মাছ চাষীরা এ বাজারে মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। কাটার পাল্লায় ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে আড়ৎদার বিক্রি করে। এরপর পাইকাররা খুচরা বাজারে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজেদের মতো মাছ বিক্রি করে। তারা কাটার ওজনে মাছ কিনে ডিজিটালে মিটারে খুচরা বিক্রি করে। আড়তে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক আড়তদাররা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করে। কিন্তু পাইকাররা ডিজিটাল মিটারে মাছ কিনতে নারাজ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। একে অপরকে দোষারোপ শুরু করে। পাইকাররা মাছ কিনা বন্ধ রাখে।
আড়তদাররা মাছ বিক্রি করতে আসা চাষীদের কাছ থেকে শতকরা ৪টাকা এবং মাছবাহী গাড়ির জন্য ৫০ টাকা খাজনা নিয়ে থাকে।
নওগাঁ শহরের পলিটেকনিক কলেজপাড়া এলাকার মাছ চাষী সাগর বলেন- কয়েকটি পুকুরের আয়তন প্রায় ১০ বিঘা। প্রায় এই বাজারে মাছ বিক্রি করতে আসি। ডিজিটাল মিটার চালু হওয়াতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। ডিজিটাল হলে ঘাটতি যাবে না। ওজন মিটারে দেখা যায়। কিন্তু কাটার পল্লা হলে আমরা বুঝতে পারিনা। সামনের দিকে একটু হেলে যাওয়া মানে কয়েক কেজি বেশি চলে যাওয়া। ডিজিটাল হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। আগে কাটার ওজনে যেহেতু ৪২ কেজিতে মণ ছিল। ডিজিটাল মিটারে ৪৩ কেজিতে মণ হলেও আমাদের সমস্যা নাই।
পৌর মাছ বাজার পাইকার ফেরদৌস প্রামানিক বলেন- প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০ কেজির মতো মাছ কেনা হয়। স্থানীয় ভাবে বিক্রির পাশাপাশি ঢাকায় পাঠানে হয়। আগে কাটাতে ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে কেনা হয়। হঠাৎ করে আজ আড়তে ডিজিটালে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ওজনে ঠিক পাবো না। কিছু পর ওই মাছ আবার ওজন করা হলে ওজন কমে যাবে। এখন ক্যারেটে পানি সহ ওজন করা হলে আমাদের জন্য লোকসান হবে। । আর আগে কাটাতে মাছ কিনা হতো। যা বাঁশের ঝুঁড়িতে করে ওজন করা হতো। পানিও দ্রুত নেমে যেতো।
আরেক পাইকার আফাজ উদ্দিন বলেন- প্রতিদিন প্রায় ১০০ কেজির মতো মাছ কিনে স্থানীয় ভাবে মাছ বিক্রি করা হয়। আমরা আগে কাটার ওজনে মাছ কিনে ডিজিটাল মিটারে বিক্রি করতাম। কোন সমস্যা হতো না। এখন যেহেতু ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু হয়েছে। ৪২ কেজিতে মনের জায়গায় আরে এককেজি বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।
মামুন মৎস্য আড়তের স্বত্ত্বাধিকারি মোস্তফা সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুজ্জামান মামুন বলেন- দিনে গড়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা করা হয়। আর মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মতো। এই পৌর আড়তে প্রায় ৫০ টি বাজারের ব্যবসায়িরা মাছ কিনে থাকে। গত কয়েক দিন আগেও আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য আলোচনা করা হয়। পাইকরারা পরে সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের কাছ থেকে তারা মাছ কিনবে না। বরং বাহির থেকে যেসব ব্যবসায়িরা আসে তাদের উল্টো হুমকি দেয় মাছ না কিনার জন্য।
নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও আড়ৎদার সমিতির উপদেষ্টাশরিফুল ইসলাম বলেন- আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি বিক্রি শুরু করেছি। কিন্তু গুটিকয়েক পাইকারের কাছে আমরা জিম্মি। চাষীরা মাছ বিক্রি করতে আসলে তাদের কাছে চাঁদা দাবী করা হয়। তারা একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। পাইকাররা যদি ডিজিটালে বিক্রি করতে পারর আমরা কেন পারবো না। এসব সমস্যা সমাধান না হলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে।
পৌর মৎস্য ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি গৌতম হাওলাদার ভুট্টু বলেন- ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি করা নিয়ে কয়েকদিন আগে পাইকারদের সঙে আমাদের আলোচনা হয়।। অক্টোবরের ১ তারিখের মধ্যে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তা বাস্তবায়নে আমরা আজ থেকে কাজ শুরু করেছি। কিন্ত পাইকাররা তা মানতে নারাজ। এখানে ২২টি আড়তে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। পাইকাররা সিন্ডিকেট করছে। বাহির থেকে যেসব পাইকার মাছ কিনতে আসছে তাদেরও মাছ না কিনতে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে মাছ চাষীরা এখানে মাছ বিক্রি করতে আসবে না। সবার জন্যই সমস্যা হবে।
নওগাঁ পৌর মাছ বাজার পাইকার কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম তোতা বলেন- নিয়ম সবার জন্যই সমান। কোন সমস্য নাই। আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ কিনতেছি। আর এখানে কোন ধরনের সিন্ডিকেট নেই। বরং আড়ৎদার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম রবিন শীষ বলেন- আড়তদাররা ডিজিটাল মিটার চালু করার জন্য আমাকে অবগত করেছিল। তাদের বলা হয়েছিল জনগন যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করা হলে স্বচ্ছতা থাকে। যেহেতু ডিজিটাল মিটার ব্যবহার নিয়ে নিরুৎসাহিত এবং বিড়ম্বনা শুরু হয়েছে। তাই দুই পক্ষকে (আড়তদার ও পাইকার) নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান সহ মিটারটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।