দেশ স্বাধীনের পরও বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিল অজ্ঞাত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:


স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের কোথায়, কী অবস্থায় ছিলেন— বাংলাদেশের কাছে সেই তথ্য ছিল না। যে কারণে বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কবে দেশে ফিরবেন, এই প্রশ্ন ছিল সবার মাঝে। তখন তাঁর মুক্তির জন্য দেশের মানুষ রোজা, উপবাস এবং বিশেষ দোয়ার আয়োজনও করেছিল।



১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনা স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তোফায়েল আহমেদ এ তথ্য জানান। এছাড়া লেখক,  গবেষক ও বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান জানিয়েছেন, বিজয় দিবসের সময় বঙ্গবন্ধুর খবর পাওয়া না গেলেও ২২ ডিসেম্বর থেকে তাঁর সম্পর্কে তথ্য আসতে থাকে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময়  ২৮৮ দিন তাকে পাকিস্তানের কারাগারে থাকতে হয়। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকেরা বঙ্গবন্ধুকে মিয়াওয়ালি কেন্দ্রীয় কারাগারে আটকে রেখেছিল। দেশ স্বাধীনের পর  মুক্ত হয়ে তিনি ৮ জানুয়ারি প্রথমে লন্ডন এবং পরে দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন।

ওই সময়কার পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরদিন ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এখনও সংগ্রাম শেষ হয়নি। কেননা, মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখনও শত্রুর কারাগারে।’  তিনি পাকিস্তানি শাসকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তারা শেষ মুহূর্তে অন্তত শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। বঙ্গবন্ধু মুক্ত হবেন।’ এছাড়া বঙ্গবন্ধু এখন কোথায় ও কেমন আছেন, তা কেউ জানে না বলে ঢাকায় ফেরার পর ২৩ ডিসেম্বর তাজউদ্দীন মন্তব্য করেছিলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর খবর তাদের কাছে ছিল না উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘স্বাধীন হওয়ার পর তিনি এবং প্রয়াত নেতা আব্দুর রাজ্জাক ১৮ ডিসেম্বর কোলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফেরেন। তার চার দিনের মাথায় ফেরেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদসহ মুজিবনগর সরকারের নেতারা। ওইদিন বিমানবন্দরে লাখো মানুষের বিজয় মিছিল হলেও বিজয়ের আনন্দ ছাপিয়ে কেবলই মনে পড়ছিল নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা। যার সঙ্গেই দেখা হয়, সবার একই প্রশ্ন— ‘বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কবে ফিরবেন?’ বঙ্গবন্ধুবিহীন বিজয় অপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ‘বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য সর্বস্তরের মুক্তিকামী বাঙালি ঘরে ঘরে রোজা, উপবাস এবং বিশেষ দোয়া মোনাজাত করেছিলেন।’’

দেশ স্বাধীন না হলে ডিসেম্বরেই বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হতো বলে মন্তব্য করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল। আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি সেদিন, যেদিন জাতির পিতা তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন।’

বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি ও গবেষক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘‘বিজয়ের পরপরই খবর পাওয়া না গেলেও ২২ ডিসেম্বরের পর কিছু কিছু খবর পাওয়া যাচ্ছিল। ওই সময় তাঁকে মিয়ানওয়ালি  কারাগার থেকে সরিয়ে একটি রেস্ট হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ভুট্টো তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার (ভুট্টোর) উদ্দেশ্য ছিল কোনোরকমে কনফেডারেশন রাখা যায় কিনা? তবে, ভুট্টোর এ ধরনের প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু কোনও জবাব দেননি। এ বিষয়ে কোনও সন্মতি জানাননি। তিনি দেশে ফিরে গিয়ে বিষয়টি জেনে ও  বুঝে সবার সঙ্গে কথা না বলে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন না বলে জবাব দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মুক্ত কিনা সেটা জানতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে সরাসরি কোনও জবাব না দিলেও ভুট্টো আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে ছিলেন যে, তিনি (বঙ্গবন্ধু) এখন মুক্ত।  তবে ভুট্টো এও বলেছিলেন, ‘আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক প্রশাসক। জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত জানাতে পারছি না।’  ৩ জানুয়ারি করাচিতে পাবলিক মিটিং করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া কথা বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্ত মুজিব ৮ জানুয়ারি করাচি ত্যাগ করেন। ভুট্টো নিজেই বিমান বন্দরে তাকে বিদায় জানান।’’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ তরফ থেকে তাঁর কোনও তথ্য পাওয়া না গেলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর বিষয়ে খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি কোন কারাগারে আছেন,এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে বিচার হওয়ার খবর বিভিন্ন সময়ে এসেছে।’

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন