দুর্বৃত্তদের জন্য শেখ হাসিনার নতুন বার্তা…

৩১ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনে আমার লেখার শিরোনাম ছিল, ‘খুঁজে বের করা দরকার সেই বেঈমানদের যারা কর্মীবান্ধব শেখ হাসিনাকে একা করে দিচ্ছে!’ এই লেখাটা প্রকাশিত হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। শেখ হাসিনার দুর্দিনের অনেক কর্মী ফোন করেছেন। দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন আমার সাথে। কেউ কেউ কেঁদেও ফেলেছেন কথা বলার একপর্যায়ে। অনেকের স্বার্থে ঘা লেগেছে। তারা ভয় দেখানোর চেষ্টাও করেছেন।

আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টাতে আমি ছাত্রলীগ করতাম। ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম; এই পরিচয়টা একই সাথে আমার গর্ব এবং অহংকারের। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সাথে আমার গভীর প্রেম। ভালোবাসি বলেই হয়তো প্রত্যাশার পারদটা আকাশছোঁয়া।

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দেখে হতাশ হয়েছিলাম। অন্তত দেড়শো আসনে পরিবর্তন আশা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে লাউ সেই কদুই রয়ে গেলো। মন্ত্রিপরিষদ গঠনেও কোন ইতিবাচক চমক ছিল না। চূড়ান্ত ধাক্কাটা খেয়েছিলাম আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে। দলের পোড় খাওয়া নেতারা সব কোণঠাসা। দল এবং সরকারে সুবিধাবাদীদের বাড়বাড়ন্ত।

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই দলটা তাজউদ্দিন আহমেদের, এই দলটা জিল্লুর রহমানের। এই দলটা সৈয়দ আশরাফের। সাহেদ-পাপিয়া কখনোই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে প্রতিনিধিত্ব করে না। খুব অবাক হয়ে দেখি হাইব্রিড কাউয়া তত্ত্বের জনকেরাই সবচেয়ে বড় হাইব্রিড কাউয়া তোষণকারী। বিগত উপকমিটিগুলোর দিকে তাকালেই এটা আরও স্পষ্ট হবে। সাবেক ছাত্রদল নেতা, শিবির কর্মী, বাসার কাজের লোক, অফিসের পিওন কেউ বাদ পড়েনি উপকমিটি থেকে। অথচ যাদের ছাত্রলীগের সুদীর্ঘ ইতিহাস ছিল, যারা ভালোবেসে সংগঠনটা করতে চেয়েছিলো তাদের অধিকাংশকেই রাখা হয়নি উপকমিটিগুলোতে।

কেন্দ্র থেকে বারবার সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আজ কাল পরশু করে করে সময় বয়ে যাচ্ছে। মাইম্যানের তালিকা করতে যেয়ে শেষপর্যন্ত বঞ্চিত হবে দলের ত্যাগী এবং পরীক্ষিতরাই। আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো প্রেসরিলিজ পেতে শুরু করবো। সেখানে বাসার ড্রাইভার এবং বাসায় বাজার করে দেওয়া লোকজন জায়গা পাবে। আর এদের জায়গা করে দিতে বলি দেওয়া হবে দলের কোন দুর্দিনের কর্মীকেই। ঐ কর্মীর চোখের জলের হিসেব কোথাও লেখা হবে না।

গতকাল মাঝরাত পর্যন্ত সমমনা কয়েকজনের সাথে লম্বা আড্ডা দিচ্ছিলাম। রাগ, ক্ষোভ, মন খারাপের পাশাপাশি একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম ; সব কটি উপনির্বাচন এমনকি অতি সম্প্রতি ব্যক্তিগত শাখায়ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ত্যাগী এবং পরীক্ষিতদের বেছে নিয়েছেন। এটা অবশ্যই মাফিয়া ডনদের জন্য একটা কঠিন বার্তা।

দলের পরীক্ষিত এবং ত্যাগীদের খুঁজে বের করে মূল্যায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। করোনার কারণে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমকে। আর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আরেক পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ খোরশেদ আলম সুজনকে। এর কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। হাইব্রিডদের কনুইয়ের গুতোয় হারিয়ে যাওয়া অসুস্থ জয়নাল হাজারীকে গণভবনে ডেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও বানিয়েছেন।

লোভী দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক পরিবারগুলোর জন্যও একটা পরিষ্কার বার্তা দিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা পাবনার ঈশ্বরদীর মনোনয়ন ঘোষণার মাধ্যমে। প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর আসনে মনোননয়ন দেওয়া হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার পরীক্ষিত নেতা নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে। নুরুজ্জামান বিশ্বাস তিনবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। অত্যন্ত সৎ এবং সজ্জন ব্যক্তি তিনি।

আমি খুউব আশাবাদী মানুষ। একটা নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখি। বিশ্বাস করি সেই ভোরটা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আসবে। অনেক ভাঙন, ক্ষরণ আর যন্ত্রণার পরই হয়তো দেখা মিলবে সেই কাঙ্ক্ষিত সূর্যের। দেরী হোক; যায়নি সময়। এই দেশ আর দেশের মানুষকে নিয়ে সবচেয়ে বড় স্বপ্নবাজের নাম ‘শেখ হাসিনা’। বঙ্গবন্ধু’র চোখ দিয়েই শেখ হাসিনা দেশটাকে দেখেন। বুকের গভীরে দেশের মাটি আর মানুষের জন্য গভীর মমতা ধারণ করেন।

চেয়ারে বসে সবদিকে একই সাথে নজর রাখা যায় না। কিছু বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত মানুষ ‘তৃতীয় নয়ন’ হিসেবে কাজ করে। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য উনার অধিকাংশ ‘তৃতীয় নয়ন’ এর চোখ লোভে ঢাকা। তবে আশার কথা হচ্ছে অবশেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা উনার নিজের মানুষদের চিনতে এবং মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন।

একটা প্রবাদ আমাদের এখানে বেশ প্রচলিত। প্রবাদটা হলো, ‘ঝিকে মেরে বউকে শেখানো।’ শেখ হাসিনা অনেকের মুখেই ঝামা ঘসে দিয়েছেন। অনেকের বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে। দীর্ঘ এক যুগ ধরে একটা দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার এবারের মিশন সম্ভবত সেই দুষ্টচক্র গুঁড়িয়ে দেওয়ারই মিশন! দুর্বৃত্তদের জন্য শেখ হাসিনার যে নতুন বার্তা তাতে দলের ত্যাগীরা আশাবাদী হতেই পারেন। সব অভিমান ভুলে আবার এক ছাতার নিচে একত্রিত হওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে শেখ হাসিনার পাশে পাশে থাকার। নেত্রীর শুদ্ধতার জাগরণে ফিরে আসুক তারা, যারা গেয়েছিলো শেকল ভাঙার গান।

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন