দুর্গাপুরে চামড়ার দাম নেই, চামড়া নিয়ে অন্তরালের খেলা

দুর্গাপুর প্রতিনিধি:
দুর্গাপুরে কোরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিক্রিতারা। ঈদের দিন কোনবানী শেষে বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে এসে বিমর্ষ হয়ে পড়ে তারা। চামড়া কেনার লোক খুঁজে পাওয়ায় যেন দায় হয়ে পড়ে। কিছু ব্যবসায়ীরা হাটেবাজারে থাকলেও দাম বলতে নারাজ তারা। উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম অনুযায়ী এবার ঢাকার বাহিরে গরুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

দুর্গাপুরের বৃহত্তম হাট সিংগা হাটে সবচেয়ে ভালো মানের কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫শ টাকায়। আর মাঝারি মানের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২শ থেকে ৩শ টাকার মধ্যে। যা গত বছরও ৮শ থেকে ১২শ টাকায় দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে অনেকে বলছেন গরিবের হক চামড়া নিয়ে একটি মহল বিশাল সিন্ডিকেট করে অন্তরালের খেলা খেলেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই যুগেও এমন দামে পশুর চামড়া বিক্রি হয়নি। বিগত বছরগুলোতে নামাজের পরপরই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের ভিড় করে থাকলেও এবার তেমন একটা ভিড় দেখা যাযনি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার ফড়িয়া বা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে না। কোথাও কোথাও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ২শ থেকে ৩শ টাকায় চামড়া কিনেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার চামড়ার দামে মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে।

ঈদের দিন সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিন উপজেলার আমগাছি, কানপাড়া, ধরমপুর, দাওকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানি করা বেশিরভাগ পশুর চামড়া ব্যপারীর আভাবে মোড়ে মোড়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখেছে। এছাড়াও চামড়া নেয়ার লোকজন না থাকার কারণে অনেকে বাধ্য হয়েই ছাগলের চামড়া মাটির নিচে পুতে ফেলছেন।

উপজেলার দেলুয়াবাড়ী গ্রামের মাজদার হোসের বলেন, দুর্গাপুর বাজারে গরুর চমড়া কেনার যদি দুইএকাটা ব্যবসায়ী থাকেও তাও আবার ছাগলের চামড়া কেনার ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়াই যেন সোনার হরিণ। তিনি ছাগলের কাঁচা চামড়া বিক্রি করেছেন প্রতি পিচ ১০-১৫ টাকায়। অথচ তার চামড়া বহনকৃত গাড়িতে ভাড়া গুনতে হয়েছে ১৫-২০ টাকা প্রতিটি চামড়া পেছনে।

নাটোরের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বছরে দুর্গাপুর বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের কাঁচা চামড়া ১২শ’ টাকায় কেনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এবছরে সেই মানের চামড়া কেনা সম্ভব হয়েছে ৬শ’ টাকারও কম দামে। বিগত দুই যুগেও চামড়ার এমন দরপতন হয়নি।

দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের মৌসুমী কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী আলমগীর কবির বলেন, এবার আমরা চামড়া নিচ্ছি না। বাজার খুব খারাপ। বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবার আগে থেকে সাবধান করে দিয়েছেন। সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, ঢাকার ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে চামড়ায় ত্রুটি দেখিয়ে সেই দাম দেয় না। যার কারনে এবছরে চামড়া না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

স/অ