দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার: সরকারের জিরো টলারেন্সই কাম্য

বর্তমান সময়ে দেশে সংঘটিত দুর্নীতির স্বরূপ বুঝতে হলে গতকালের যুগান্তরের প্রথম পাতায় মুদ্রিত তিনটি প্রতিবেদন পাঠই যথেষ্ট। প্রথম প্রতিবেদনটিতে করোনা রোধে রেলওয়ের সুরক্ষাপণ্য ক্রয়ে পুকুর চুরির খবর রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ৭৫০ টাকার আইআর থার্মোমিটার কিনেছে ১২ হাজার ৩০০ টাকায়, কেএন-৯৫ মাস্কের বাজারদর ১২০ থেকে ২০০ টাকা হলেও তা কেনা হয়েছে ৭২৭ টাকায়, ৫-৬ টাকার প্লাস্টিকের গ্লাভস কেনা হয়েছে ৩২ টাকায়।

 

দ্বিতীয় প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাভারের বিশেষায়িত ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের নির্মাণকাজে দুর্নীতির খবর। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ হাসপাতাল নির্মাণে ব্যাংক গ্যারান্টি, পে-অর্ডার, প্রত্যয়নপত্র থেকে শুরু করে ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর, সিলমোহর সবই জাল। জালিয়াতির মাধ্যমে কাজ পেয়ে নির্মাণ শেষ না করেই শতভাগ বিল তুলে চম্পট দিয়েছেন ঠিকাদার।

তৃতীয় প্রতিবেদনে টাকা পাচার সংক্রান্ত দুর্নীতির খবর উঠে এসেছে। ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে, পরে সেই ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আবার বিশেষ সুবিধার আওতায় ১০ বছরের জন্য ওই খেলাপি ঋণই নবায়ন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এক খাতের ঋণ অন্য খাতে নেয়াসহ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বের করা অর্থও নবায়ন হয়েছে।

বলা বাহুল্য, দুর্নীতির এই চিত্র সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্নীতির খণ্ডাংশ মাত্র। দেখা যাচ্ছে, দেশে একদিকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলেছে, অন্যদিকে দুর্নীতির ছোঁয়া লেগেছে বলতে গেলে সর্বত্রই। এমনকি এই করোনাকালেও দেশে দুর্নীতি না কমে বরং বেড়েছে। বস্তুত বর্তমান সময়ে দুটি বড় সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে সরকারকে।

একটি করোনা, অন্যটি দুর্নীতি। দুর্নীতি সরকারের বড় বড় অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কী? দেশে দুর্নীতি দমনে একটি কমিশন কাজ করছে। প্রশ্ন হল, এই কমিশনের যে সক্ষমতা, তা দিয়ে কি ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব?

আমরা মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান যথেষ্ট শক্ত না হলে দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা দূরে থাক, এর মাত্রা কমিয়েও আনা সম্ভব হবে না। সরকারকে যথার্থই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের বলয়ে থেকে যারা দুর্নীতি করছেন, তাদেরও ছাড় দেয়া চলবে না। দুর্নীতির সঙ্গে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনার একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতিবাজরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই দুর্মর হয়ে উঠেছে।

সরকারের শীর্ষপর্যায়ের উচিত হবে দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতিপ্রবণদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা। তা না হলে অবস্থার কোনো ইতরবিশেষ হবে না।

 

সূত্রঃ যুগান্তর