দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে পুঠিয়ার খেজুর গুড়

তারেক মাহমুদ :

শীত এলেই রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় শুরু হয় খেজুর গুড় ও রস সংগ্রহের উৎসব। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। উপজেলার অন্যতম অর্থকারী মাধ্যম এখন খেজুরের গুড়। বর্তমান শীত মৌসুমকে ঘিরে এখানকার ঝলমলিয়া বাজারের প্রতি হাটে ৯০ থেকে ১০০ টন খেজুর গুড় কেনা-বেচা হয়। আর সপ্তাহে দুই হাটে প্রায় ২ কোটি টাকার গুড় বিক্রি হয়।

 

  • এখানকার গুড় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন। এরপর বিদেশেও রপ্তানি করা হয় এখানকার খেজুর গুড় জানান,ব্যাবসায়ীরা। আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে যায় এখানকার খেজুর গুড়। তাই শীত মৌসুমে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরীর কাজে।

অনেক কৃষকরা বলছেন, সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। ঝলমলিয়া হাটের খেজুরের গুড়ের উৎপাদনকে বাণিজ্যিক ও ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পুঠিয়ার খেজুরের গুড়ের উৎপাদন এবং এর সুনাম এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভুমিকা পালন করছে। সেই সাথে দারিদ্র ঘুচাতে ব্যাপক সহায়তা করছে।

  • পুঠিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিসার মঞ্জুর রহমানের তথ্য মতে তিনি সিল্কসিটিনিউজকে জানান, এ উপজেলার ৩০০০ মালিক এবং খেজুর গাছি কৃষি পরিবার রয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই কম বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৮৫ হেক্টর জমিতে ৮৫ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে । এ আর এই খেজুর গাছ গুলো বেশির ভাগ খেজুর বাগান,সড়কপথ, রেললাইনের ধার, পতিত জমি, জমির আইল ও বাড়ির আঙিনায় গাছ গুলো রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন সিল্কসিটিনিউজকে জানান, একজন ব্যক্তি প্রতিদিন দিন ৫০ থেকে ৫৫ টি খেজুর গাছের রস আহরণ করতে পারে। এ রকম ভাবে ৩ হাজার কৃষক রয়েছে যারা শীত মৌসুমেই খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাছেন। এ অঞ্চলে যে সব ব্যাক্তি খেজুর গাছ লাগায় তাদের গাছি বলা হয়। মৌসুম ভিত্তিক এ পরিবারগুলো খেজুর গাছের ওপর নির্ভশীল। একজন গাছি এক মৌসুমে অর্থাৎ ১২০ দিনে ১টি গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ কেজি গুড় পেয়ে থাকেন।

খেজুর গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না কিংবা এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচও করতে হয় না। ফলে অন্যে ফসলের মত কীটনাশক সার প্রয়োগ করতে হয় না । ঝোপ-জঙ্গলে কোনো যত্ন ছাড়াই নির্বিঘ্নে বড় হয়ে ওঠে খেজুর গাছ। শুধু শীতের মৌসুম এলেই নিয়মিত গাছ পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই রস দিয়ে তৈরী করা হয় সুস্বাদু গুড় আর সেই সুস্বাদু গুড় বিক্রি হয় প্রতি হাটে।

  • পুঠিয়া উপজেলার গোপালহাটি গ্রামের কৃষক মেরাজুল ইসলাম সিল্কসিটিনিউজকে জানান, তার প্রায় দেড় ৫০ টি  খেজুর গাছ রয়েছে। এই গাছ গুলো লাগানোর জন্য তিনি একজন গাছি নিয়োগ করেছেন। সে নিয়মিত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করছেন। তিনি সপ্তায় দু’দিন ঝলমলিয়া হাটে ব্যবসায়ীদের কাছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করে প্রায় ১৪ শো থেকে ১৬০০ শো টাকা আয় করছেন এবং অন্যে ব্যাবসার পাশাপাশি ভালো ভাবেই তার সংসার চলছে।

 

ওই এলাকার আরেক কৃষক আইনাল বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পুঠিয়ার উপজেলা গুড়ের  বেশ খ্যাতি রয়েছে ।

পুঠিয়ার ঝলমলিয়া হাটির গুড় বিক্রেতা সাদেক সিল্কিসিটিনিউজকে বলেন, পুঠিয়া একটি কৃষি প্রধান এলাকা। এখানে বিভিন্ন ধরনের ফসলের মধ্যে খেজুর গাছ একটি মুল্যবান সম্পদ। তাদের মতে, অত্র অঞ্চলের রাস্তার ধারে থেকে শুরু তার ভিটাতে ৩০ টি খেজুর গাছ রয়েছে।

  • তিনি আরো বলেন, এই খেজুর গাছের গুড় থেকে এ অঞ্চলের মানুষ প্রতি শীত মৌসুমে তাদের আয়ের একটি অংশ হিসেবে বেছে নেন। বর্তমানে এ অঞ্চলের গুড় রাজধানী ঢাকাসহ নারায়নগঞ্জ, ভৈরব, পটুয়াখালি এবং বরিশালসহ দেশের বাইরে অমেরিকা, ইউরোপ, কানাডসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মঞ্জুর রহমান সিল্কসিটিনিউজকে আরো বলেন, শুধু সরকারিভাবেই নয়, আমরা কৃষকদের মাঝে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া আখের পাতা ও ধানের খড় সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি, যেন গুড় তৈরিতে সহজ হয়। তিনি বলেন, পুঠিয়ার মানুষ খেজুর গাছ থেকে প্রতি শীত মৌসুমেই শীতের চার মাস খেজুর গুড় উৎপন্ন করে থাকে। আর কৃষকরা যদি নিজ নিজ পতিত জমিতে খেজুর গাছ লাগান তাহলে গুড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানিতে ব্যপক ভাবে অর্থ উপার্জনে সহায়ক হবে।

স/আর