দেশে বছরে ক্যান্সারে মারা যায় সোয়া লাখ মানুষ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়; যার মধ্যে মারা যায় ৯১ হাজার ৩০০ জন। ক্যান্সার সম্পর্কিত অনলাইন ডাটাবেজ গ্লোবোক্যানের এ তথ্যের ব্যাপারে দেশের চিকিৎসকেরা বলছেন, চিকিৎসার স্বল্পতাই এই অবস্থার জন্য দায়ী। এ সমস্যা দূর করতে তাদের পরামর্শ, ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত সরকারি বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।

আজ ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ২০০৮ সালে প্রথম এ দিবস পালন শুরু করে প্রথম ইন্টার-ন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনেস্ট ক্যান্সার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে– ‘আই অ্যাম অ্যান্ড আই উইল’। এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত কাজ করবে ইউআইসিসি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ৯ কোটি ৬ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ মোট আক্রান্তদের ৩০-৫০ ভাগের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এদিকে, ২০১০ সালে ১ দশমিক এক ছয় ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার ক্যান্সারের পেছনে খরচ হয়েছে।

গ্লোবোক্যানের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে এক কোটি ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৯শ’ ৫৭ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৭ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে মারা গেছে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৭ জন, যা মোট মৃত্যু সংখ্যার ১৮ দশমিক চার ভাগ, কোলোরেক্টাম ক্যান্সারে মারা গেছে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭শ’ ৯২ জন, যা মোট মৃত্যুর ৯ দশমিক ২ ভাগ, স্টোমাকের ক্যান্সারে মারা গেছে ৭ লাখ ৮২ হাজার ৬শ’ ৮৫ জন, যা মোট মৃত্যুর আট দশমিক দুই ভাগ, লিভার ক্যান্সারে মারা গেছে ৭ লাখ ৮১ হাজার  ৬শ’ ৩১  জন, যা মোট মৃত্যুর আট দশমিক দুই ভাগ, ব্রেস্ট  ক্যান্সারে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬শ’ ৭৯ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৬ দশমিক ছয় ভাগ, ইসোফেগাস (খাদ্যনালী) ক্যান্সারে মারা গেছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৫শ’ ৮৫ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫ দশমিক তিন ভাগ, প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২শ’ ৪২ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৪ দশমিক ৫ ভাগ এবং অন্য ক্যান্সারে ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৪শ ১৭ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৩৫ দশমিক আট ভাগ।

এ ব্যাপারে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন বলেন, ‘দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের নিজস্ব কোনও ডাটা নেই। এদেশে ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ খুবই কম। চিকিৎসকের কাছে যায় অনেক দেরিতে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে খুব সহজে চিকিৎসা নিতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ক্যান্সারের চিকিৎসার যেসব পদ্ধতি ফলো করে, আমরা এখন সেগুলো ফলো করছি। কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুবই কম।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ক্যান্সার রোগীদের সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য অবশ্যই এ রোগের চিকিৎসায় বাজেট বাড়াতে হবে; সবখান থেকে রোগীদের যেন কেমোথেরাপির ওষুধ দেওয়া যায়। রেডিয়েশন সেন্টার বাড়াতে হবে। মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে গেলে একজন রোগীর ভর্তি হওয়ার জন্যই দুই থেকে চার মাস অপেক্ষা করতে হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও একই অবস্থা। যদি ডিসেন্ট্রালাইজড করা যায়, প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে রোগীরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিতে পারবে। না হলে ঢাকায় এসে দুই বা তিন মাস ধরে রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না।’

বাংলাদেশে ক্যান্সার সচেতনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী চিকিৎসক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘চিকিৎসা নয়, সেবা –এই মূলমন্ত্র ধারণ করে জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের মোট ক্যান্সার রোগীর তালিকা তৈরির জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের অপারেশন প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঢাকার বাইরে ৮টি বিভাগে ৮টি আঞ্চলিক ক্যান্সার কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। দেশের সব মেডিক্যাল কলেজে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি সুবিধা যুক্ত করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতি প্রদান ও এর শর্ত হিসাবে গরিব রোগীদের জন্য শতকরা অন্তত ১০ ভাগ বেড ও অন্য সুবিধা বিনামূল্যে প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয় নাগালের মধ্যে আনতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও সীমিত চিকিৎসা সেবা যুক্ত করতে হবে, ক্যান্সার রোগী ও একজন স্বজনের জন্য গণপরিবহনে বিনাভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া, সমাজভিত্তিক ক্যান্সার সেবা চালু করতে হবে এবং স্বাস্থ্য বিমা চালু করতে হবে।’