ধামইরহাটে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ায় কৃষক পরিবারের মাঝে আনন্দ


ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ

নওগাঁর ধামইরহাটে ৪২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে কৃষকের মেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় কৃষক পরিবারের মাঝে আনন্দের বন্যা। গ্রামের মেয়ের সাফল্যে এলাকাবাসী গর্ববোধ করছে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফলের জন্য ওই বাড়ীতে ভীড় করছে। এদিকে এলাকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানই তার প্রধান লক্ষ্য জানিয়েছেন ওই গর্বিত গ্রামের মেয়েটি।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৪২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চার হাজার শিক্ষার্থীর চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। এতে ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে তাসনিম আরার নাম উত্তীর্ণের তালিকায় আসে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো গ্রামে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে। তাসনিমের বাবার নাম আতোয়ার হোসেন এবং মায়ের নাম মাসুদা বেগম। তার বাবার পেশা কৃষি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজ জমিতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সংসার চালান। তাদের পরিবারের দুই সন্তান। মেয়ে বড় এমবিবিএস পাশ করেছে। ছেলে আল মুহি দিনাজপুর হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ণ বিষয়ে অনার্স পাশ করেছে।

বর্তমানে সে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছোট সংসারে কৃষিই একমাত্র রোজগারের উৎস। বাবা মায়ের অসীম ধর্ষ, সাহম ও পরিশ্রমে আজ দুই সন্তান উচ্চ শিক্ষিত। মেয়ে তাসনিম আরা ছোট থেকে অত্যান্ত মেধাবী ছিল। সে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশে এক রোল ছিল। স্থানীয় ভেড়ম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী নিউ গর্ভঃ ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়।

২০০৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাশ করেন।

অনেক মেধাবী তাসনিম রংপুর মেডিকেলে অধ্যয়ণরত অবস্থায় ১৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মেডিসিন ও সার্জারী বিভাগের সে বেস্ট ইন্টার্ণ এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এমবিবিএস পাশ করার পর ২০১৭ সালে তাসনিমের বিয়ে হয় পার্শের গ্রামের ব্যবসায়ী ইসতিয়াক হাসান রামিমের সঙ্গে। তাদের ঘরে দেড় বছর বয়সী আফিফা ইবনাত নামে এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।

এব্যাপারে গ্রামের মেয়ে তাসনিম আরা জানান, ছোট বেলা থেকে মানুষের সেবা করা ছিল তার মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সে ডাক্তার হওয়ায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এলাকায় অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সে কঠোর পরিশ্রম করে এ পর্যায়ে এসেছে। তার কৃষক বাবা ও মায়ের কষ্টের ফসল আমি।

আমার মামা আমিরুল ইসলাম পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি আমার পড়াশুনা ও বিভিন্ন বিষয়ে সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নিয়েছেন। এছাড়া আমার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেড়ম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান স্যাওে অসীম উৎসাহ ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রসারিত সহযোগিতা প্রদান করেছেন। বিয়ের পর আমার স্বামী ইসতিয়াক হাসান রামিমের সহযোগিতা ও প্রেরণা আমাকে সাহসা ও উৎসাহ জুগিয়েছে।

সর্ব্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরও বলেন, আমার ডাক্তারীর পড়ার পেছনে রাষ্ট্র যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে তার প্রতিদান হিসেবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যেন সঠিক ব্যবহার করতে পারি। তিনি দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।

স/আর