ঘটনাস্থল কাঁথির মারিশদা থানার ধাউড়িয়াবাড় গ্রাম। শহর থেকে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার এই সালিশি সভার অন্যতম উদ্যোক্তা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা বৈশাখী প্রধানের স্বামী মাখনলাল প্রধান। কেন সালিশি? মাখনলালের জবাব, ‘‘পুলিশে গেলেই যে অভিযুক্ত শাস্তি পাবে এমন নয়। বরং মেয়েগুলির পরিবারের তুলনায় অভিযুক্ত অনেক বেশি ক্ষমতাশালী। ফলে সে ছাড় পেয়ে যেত।’’ সালিশির পক্ষে সওয়াল করেছেন কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের বিকাশ বেজও।  সালিশিতে অভিযুক্তকে দু’লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। টাকা পেলে দুই বোনকে এক লক্ষ করে দেওয়া হবে। ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসায়। বাকি ৫ হাজার টাকা, ‘গ্রামের সম্মান নষ্ট’ হওয়ার জন্য পাবে গ্রাম কমিটি। জরিমানা দিতে হবে নিগৃহীতাদের বাবাকেও। তাঁর ‘অপরাধ’— মেয়েদের আগলে রাখতে না পারা।

মেয়ে দু’টির বাবা অসুস্থ। ন’মাস আগে মৃত্যু হয়েছে মায়েরও। নাবালিকার দাবি, পেশায় পুরোহিত অভিযুক্ত বৃদ্ধ গত দু’বছরে তাদের পরিবারের অভিভাবক হয়ে ওঠে। সম্প্রতি সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এক পড়শি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তখনই জানা যায় অন্তঃসত্ত্বা সে। মেয়েটির অভিযোগ, ওই বৃদ্ধ তাকে ও দিদিকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। সঙ্গে হুমকিও দিয়েছে। ভয়ে এতদিন চুপ ছিল তারা। এ দিন সালিশিতে সে জানিয়েছে ভ্রূণ নষ্ট করতে চায়।

সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ধাউড়িয়া বাড় প্রাথমিক স্কুলের মাঠে সালিশি চলছে। মাখনলাল সভা পরিচালনা করছেন। কিন্তু টাকার দায়িত্ব নেবে কে? সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার ফের বসবে সালিশি।

নিগৃহীতাদের বাবার গলায় অসহায়তা, ‘‘আমাকে গ্রামের লোককে নিয়েই বাঁচতে হবে।’’ অভিযোগ দায়ের না হওয়ায়, পদক্ষেপ করতে পারছে না পুলিশও। যদিও এসডিপিও পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘নির্যাতিতার পরিবারের কাছে অভিযোগ চাওয়া হয়েছে। পেলেই মামলা হবে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলও বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সূত্র: আনন্দবাজার