দুদক এখন নখ দন্তহীন বাঘ নয় : দুদক কমিশনার

দুদকের প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। দুদক এখন নখ দন্তহীন বাঘ নয়, বরং বাঘের হুংকার এখন অনেকের জন্য ভীতিকর। দুর্নীতির সঙ্গে যদি দুদকের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত হয় এবং সেটি যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়- তার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে। সরকারি কর্মকর্তা নাকি রাজনীতিবিদ না ব্যাবসায়ী; সেটি আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়, আমাদের বক্তব্য হলো কে দুর্নীতিবাজ। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুদকের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দুদকের কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।

আজ শনিবার (২১ নভেম্বর) তেঁজগাওস্থ জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে দুর্নীতি বিরোধী ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক কমিশনার এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

দুদক কমিশনার আরো বলেন, কানাডার বেগম পাড়ায় রাজনীতিবিদ, ব্যাবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তদের কার কি বাড়ি আছে এগুলো এখনো অনেকটা মিথ। এটির সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছেই নাই। তবে আমাদের কাছে এমন অভিযোগ আছে। আমরা এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। পিকে হালদার ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছেন দুর্নীতিতে জড়ানোর পর মিডিয়ার কল্যাণে তারা বিখ্যাত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে; তার মাধ্যমে আমরা দুর্নীতিবাজদের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করছি।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতি দমনের কথা উল্লেখ করলেও ক্ষমতায় গিয়ে তা বোমালুম ভুলে যায়। তবে এই সরকার ঘুষ, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম বন্ধে সদিচ্ছা দেখালেও তা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে দুর্নীতি প্রতিরোধ করাটাই সরকারের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেয়ার বাজার জালিয়াতি, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজ, খাল-বিল নদী-নালা দখলকারীসহ সকল প্রকার দুর্নীতিবাজদের দৃশ্যমান বিচার করতে পারলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরো বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা যখন দেখি টেন্ডারবাজ জিকে শামীম, করোনা সার্টিফিকেট জালকারী সাহেদ-সাবরিনা, ক্যাসিনো সম্রাট গ্রেপ্তার হয়। হাজী সেলিম পুত্র ইরফান সেলিমের অপকর্মের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ দুদক সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সাবেক বর্তমান মন্ত্রী এমপিসহ প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তখন আমরা আশাবাদী হই। কিন্তু আবার যখন দেখি বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা আব্দুল হাই বাচ্চু, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক পিকে হালদারসহ অনেক অর্থ লুণ্ঠনকারী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে তখন আমরা আশাহত হই। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের একটা শক্তিশালী সেল থাকা দরকার। যারা কমিশনের কাজের ওপর সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ মূল্যায়ন করে কমিশনকে ফিডব্যাক দিবে।

প্রতিযোগিতায় বিরোধী দল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনলোজিকে পরাজিত করে সরকারি দল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতর্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক জেমসন মাহবুব এবং সাংবাদিক রোকসানা আমিন। আয়োজনটি পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ