নওগাঁয় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১৮ সদস্য গ্রেফতার: ট্রাক, চাল ও অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার

নওগাঁ প্রতিনিধি :
নওগাঁ জেলা পুলিশ দু’টি পৃথক ডাকাতির ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। সেই সাথে ডাকাতির মালামাল উদ্ধার করেছে। আজ শুক্রবার দুপুরে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক তাঁর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রদান করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২২ মার্চ রাতে গাইবান্ধা থেকে ৪০০ বস্তা আতপ চাল নিয়ে একটি ট্রাক চাপাইনবাবগঞ্জে যাচ্ছিলো। যাওয়ার পথে রাত দেড়টায় নওগাঁ শহরের বাইপাস সড়কের পাশে ইকরতারা নামকস্থানে সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ৮ জন ডাকাত একটি চাল বোঝাই ট্রাক আটকায়। ট্রাকের চালক ও হেলপারের হাত পা মুখ বেঁধে ফেলে রেখে ট্রাকসহ ওই ট্রাকের ৪০০ বস্তা আতপ চাল লুট করে নিয়ে যায়। ভোরে লোকজনের সহায়তায় হাত পায়ের বাঁধন খুলতে সক্ষম হন ট্রাকের চালক ও হেলপার। পরে তারা বিয়য়টি নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশকে জানায়।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হকের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান এবং নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান প্রয়োজনীয় ফোর্সসহ অভিযান শুরু করেন।
এরই এক পর্যায় বগুড়ার শেরপুর থানার রানির হাট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। ২৮ মার্চ সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রথমে দুই ক্রেতাকে আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি মতে সোহাগ হোসেনের বাড়ি থেকে ৯০ বস্তা  এবং বগুড়ার নিশিন্দারা হতে আরও ২০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। পর দিন ২৯ মার্চ কাহালু থানা এলাকা থেকে শাজির উদ্দিন মন্ডল ওরফে মিলনকে গ্রেফতার এবং তার নিকট থেকে আরও ১১১ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই অন্যতম ডাকাত জিয়াকে কাহালু থানা কাহালু থানা এলাকা থেকে এবং ৩০ মার্চ রাতে জয়পুরহাট ও নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা থেকে শাহজাহান ওরফে লালন, মেহেদী হাসান এবং ইউসুফ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান ও ইউসুফ আলী বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন।
অবশেষে আজ ৩১ মার্চ ভোররাতে বগুড়া সদরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মুল হোতা মাহফুজ আলম, রাজু পালোয়ান এবং রতন ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত রাজু পালোয়ানকে নিয়ে সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে চাল ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত শরীফ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার নিকট থেকে ১১১ বস্তা চাল বিক্রির  ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়। সেই সাথে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, হাসুয়া, দা, প্লাস ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়। এই ডাকাতির ঘটনায় মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের মধ্যে জিয়ার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ৭টি, আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ৪টি, মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ২টি, রতনের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ২টি এবং রাজু পালোয়নের বিরুদ্ধে খুন-ডাকাতিসহ বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।
অপরদিকে, গত ২২ মার্চ রাত অনুমান ১০টা ২০ মনিটে জেলার পোরশা উপজেলার সরাইগাছি-অড্ডা সড়কে তাইতর মোড় নামকস্থানে কতিপয় দুষ্কৃতকারী একটি মোটর সাইকলে আটকিয়ে আরোহী মিলন হোসেনের নিকট থেকে একটি স্যামসং মোবাইল ফোন ও নগদ ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ওই সময় একটি মাইক্রো  আসে। দুষ্কৃতকারীরা মাইক্রো যাত্রী রাফিয়া জান্নাতের নিকট থেকে ২২ হাজার টাকা মুল্যের স্বর্নের গহনা, অপর যাত্রী আমেনা খাতুনের নিকট থেকে নগদ ১৪ হাজার টাক ছিনিয়ে নেয়। মোছাঃ আমিনা খাতুনের ছেলে আমিনুল ইসলাম রাজু বাদী হয়ে পোরশা থানায় মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোঃ বাচ্চু মৃধা, বদিউজ্জামান তোতা, হাফিজুর রহমান ওরফে হাফিজুল,  মোঃ মোশারফ হোসেন, মোঃ সাদেকুল  ইসলাম এবং মোঃ শাহিন আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গংবাদ সম্মেলনে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) গাজিউর রহমান, নওগাঁ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান এবং নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসানসহ পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।