মঙ্গলবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

দেশে ভোজ্যতেল ও চর্বির ব্যবহার বৃদ্ধির নেপথ্যে

Paris
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯ ২:৪১ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দেশে ভোজ্যতেল-চর্বির ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গত দুই বছরের হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে মাথাপিছু ভোজ্যতেল ব্যবহারের পরিমাণ এক কিলোগ্রাম বেড়েছে। এ বৃদ্ধি উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮-১৯ সালের পরিসংখ্যানে লক্ষ করা যায়, দেশে ভোজ্যতেল-চর্বির ব্যবহার মাথাপিছু গড়ে ১৮ কেজির কাছাকাছি পৌঁছেছে; যা ভারতের তুলনায় সামান্য কম।

২০১৮ সালের হিসাবে দেখা যায়, সে বছর বাংলাদেশের মানুষ প্রায় ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেল-চর্বি ব্যবহার করেছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভোজ্যতেলের পরিমাণ পর্যাপ্ত না হওয়ায় মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্ষিক ১৭ লাখ জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুষম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশের ভোজ্যতেল ও চর্বির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রধান কারণ। নিচে প্রদত্ত ছক থেকে গত বছরে তেল ও চর্বি ব্যবহারের বিস্তারিত চিত্র পাওয়া যাবে।

ছক – ১ : ভোজ্যতেল-চর্বির ব্যবহার : ২০১৩-২০১৮ হাজার টনে

পণ্য ২০১৮ ২০১৭ ২০১৬ ২০১৫ ২০১৪ ২০১৩

সয়াবিন তেল ১,০৩০ ১,০০৮ ৮৪৯ ৬৯৯ ৫৯৩ ৪৬৬

পাম তেল ১,৭৪০ ১,৪৫৫ ১,৩৯৪ ১,৩০৩ ১,২৬৬ ১,২২০

সরিষা/ক্যানোলা তেল ১৪২ ১৫৪ ১৭৪ ১৪০ ১০০ ১১৩

মাখন/ঘি ৩৪ ৩২ ৩২ ৩১ ২৯ ২৯

সূর্যমুখী বীজের তেল ১৪ ৪ ১.৬ ১.৪ ১.২ ০.৭

পাম কার্নেল তেল ১৯ ১৮ ১৭ ১৯ ১৫ ৮.৩

নারকেল তেল ২৮ ২৩ ১৮ ২৬ ৩২ ২৮

অন্যান্য তেল ৪ ১.৫ ১.৪ ২.৫ ১.৮ ১.৯

মোট ৩,০১০ ২,৬৯৫.৫ ২,৪৮৭ ২,২২১.৯ ২,০৩৮ ১,৮৬৬.৯

পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার +১১.৬৭ +৮.৩৮ +১১.৯৩ +৯.০২ +৯.১৬

সূত্র : অয়েল ওয়ার্ল্ড- ২০১৮

ভোজ্যতেল ও চর্বির ব্যবহার তথা আমদানির উল্লিখিত প্রবৃদ্ধি এবং তার পাশাপাশি গত এক দশকে স্থানীয় উৎপাদনে স্থবিরতার প্রধান কারণ তেলবীজ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জমির অভাব।

অন্যান্য শস্য উৎপাদনের কারণে তেলবীজের জমির পরিমাণ কমেছে, ফলে তেলবীজ উৎপাদনও কমেছে। তাই ভোজ্যতেল ও চর্বি আমদানির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। ফলে ভোজ্যতেল ও চর্বি আমদানির পরিমাণ ঊর্ধ্বগামী এবং আগামী বছরগুলোতেও এ ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়।

দেশে গড়ে বছরে ১,২৫,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টন পর্যন্ত সয়াবিন উৎপাদিত হয়। কিন্তু এ উৎপাদনের পুরোটাই পশুখাদ্য তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। এ কারণে দেশের ভোজ্যতেল উৎপাদনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সয়াবিনের কোনো অবদান নেই।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধানের কুঁড়া থেকে ভোজ্যতেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টন।

দেশের বার্ষিক চাহিদা মেটানোর জন্য ২০১৮ সালে ২৯ লাখ টনের কিছু বেশি ভোজ্যতেল ও চর্বি আমদানি হয়। এর মধ্যে আমদানিকৃত সয়াবিন ও সরিষা-ক্যানোলা বীজ থেকে নিষ্কাশিত তেলও রয়েছে। আমদানিকৃত তেল ও চর্বির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সয়াবিন তেল, পাম তেল এবং সরিষা-ক্যানোলা তেল। এসব তেল আমদানিকৃত ভোজ্যতেল ও চর্বির ৯৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সিঅ্যান্ডএফ পর্যায়ে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য বছরে প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয় এবং তেলবীজ আমদানির জন্য বছরে ব্যয় হয় গড়ে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ব্যবহৃত ভোজ্যতেল ও চর্বির বার্ষিক পাইকারি মূল্য প্রায় ২০ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা (২৫০ কোটি মার্কিন ডলার), খুচরা বাজারে যা প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা (২৭৫ কোটি মার্কিন ডলার)। যেহেতু স্থানীয় চাহিদার ৯২ থেকে ৯৩ শতাংশ আমদানিকৃত ভোজ্যতেল দিয়ে মেটানো হয়, সে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল ও চর্বির দামের তারতম্যের জন্য স্থানীয় বাজারে পণ্যটির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ওঠানামা করে।

উল্লেখ্য, দেশে ব্যবহৃত মোট ভোজ্যতেল-চর্বির মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ টন ভোজ্যতেল অর্থাৎ প্রায় ১৭ শতাংশ প্যাকেট-বোতলজাত অবস্থায় বিক্রি করা হয় এবং অবশিষ্ট তেল বিক্রি হয় খোলা অবস্থায়। প্যাকেট-বোতলে বিক্রীত ভোজ্যতেলগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সয়াবিন তেল, অপরদিকে খোলা অবস্থায় বিক্রীত ভোজ্যতেলগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পরিশোধিত পাম তেল। দীর্ঘদিন থেকে দেশের ৯টি বড় প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল পরিশোধনের কাজ করছে।

আশা করা যায়, চলতি ২০১৯ সালে ভোজ্যতেলের বার্ষিক আমদানি ৩০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোজ্যতেল ও চর্বির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক লীগ টেব্ল (WELT) ২০১৯-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৩তম অর্থনৈতিক শক্তি।

আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ভোজ্যতেল ও চর্বির ব্যবহার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই আগামী বছরগুলোয় ভোজ্যতেল ও চর্বির ব্যবহার এবং পণ্যটির আমদানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল।

ভোজ্যতেল ও চর্বির ব্যবহার এবং আমদানি বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ পণ্যটির আমদানি ৩০ লাখ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ লাখ টনে দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়।

সর্বশেষ - লাইফ স্টাইল