দৈনিক ইত্তেফাকের ৬৭তম বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে রাজশাহীতে সুধী সমাবেশ 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রাচীনতম দৈনিক ইত্তেফাক এর ৬৭তম বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে রাজশাহীতে সূধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নগরীর অলকার মোড়স্থ মাস্টার শেফ রেস্তোরায় আয়েজিত অনুষ্ঠানে কেকও কাটা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাদের এবং বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া যাঁদের ত্যাগ, পরামর্শ ও ভালোবাসায় দৈনিক ইত্তেফাক কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে এসেছে, তাদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।

ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামানের সঞ্চালনায় সুধী-সমাবেশে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মোকবুল হোসেন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি রাজশাহীর সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও রাসিকের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী, দৈনিক সোনাদেশ এর সম্পাদক ও প্রকাশক আকবারুল হাসান মিল্লাত ও রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শ্যামল বক্তব্য রাখেন। এছাড়া রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বিএফইউজের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মামুন অর রশিদ, দৈনিক উত্তরা প্রতিদিনের সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাবলু, দৈনিক রাজশাহী সংবাদের সম্পাদক আহসান হাবিব অপু, রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুলফিকার, ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ ও নাগরিক সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সেকেন্দার আলী, ক্যাব রাজশাহীর সভাপতি কাজী গিয়াস, সময় টিভির ব্যুরো প্রধান সাইফুর রহমান রকি, এনটিভির ব্যুরো প্রধান শ.ম সাজু, ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিন, সেলিম জাহাঙ্গীর, মো. সালাহ উদ্দিন, সমকাল ও ডিবিসি নিউজের ব্যুরো প্রধান সৌরভ হাবিব, রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মর্তুজা নূর, রাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক রায়হান বাপ্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, ‘১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর পশ্চিম বাংলার যে ইতিহাস, ঐতিহ্য, যে স্বাধিকার আন্দোলন সবকিছু মিলে মুসলিম বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য ইত্তেফাকের ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৬৬ সালে এই পত্রিকার অনেকবার বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের জন্ম বা স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে পত্রিকাটি। ইত্তেফাক আজও তার পাঠক সমাজকে ধরে রেখেছে। ইত্তেফাক যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তা বজায় রেখে আগামী দিনে মানুষের প্রত্যাশা, প্রাপ্তি তুলে ধরবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতিটা দেশে সংবাদ মাধ্যমের ওপর একটা অলিখিত বিধি এসেছে। সাংবাদিক ও পত্রিকার ওপর একটি বিধি এসে গেছে। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া যেমন আইয়ুব খানকে উপেক্ষা করতে পেরেছিলেন, আপনারাও দেশের কথা, জনগণের কথা আরো বেশি বেশি বলবেন সেই প্রত্যাশা রাখছি। এই ক্রান্তিলগ্নে ইত্তেফাক তার ভূমিকা পালন করবে।’

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মোকবুল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের যে পথচলা, সে পথ চলার দড়ি রচনা করেছিলেন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। ইত্তিফাকের যাত্রা আমাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সংবাদপত্র এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। যদি একদিন সংবাদপত্র না পড়ি তাহলে আমরা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। বর্তমান সময়ে দেখা যায় অনেক সংবাদপত্র জনগণের বিপক্ষেও কাজ করছে। এখন অনেক গণমাধ্যমকর্মীই সাম্রাজ্যবাদে জড়িত, তাদের নিয়ন্ত্রন করছে কিছু সাম্রাজ্যবাদী মানুষজন। তবে ইত্তেফাকের মতো পত্রিকাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় সেই শুরু থেকে এখনো সঠিক পথরেখা ধরেই কাজ করছে।’

রাসিকের সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পরেই ইত্তেফাকের সৃষ্টি। চুয়ান্ন’র নির্বাচনে, উনসত্তরের আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল দৈনিক ইত্তেফাক। তবে বর্তমানে পূর্বের সময়ের মতো সাহসিকতা নিয়ে সত্য ঘটনাগুলো পত্রিকায় খুব কম তুলে ধরা হচ্ছে। এখনকার সাংবাদিকেরা মনে করে চাকরি করছি, কিন্তু এই চাকরি করার মনোভাব থেকে দূরে সরে আসতে হবে। আজকে গণতন্ত্রকে সাধারণ পর্যায়ে না নিয়ে আসতে পারলে আগামী প্রজম্মের জন্য তা আরো কঠিন হবে।’

দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘৬৭ বছরে পদার্পণ করা পত্রিকাটি এদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। এটা বিজয়ের মাস, এ মাসেই এ পত্রিকার জন্ম। আমারও জন্ম এ মাসেই। আমি এ পত্রিকার চেয়ে বয়সে এক বছরের ছোট। আমরা যখন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতাম, তখন এ পত্রিকা পড়তাম। জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল ইত্তেফাক তারপরই পূর্ববাংলা। যদিও তখন পূর্ব পাকিস্তানের খবর প্রথম পত্রিকা হিসেবে আজাদী প্রকাশ করতো, তারপরই ইত্তেফাক।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করবো, এ পত্রিকা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ৬৭ বছরে পদার্পণ করেছে, সেটি হাজার বছর টিকে থাকুক।’

দৈনিক সোনার দেশের সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রকাশক আকবারুল হাসান মিল্লাত বলেন, ‘একটা বিষয় আমরা বলতে পারি, যদি ইত্তেফাক পত্রিকা সেসময় সংবাদ না ছাপতো তাহলে স্বাধীনতা সংগ্রাম হতো না। ভূমিকা ছিল সেখানেই। ইত্তেফাক সেখানে অগ্রদূত ছিল। কারণ তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ভাষা আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সাপোর্ট দিয়েছেন মানিক মিয়া, ফলে স্বাধীনতা আন্দোলন ত্বরান্বিত হয়েছিল। মানিক মিয়ার মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধুর লেখা ইত্তেফাকে ছাপা হয়েছিল। আত্মিক সম্পর্কের বিষয়গুলো সেখানে এসেছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘বর্তমানে মানুষের কাছে হাতের মুঠোয় যে মোবাইলটি আছে সেটি দেখতেই আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। এখন পত্রিকায় খবর পড়ার চাইতে আমরা অনলাইনেই বেশিরভাগর খবর পড়ে থাকি। এখন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির সমালোচনা করতে চাইলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনা করা হয়। আমরা সকলে সেদিকের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি। ডাবলু আরো বলেন, ‘রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা যেটি আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্যদল নয় সাধারণ মানুষকে নাড়া দেয় সে বিষয়গুলো যেন পত্রিকায় বেশি করে উঠে আসে।’

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ইত্তেফাকে কর্মরত সংবাদকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আজকে আমরা অহরহ পিছিয়ে পড়ছি, এটা কেমন যেন এক অদৃশ্যমান বিষয়। আজ নদী ভরাট করা হচ্ছে যা অকল্পনীয়। বর্তমান মানুষজন কোনো কিছু ঘটার পরে সে বিষয়ে ভাবে, কিন্তু এমন বিষয়গুলো যাতে না ঘটে সে জন্য আগে থেকে সচেতন নয়।

বর্তমানে যে সমস্ত পত্রিকা বস্তুনিষ্ঠ লেখনি প্রকাশ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইত্তেফাক। এসময় তিনি ইত্তেফাকের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।’

স/অ