ধর্ষণ করে মেয়ে-মায়ের মাথা ন্যাড়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে ধর্ষিতা ও তার মাকে ধরে এনে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় তুফান সরকারের স্ত্রী, স্ত্রীর বড় বোন ও শাশুড়িকেও পুলিশ খুঁজছে। ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের মামলায় বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকারকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় স্যোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। বলা হচ্ছে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও এই ঘটনা হার মানিয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ তুলে মা-মেয়েকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। আসামিরা হলো তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা খাতুন, আশার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগমসহ আরো ১০ জন। এর আগে শুক্রবার গভীর রাতে বগুড়া সদর থানা পুলিশ শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে তুফান সরকার, তার সহযোগী আলী আজম দিপু, আতিকুর রহমান ও রুপম হোসেন।

নির্যাতিতা বগুড়া শহরের বাদুড়তলা এলাকায় বসবাসকারী এক চা বিক্রেতার মেয়ে। সে শহরের জুবিলী ইনস্টিটিউশন থেকে এবার এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। প্রতিবেশী আলী আজম দিপু তাকে বলে, শ্রমিক লীগ নেতা তুফান এ কাজে সাহায্য করতে পারবে। পরে তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে মেয়েটিকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি।

গত ১৭ জুলাই তুফান স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে মেয়েটিকে বাসায় ডাকে এবং দিনভর আটকে রেখে কয়েক দফা শ্লীলতাহানি ঘটনায়। মেয়েটি রক্তক্ষরণ নিয়ে বাসায় যায় এবং তার মা ঘটনাটি জানতে পারেন। কিন্তু তুফান সরকার মুখ না খুলতে শাসিয়ে দেওয়ায় তারা বিচারপ্রার্থী হয়নি। এদিকে ধর্ষণের কথা জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন, তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং মা রুমী বেগম মেয়েটির বাড়িতে যায়। তারা ধর্ষণের বিচার করে দেওয়ার কথা বলে মেয়েটি ও তার মাকে রুমকির চকসূত্রাপুরের অফিসে নিয়ে আসে। তারা দুজনের বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসার মিথ্যা অপবাদ দেয়। এরপর তুফান সরকারের লোকজন দুজনকে লাঠিপেটা করে এবং একপর্যায়ে নাপিত ডাকে। প্রথমে মা-মেয়ের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয় এবং একপর্যায়ে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে দুজনকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। এরপর ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য শাসিয়ে দুজনকে রিকশায় তুলে দেওয়া হয়। ওই অবস্থায় তারা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে যায় এবং মা-মেয়ের বক্তব্য শুনে তাত্ক্ষণিক অভিযানে নামে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তুফান সরকারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার তিন সহযোগীকেও ধরা হয়।

গতকাল মেয়েটির মা ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন জানিয়ে পুলিশ কালের কণ্ঠকে বলেছে, তারা তুফানের স্ত্রী ও শাশুড়ি এবং পৌর কাউন্সিলর রুমকিকে খুঁজছে।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, মেয়েটির অবস্থা কিছুটা খারাপ। তবে তার মায়ের অবস্থা সংকটমুক্ত। দুজনের চিকিৎসা চলছে। এই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তরুণীটি বলে, ‘আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এরপর আমাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর ও অপমান করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। ’ এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্তদের কারো সঙ্গেই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

অন্য একটি সূত্র জানায়, স্বামী তুফান সরকারের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে মেয়েটির, এমন সন্দেহ থেকে তুফানের স্ত্রী মা-মেয়ের ওপর ওই নির্যাতন চালায়।

জানা যায়, তুফান সরকারের কক্ষ থেকে ২০১৫ সালে র্যাব এক হাজার ৭০০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে। এ সময় তুফানকে তিন সহযোগীসহ আটকও করা হয়।