দুর্গাপুরে স্ত্রীসহ শ্বাশুড়ী ও শ্যালককে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে এক গৃহবধুকে মায়ের সামনে পিটিয়ে আহত করেছে এক স্বামী। এতে প্রতিবাদ করতে গেলে গৃহবধুর মা ও ভাইকেও মারধোর ও নির্যাতন করে সে। এগিয়ে আসে শ্বাশুড়ী। শ্বাশুড়ীর প্ররোচনায় বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সেই গৃহবধু। পরে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জানা যায়, রাজশাহীর দুর্গাপুর এলাকার ১ নম্বর নওয়াপাড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের মৃত সামা সাত্তারের ছেলে আবুল কালামের সাথে ৭ বছর আগে বিয়ে হয় গোপালপুর গ্রামের শহীদের মেয়ে শাহিদার। বিয়ের পর থেকে তাদের সংসারে বিবাদ লেগেই ছিল। শাহিদাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে নির্যাতন করতো স্বামী আবুল কালাম। এতে দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ ছিল শাহিদা।

গত তিনদিন ধরে টানা নির্যাতন করে আসছিল আবুল কালাম। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অসুস্থ শাহিদাকে দেখতে  ও বাসায় নিযে যাওয়ার জন্য শ্বশুর বাড়িতে যান তার মা মিনা বেগম ও ভাই মিজানুর রহমান। কিন্তু মা ও ভাইয়ের উপস্থিতিতেই মারধোর করতে থাকেন স্বামী আবুল কালাম। এ ঘটনা দেখে শাহিদার ভাই মিজানুর রহমান প্রতিবাদ জানালে আবুল কালাম,তার মা তফিরুন্নেসা ও খালা মিলে তাদেরও মারধোর শুরু করেন। এতে অপমানিত হলে শাহিদা প্রতিবাদ করতে যান। শাহিদার শ্বাশুরী সে সময় বলে উঠে তুই আত্মহত্যা কেন করতে পারিস না। এরপর শাহিদা ঘরে ঢুকে দরজায় কড়া দিয়ে বিষ পান করে। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরবর্তীতে শুক্রবার রাত ২ টার দিকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

শাহিদার মামা আসাদ সিল্কসিটি নিউজকে জানান, প্রতিবেশী যেন টের না পায় সে কারণে শাহিদার মা ও ভাইকে দরজা আটকে রাখে। এরপর প্রতিবেশীরা মারধোরের বিষয়টি বুঝতে পেরে এগিয়ে আসে। কিন্তু জামাই আবুল কালামের চিন্তা ছিল যদি কোন অঘটন ঘটে তবে মা-ভাইয়ের উপর দোষ দিবে। পরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে।

মারধোরের বিষয়টি শুনতে পেরে মামা আসাদ স্থানীয় মেম্বার মানিক গাজী কে বিষয়টি অবগত করেন। এরপর আবুল কালাম ও তার পরিবার শাহিদাকে ঘর থেকে বের করে স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে বিষ তুলতে নিয়ে যায়। এরপর শাহিদার পরিবারের পক্ষ থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ(রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও তারা বাধা দেয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জোর করে রাত ২ টায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা।

রামেক হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের বলেন আর কিছুক্ষণ বিলম্ব হলে শাহিদাকে বাচানো সম্ভব হতো না। বর্তমানে শাহিদা রামেক হাসপাতালের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। তবে তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানান চিকিৎসক।

আসাদ বলেন, আমরা জামাইকে বারবার বলেছিলাম হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা। কিন্তু সে বলে আমার যা করার আমি করেছি। আর কিছু করতে পারবোনা। অবশেষে মেম্বারকে বলে অনেকটা জোর দিয়েই জামাইয়ের বড় ভাইকে আমাদের সাথে রাখি। কিন্তু জামাই এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ নেয়নি।

বিষয়টি জানতে শুক্রবার বিকেলে মেম্বার মানিক গাজির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, বিষয়টি কিছুটা শুনেছি। পারিবারিকভাবে সমস্যায় মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্তারিত কিছু জানা নেই।

এ বিষয়ে শাহিদার পরিবার থেকে থানায় অভিযোগ করার কথা জানান আসাদ।

জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এই ঘটনায় এখনো কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স/শ