দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের হক গ্রুপের একটি শোরুমে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করেন মো. নিজাম উদ্দিন। থাকেন কুনিপাড়ার একটি মেসে। সিটভাড়া এক হাজার ৫০০ টাকা, খাবার দুই হাজার ৫০০, অন্যান্য খরচসহ প্রতি মাসে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। ওভার টাইমসহ তিনি বেতন পান ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা।

বাড়িতে বাবা, মা ও দুই ভাই-বোনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাসে পাঠান তিন থেকে চার হাজার টাকা। কিন্তু চলতি মাসে মাত্র এক হাজার টাকা দিতে পেরেছেন। কম টাকা পাঠানোর কারণ হিসেবে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব কিছুর দাম বেশি, খরচও বেশি হচ্ছে। এরপর অসুস্থ ছিলাম, যার কারণে বেশি টাকা দিতে পারিনি। ’

পান্থপথ মোড়ের কারওয়ান বাজারের দিকে থেকে সামান্য এগোলেই হাতের ডান পাশে পাওয়া যাবে ফারদিন এন্টারপ্রাইজ, যেখানে বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা যায়। এই দোকানের কর্মচারী রানা আহমেদ জানান, গত মাসে বিকাশে প্রতিদিন দুই লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লেনদেন হতো, কিন্তু চলতি মাসে তা নেমে এসেছে এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজারে। নগদে লেনদেন হতো ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা, কিন্তু এখন লেনদেন হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার। রকেটে সবচেয়ে কম লেনদেন হয়, সারা মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা।

আর অন্যান্য কম্পানির মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন নেই বললেই চলে। এখন সেলের অবস্থা ভালো না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক ঢুকে গেছে। কেউ বুঝতে পারছে না যে সামনে কী হবে। এ জন্য টাকাটা নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছে। যার কাছে আছে সে কম খরচ করছে। আর যার কাছে টাকা নেই, সে তো হতাশ।

রামপুরা, তেজগাঁও, মেরুল বাড্ডা, যমুনা ফিউচার পার্কের পাশের অন্তত ১০টি দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের প্রত্যেকেই বলেছেন, লেনদেন গত মাসের চেয়ে এই মাসে প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। একই সঙ্গে প্রতি মাসের প্রথম ১৫ দিন বেশি লেনদেন হয়, পরের ১৫ দিন খুব বেশি লেনদেন হয় না।

এসব ব্যবসায়ী বলছেন, চাল, মাছ, মাংস, ডিমসহ সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে যারা আগে বেশি টাকা খরচ করতেন, তাঁরা সেই পরিমাণ কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।

বাড্ডার ১০ নম্বর রোডের আফরিন ডিজিটাল ফটো স্টুডিওর মালিক নাম প্রকাশ না করে জানান, বিকাশে তার প্রতিদিন অন্তত এক লাখ টাকা লেনদেন হতো, কিন্তু এখন তা ২০ থেকে ৩০ হাজারে নেমে এসেছে। নগদে দুই থেকে চার হাজার টাকা এবং রকেটেও প্রায় একই পরিমাণ লেনদেন হতো। কিন্তু আগস্ট মাসের শুরু থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন লেনদেন হয়নি; যা হয়েছে তা এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম, আপনি কী করবেন? আগে নিজে খেয়েদেয়ে বাঁচার পর বাড়িতে টাকা পাঠাবেন। টাকা পকেটে আসতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, তো পাঠাবেন কিভাবে? প্রতিটি জিনিস যদি বাড়তি দামে কেনা লাগে; মরিচ আড়তে ১০০ টাকা কেজি, এলাকায় বিক্রি করছে ৩০০ টাকা কেজি। এই বাড়তি টাকাটা আসবে কোথা থেকে?’

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩টি মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্ল্যাটফরমের অধীনে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। চলতি বছরের জুনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছিল ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাইয়ে পাঁচ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কমে লেনদেন হয় ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের প্রায় ৫.৪৩ শতাংশ কম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, যা তাদের ম্যানেজ করতে হয়। ফলে প্রকৃত আয় কমে গেলে টাকা পাঠানোর সুযোগটাও কমে যায়। আগে তারা যেভাবে টাকা পাঠাত, এখন সেভাবে টাকা পাঠাতে পারছে না। কারণ তাদের খরচ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আরেকটা হতে পারে—ঢাকা শহরে বাসাভাড়া বেড়ে গেছে, পাশাপাশি প্রায় সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই বাড়তি খরচ কুলাতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে অনেকে। ’

 

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ