দেশের আইনে এমএলএম ব্যবসার সুযোগ এখনো কেন আছে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এমএলএম ব্যবসার নামে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার ক্ষেত্রে ‘ডেসটিনি’ ও ‘যুবক’ একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। বহুস্তর বিপনন বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেবার ক্ষেত্রে ‘ডেসটিনি’ এবং ‘যুবকের’ নামের সাথে অনেকেই পরিচিত।

কিন্তু এই দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বাংলাদেশে আরো অনেকে এমএলএম ব্যবসার নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছিল।

বৃহস্পতিবার ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ১২ বছর এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশীদকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত।

‘ডেসটিনি’ এবং ‘যুবকের’ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার আগ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয়নি।

কিন্তু এরপর থেকে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে এবং সরকার ২০১৩ সালে একটি এমএলএম নিয়ন্ত্রণ আইন। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে।

যদিও এই আইন করার পরে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় এমএলএম ব্যবসা করার জন্য কাউকে লাইসেন্স দেয়নি, তারপরেও চাইলে যে কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আইনে কী আছে?

এই আইনে বলা হয়েছে লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যক্তি এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স পেতে হলে একটি কোম্পানি গঠন করতে হবে।

কোন ধরণের পণ্যের ক্ষেত্রে এমএলএম ব্যবসা করতে পারবে সেটিও উল্লেখ করা আছে আইনে। আট ধরণের পণ্যের ক্ষেত্রে এমএলএম ব্যবসা করা যাবে। এগুলো হচ্ছে

. গৃহস্থালি পণ্য

. ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য

. হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য

. প্রসাধন ও টয়লেট্রিজ পণ্য

. হারবাল পণ্য

. টেলিযোগাযোগ সেবা বা এর ব্যবহারযোগ্য পণ্য

. প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পণ্য ও সেবা

. কৃষিজ ও কৃষিজাত পণ্য

বাংলাদেশে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনাকারীরা পিরামিডের মতো বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এর মূল বিষয় হচ্ছে , একজন ব্যক্তি দুইজন ক্রেতা খুঁজে বের করবেন।

সে দুইজন আরো দুইজন করে ক্রেতা খুঁজে বের করবেন। এভাবে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

এভাবে চলতে থাকলে এ পর্যায়ে এসে মানুষ প্রতারিত হবে। কারণ ক্রেতা খোঁজার এ প্রক্রিয়া এক পর্যায়ে এসে থমকে যাবে।

২০১৩ সালের আইনে এমএলএম ব্যবসায় পিরামিড সদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিপননযোগ্য হবে এমন কোন পণ্য বা সেবা বিপনন করা যাবে না।

এই আইনে বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ লাখ টাকার অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে।

এই আইন হবার পরে চারটি কোম্পানিকে এমএলএম ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এই লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়।

কিন্তু ২০১৫ সালের পর তাদের লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি। ফলে বাংলাদেশে এখন বৈধ কোন এমএলএম কোম্পানি নেই।

২০১৩ সালে আইন প্রণয়ন করার পর সেটি কার্যকর করার জন্য কিছু বিধি তৈরি করা হয়। সেসব বিধিতে কিছু ত্রুটি থাকায় সেগুলো সংশোধনে উদ্যাগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রনালয়।

কিন্তু সে কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। ফলে নতুন কাউকে লাইসেন্স দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রনালয়।

তবুও এমএলএম-এর নামে প্রতারণা থেমে নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুরু হয়েছে ই-কর্মাসের নামে নানা প্রতারণা। ই-ভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জ মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

তাহলে আইনের দরকার কী?

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এমএলএম ব্যবসা সম্পর্কিত এই আইনটি বাতিল করা দরকার। কারণ, এ ধরণের ব্যবসা নিষিদ্ধ করা উচিত। ব্যবসা নিষিদ্ধ করলে এ ধরণের আইনেরও প্রয়োজন হবে না।

“আমরা মনে করে এমএলএম ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া উচিত। কেউ যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করতে চায়, তাহলে তারা বাংলাদেশে ব্যাংকের আওতায় কাজ করবে,” বলেন মি. খান।

তিনি বলেন, “এখানে এমএলএম মানে ফ্রড, সোজা কথা”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক নাসরিন আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলেন, মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসা নিয়ে বিতর্ক আছে বিশ্বজুড়ে। এই ব্যবসা যেভাবে করা উচিত বাংলাদেশে সেটি করা হয়নি।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে মানুষের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। তাদের সেই চাহিদা কাজে লাগিয়ে এসব দেশে এমএলএম-এর নামে প্রতারণা করা হয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক নাসরিন আক্তার।

অধ্যাপক নাসরিন আক্তার বলেন, আইন থাকা যেমন জরুরী, তেমনি আইনে প্রয়োগটাও জরুরী।