দেশি গরুতে ঠাসা রাজশাহীর হাটগুলো, দাম একটু বেশি হলেও খুশি ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর সিটি বাইপাশ হাটজুড়ে এখন প্রতিদিনি গরু-মহিষে ঠাসা হয়ে উঠছে। যেন ধাপ ফেলারও জায়গা নেই গোটা হাটে। মানুষ আর গরু ভীড়ে একাকার হাটটি জমে উঠেছে গত এক সপ্তাহ আগ থেকেই।

 

  • অন্যান্য সময় সপ্তাহে দুদিন এই হাট বসলেও এখন কোরবানি উপলক্ষে প্রতিদিনই গরু আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও আসছে গরু। তবে এবার গতবারের চেয়ে অনেকটায় কম আসছে ভারতীয় গরু। তাতে কি? এবার যে, দেশি জাতের গরুতেই হাট ভরে যাচ্ছে প্রতিদিন।

rajshahi-photo-07-09-16-2-copy
শুধু রাজশাহীর এ হাটই নয়, জেলার গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি, পুঠিয়ার বানেশ্বর, দুর্গাপুরের দুর্গাপুর সদর, পবার কাটাখালি, বাগমারার তাহেরপুর, প্রতিবেশী জেলা নওগাঁর চৌবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের খাশির হাটসহ সব হাটেই এবার প্রচুর পরিমাণে দেশি জাতের গরুতে ভরে যাচ্ছে। ফলে ভারতীয় গরুর প্রতি তেমন চাহিদাও নাই ক্রেতাদের। যদিও ভারতীয় গরুর চেয়ে দেশি জাতের গরুর দাম একটু হলেও বেশি। কিন্তু তাতেও ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই যেন খুশি।
ক্রেতা, বিক্রেতা বা খামারিদের দাবি, ভারতীয় গরু এখন আর আমদানি না হলেও কোরাবানিতে কোনো সমস্যা হবে না। দেশেই প্রচুর পরিমাণে দেশি জাতের গরু উৎপাদন হয়েছে এবার। এ গরুর বাজার না পেলে সামনে কোরবানিতে খামারিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।

rajshahi-photo-07-09-16-4-copy

সরেজমিন রাজশাহীর সিটি বাইপাশ হাটে গিয়ে দেখা যায়, এ  হাটে অন্তত ২৫ হাজার গরু ও মহিষের আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক থেকে দেড় হাজর ছিল ভারতীয় গরু-মহিষ। বাকি সবই হলো দেশি জাতের গরু-মহিষ। রাজশাহী অঞ্চলের খামারিরা বাড়িতেই পালন করেছেন এসব গরু। কোরবানি উপলক্ষে এখন দাম একটু বেশি পাওয়ার আশায় সে গরুগুলো হাটে এনেছেন বিক্রি করতে। গত কয়েকদিনের তুলনায় বেচা-বিক্রিও জমে উঠেছে বেশ।

  • হাটে গরু কিনতে আশা নাটোরের কানাইখালি এলাকার রেফাত আলী বলেন, ‘দুটি গরু কিনতে এসেছি। বাজার ঘুরে দেশি গরুর পরিমাণই বেশি চোখে পড়ছে। গরুগুলোর দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি। তা পরেও দেশি জাতের গরুই কিনেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশি জাতের গরুর মাংসের আলাদাম স্বাদ আছে। যেটি ভারতীয় জাতের গরুতে নাই। তাই দাম একটু বেশি হলেও আমাদের দেশে পালন করা গরুই বেশি কিনছে মানুষ।’
ভারত থেকে গরু আমদানী কারক রাজশাহী নগরের গরু ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, ‘এবার নদীতে প্রচুর পানি। তাই গরু আনতে ভয় লাগছে। কিছু কিছু গরু সাঁতরে আনা হচ্ছে। তবে তারপরেও অনেক ঝুঁকি থাকছে। আবার গরুগুলো এপার তীরে উঠার পরে নদী পার হওয়ার যে ধকল, সেটি সামলে উঠতেও সময় লাগছে ওদের। ফলে ভারতীয় গরু আমদানী এবার অনেক কমে গেছে। তারপরেও কিছু পরিমাণে গরু ভারত থেকে আসছে।
দেশি জাতের গরুর পালনকারী খামারি দুর্গাপুরের উজান খলসি গ্রামের আব্দুস সালামের সঙ্গে কথা হয় সিটি বাইপাশ হাটে। তিনি জানান, ‘গতবার মাঝারি আকারের যে গরুর দাম ছিল ৭০-৭৫ হাজার টাকা, এবার সেখানে বেড়ে হয়েছে ৮০-৮৫ হাজার টাকা। আবার ছোট আকারের গরু যেখানে ছিল ৩০-৪০ হাজার টাকা, এবার সেখানে হয়েছে ৩৫-৪৫ হাজার টাকা।

 

অন্যদিকে বড় আকারের গরু গতবার যেখানে ছিল ৯০ থেকে এক লাখ টাকা দাম, এবার সেখানে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরু পালন করতে গিয়ে শ্রমিক খরচ, খাবার কেনার খরচসহ আনুসঙ্গি খরচ বেড়েছে। আবার হাটে গরুর আনার আগে সুল্ক দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এসব কারণে গরুর দাম বেড়েছে। তারপরেও দেশি জাতের গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা দাম না পেলে সামনে বছর কোরবানি উপলক্ষে খামারিরা গরু পালনে আগ্রহী হবেন না।

rajshahi-photo-09-09-16-15-copy

এ কারণে এখন ভারত থেকে গরু বেশি আমদানি না করলেও চলবে। ঈদের আগ মুহূর্তে ভারতীয় গরু আমদানি বেড়ে গেলে তখন আবার দেশি গরুর দাম পড়ে যেতে পারে। যাতে করে খামারিদের লোকসানের মুখেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিটি বাইপাশ হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘এ হাটে এখন দেশি জাতের গরুই বেশি আমদানি হচ্ছে। ভারতীয় গরুর পরিমাণ খুবই কম। হাটে ২০ হাজার গরু আমদানি হলে এক হাজার আসছে ভারতীয় গরু। তারপরেও দেশি গরুর মতোই দাম। তাই ভরাতীয় গরুর চাহিদাও তেমন নাই। ফলে আমদানির পরিমাণ আরো কমছে।’

স/আর