সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
দিল্লির বিখ্যাত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়-জেএনইউর শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মিছিলে হামলা চালিয়ে ছাত্রী ও নারী সাংবাদিকদের যৌন নিপীড়ন করেছে পুলিশ।
পুলিশের এমন দমন-পীড়নের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক ও প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার।
তার আশঙ্কা, জেএনইউকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। যাতে এখন আর বিস্মিত হওয়ারও কিছু নেই।
শনিবার জেএনইউর প্রথম উপাচার্য গোপালস্বামী পার্থসারথির জীবনীভিত্তিক একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে রোমিলা তার উদ্বেগের কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক যত্ন নিয়ে গড়া হয়েছিল জেএনইউকে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একে তুলনা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু ডিগ্রি দেয়া নয়, প্রশ্ন তুলতে শিখিয়ে জ্ঞানবৃদ্ধি করা। সেই ভাবনাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটাকেই ভেঙে ফেলা।’
ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেএনইউর সংস্কৃতির ওপর একের পর এক আঘাত আসছে বলে অভিযোগ উঠছে।
ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে শিক্ষার্থীদের ‘দেশদ্রোহী’ বলে গ্রেফতার করার ঘটনাও ঘটেছে।
যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত জেএনইউ অধ্যাপক অতুল জোহরির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
শুক্রবার তারা ভারতীয় পার্লামেন্ট অভিমুখে পদযাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আইএনএ মার্কেটের সামনে বিক্ষোভকারীদের আটকিয়ে লাঠি ও জলকামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিল্লি পুলিশ।
ওই সময় পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হন দুই নারী সাংবাদিক। এর প্রতিবাদে শনিবার আবারও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, বিদ্যাসাগর সিংহ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা শুক্রবার এক নারী সাংবাদিককে প্রথমে মারধর করেন। এর পর প্রকাশ্যেই ওই নারী সাংবাদিককে যৌন নিগ্রহ করেন বিদ্যাসাগর।
এদিকে অন্য এক নারী সাংবাদিককে মহিলা পুলিশ মারধরের পর জামাকাপড় টেনে-ছিঁড়ে ফেলে এবং তার ক্যামেরা কেড়ে নেয়।
এদিকে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ার সফরকালে রাজধানী দিল্লিতে পুলিশের এমন ভূমিকায় সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারত সরকার।
এ কারণে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ককে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন।
এর পর দিল্লি পুলিশ দফায় দফায় ক্ষমা চায়। সাংবাদিকদের ওপরে হামলা ও যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দুদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার আশ্বাস দেয়।
তবে এতে বিক্ষোভ থামেনি। শনিবার সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন বিকাল ৩টায় দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করে।
এদিকে ক্ষমা চেয়ে দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মধুর বর্মা বলেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে চিত্রসাংবাদিকদের গুলিয়ে ফেলায় ওই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।
তিনি সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচির পরিবর্তে তার সঙ্গে কফি খাওয়ার অনুরোধ জানান। তার এমন মন্তব্যে অসন্তুষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পরে পুলিশের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র দীপেন্দ্র পাঠক বলেন, ভিজিল্যান্স শাখার প্রধানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেখানো উচিত ছিল।
সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, পরিচয় দেয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাদের রেহাই দেয়নি।
সাংবাদিকদের বিক্ষোভকারী মনে করে মারধর করার বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য নিয়ে অনেকের প্রশ্ন তুলেছেন যে, এ কথার মাধ্যমে পুলিশ কি বলতে চাচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের অশালীন আচরণ করতে বাধা নেই।
যুগান্তর