দুশ্চিন্তায় মাছ চাষীদের মাথায় হাত

দুর্গাপুরে আবেদন করেও মিলছে না পুরোনো পুকুর সংস্কারের অনুমোদন

গোলাম রসুল,দুর্গাপুর :
দেশে আমিষের চাহিদা পূরণে দেশীয় প্রযুক্তিতে যে পরিমাণ মাছ চাষ হয়ে থাকে তার অর্ধেকেরও বেশি মাছ চাষ হয়ে থাকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়। স্বমন্বিত মাছ চাষে গত ১৫ বছরে এ উপজেলায় মাছ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন থেকে চারগুণ। ফলে এলাকার মৎস্য চাষীরা যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন।

তেমনি মৎস্য চাষের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষের। এছাড়া পুকুর পাড়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক ভাবেও লাভবান হয়েছেন এ এলাকার মৎস্য চাষীরা।

গত বছর ভারী বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু পুকুর ডুবে যায়। ফলে মাছ চাষীদের মাথায় হাত পড়ে। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে। ওই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাছ চাষীদের বেগ পেতে হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই পুকুরের পাড় পুণরায় সংস্কার করা না গেলে ফের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হবে এমনটিই আশংকা মাছ চাষীদের।

আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের অক্টোবরের প্রথম দিকে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়। ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০ মিলিমিটারের বেশি। তবে আবহাওয়া অফিস ২৪ ঘণ্টা করে বৃষ্টির হিসাব করে থাকে। এতে আগেরদিন সকাল ৬টা থেকে পরেরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে রেকর্ড করে। এর আগে রাজশাহীতে টানা এত সময় ধরে বৃষ্টি বিগত ১০ বছরেও হয়নি। ওই বছর ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় মাছ চাষীদের প্রায় ৫ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।

বিগত বছরে ভারী বর্ষণের ফলে পুকুর ডুবে মাছ ভেসে যাবার দৃশ্য দেখে এ বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই পুকুরের পাড় নতুন করে সংস্কার করতে চান মাছ চাষীরা। কিন্তু মাছ চাষীরা পুরাতন পুকুরের পাড় সংস্কার করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। পাড় সংস্কার কাজে ব্যবহৃত এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু) ভেংগে দিচ্ছেন কিংবা অর্থদন্ড করছেন প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পুরাতন পুকুরের পাড় সংস্কার করতে বাধা দেয়া হচ্ছে মাছ চাষীদের।

গত দুই মাসে পুরাতন পুকুরের পাড় সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করছেন প্রায় শতাধিক মাছ চাষী। এদের মধ্যে কানপাড়া গ্রামের মজের, তিওরকুড়ি গ্রামের ইব্রাহিম, পালি গ্রামের মুজিবর, চৌপুকুরিয়া গ্রামের ইতি, নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের নান্টু, শ্যামপুর গ্রামের কুদ্দুস ও বাজুখলসী গ্রামের মানিক, ইমরান আলী পুরনো পুকুর সংস্কারের জন্য আবেদন করেও অনুমোদন পাননি।

৫ বিঘা থেকে ২০ বিঘা আয়তনের পুকুরে রয়েছে এসব মাছ চাষীদের। এদিকে চৌবাড়িয়া গ্রামের রাকিব তার ১২ বিঘা আয়তনের পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কারের আবেদন করেও অনুমোদন পাননি। অনুমোদন না পেয়ে কাজ শুরু করলেও নানান চাপে অবশেষে কাজ শেষ না করেই তাকে এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু) গাড়ি তুলে নিতে হয়েছে। রাকিবের মতো অন্য মাছ চাষীদেরও বেগ পেতে হচ্ছে পুরাতন পুকুরের পাড় সংস্কারে।

উপজেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, বন্যা বা অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুর ডুবে মাছ বা মাছের পোনা ভেসে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ কারনে মাছ চাষীদের পুরাতন পুকুরের পাড় সংস্কারের পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়া পুকুরের পাড় উঁচু করা, জাল বা বানা দিয়ে রাখতেও মাছ চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, কেউ কেউ বাণিজ্যিক স্বার্থে মাটি খনন করে বিক্রি করে আসছিলেন বিধায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে মাটি খনন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাছ চাষীদের কথা বিবেচনা করে পুরাতন পুকুরের পাড় সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে একটা বিহিত করা হবে।

পুরাতন পুকুরের পাড় সংস্কারের প্রয়োজনে কমিটি গঠণ করে দেওয়া হবে। কমিটি তদন্ত সাপেক্ষে জানাবে কোন পুকুরের পাড় সংস্কার প্রয়োজন। সে পর্যন্ত ধৈর্য ধারনের জন্য মাছ চাষীদের আহ্বান জানান ইউএনও স্বীকৃতি প্রামাণিক।