দেশে বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যক্তির ওপর জঙ্গি হামলার আশঙ্কা!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সশস্ত্র জঙ্গিরা আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠছে। ৩টি জঙ্গি সংগঠনের প্রায় শতাধিক সদস্য দেশে বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যক্তির ওপর জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছে।

র‌্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে এ রকম উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে। পুরাতন ও নবীনদের সংগঠিত করে এই তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এ জন্য উত্তরের জেলাগুলোতে ঘাঁটি গেড়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের ইউনিট।

জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক ও সামরিক কমান্ডার আব্দুর রহমান বিশ্বাস ওরফে ফুয়াদসহ ৫ সক্রিয় সদস্যকে সোমবার আটক করে রংপুর র‌্যাব-১৩।

এরা হলেন- কুড়িগ্রাম চর সাজাই মণ্ডলপাড়া গ্রামের মাওলানা মো. আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুর রহমান বিশ্বাস ওরফে ফুয়াদ ওরফে নিয়াজ, রংপুরের তারাগঞ্জ এলাকার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মরহুম ঈমান উদ্দীনের ছেলে লোকমান আলী ওরফে কোরবান, একই এলাকার মৃত মতিয়ার মণ্ডলের ছেলে মিজানুর রহমান, দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানার ডোমা বাগজা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে ও প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যারেজ ইনচার্জ আখিনুর ইসলাম এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রামের রসুলগঞ্জ গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মো. মাহমুদ হাসান রুমান (৩২)।

তিনি আরও জানান, জঙ্গিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আড়ালে নিজেদের সংগঠিত করছে। শুধু তাই নয়, জঙ্গিরা এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থাপনা তাদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করে আসছে। আটকদের মধ্যে আখিনুর ইসলাম রংপুর নগরীর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সনিক গ্রুপের একজন কর্মচারী। সে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাড়ির গ্যারেজ ইনচার্জের আড়ালে ওই গ্যারেজ জঙ্গি তৎপরতার কাজে ব্যবহার করত। সেখানে তাদের জঙ্গি তৎপরতার কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলগুলো লুকিয়ে রাখা ও বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের গোপন বৈঠকের কাজে ব্যবহার করে আসছিল। রংপুর অঞ্চলে জঙ্গিদের বড় ধরনের হামলার আগেই এদেরকে আটক করা হলো।

তারা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। জনমনে আতঙ্ক যেন না ছড়ায় সে জন্য র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বিস্তারিত জানাতে চাননি।

র‌্যাব অধিনায়ক আরও জানান, জঙ্গিরা উত্তরের জেলাগুলোতে সবচেয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের গ্রামগুলোকে সংগঠনের কাজে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের সবার তথ্য এখন র‌্যাব মনিটরিং করছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ ওরফে নিয়াজের নির্দেশেই রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ তথ্য পাওয়ার পর তাদের খোঁজে নামে র‌্যাবের গোয়েন্দারা। অবশেষে র‌্যাব জানতে পারে, রংপুর শহরের কাছে সদর উপজেলার মমিনপুর এলাকায় অবস্থান করছেন জেএমবি সদস্য নিয়াজ। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবাই জেএমবিতে সক্রিয় থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাই তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এর আগেও গত বছরে দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে অভিযান চালিয়ে জেএমবি, আল্লারদল ও আনছারুল্লাহ বাংলাটিমের ২৮ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব।

গত বছরের শেষ সময়ে নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২২ নভেম্বর রাতে দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালি থানাধীন সিকদারহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে শীর্ষ জেএমবি নেতা আব্দুর রশিদকে (৪৮) আটক করা হয়।

আব্দুর রশিদ একই জেলার কোতোয়ালি থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। এ সময় তার কাছ থেকে মোবাইলে সংরক্ষিত জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও উগ্র জঙ্গিবাদী ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, আব্দুর রশিদ জঙ্গিসংক্রান্ত মামলায় সাত বছর কারাভোগ শেষে বেরিয়ে পুনরায় একই সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছিল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জঙ্গিরা প্রায় ৭-৮ বছর ধরে গোপনে জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল বলে স্বীকার করেছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, জিহাদি তৎপরতার বইপত্র ও জঙ্গি হামলার রণকৌশলের দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

দেশের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে এই জঙ্গি সংগঠনগুলো বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা নিয়ে গোপনে সক্রিয় হয়ে উঠছে।

আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো হলো- জেএমবি, আল্লারদল ও আনছারুল্লাহ বাংলাটিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত অক্টোবর-নভেম্বর দুই মাসের ব্যবধানে চারটি নাশকতা পরিকল্পনা করার সময় ৮ জন জেএমবি সদস্যকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এর মধ্যে গত ৯ নভেম্বর দিনাজপুরের রাজবাটী এলাকা থেকে নাশকতার পরিকল্পনা করার সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকসহ ৩ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ।

এর আগে গত ১৪ অক্টোবর বালুবাড়ী এলাকা থেকে ২ জেএমবির সদস্যকে আটক করা হয়। এছাড়াও গত ৮ নভেম্বর আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকসহ ২ জেএমবিকে আটক করে র‌্যাব।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম জানান, জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তারা দেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পা নিয়ে কাজ করছে। পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের হাতে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। জঙ্গিদের এই অপতৎপরতা রোধে জেলা পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।

তিনি জানান, জঙ্গি তৎপরতা রোধে ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। জেলায় জঙ্গিবাদের বিস্তার নির্মূল করতে পুলিশ সচেষ্ট।

রংপুর বিভাগে জঙ্গি তৎপরতার সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে লালমনিরহাট জেলা। এ জেলায় র‌্যাব-১৩ সদস্যরা গত তিন মাসে লালমনিরহাট সদর, কালিগঞ্জ ও পাটগ্রাম থেকে ৩৩ জন জঙ্গিকে আটক করেছে। সূত্র: যুগান্তর