দুই দারোগার বরখাস্তের খবরে মাদক ব্যবসায়ীদের পিকনিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীদের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমানে চক্রান্তের শিকার ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের অভিযানে ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারসহ একজনকে আটকের ঘটনায় রহস্য নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ওইদিন শিবগঞ্জ থানার এসআই আইনুল হক সংগীয় ফোর্স নিয়ে কানসাট বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দুটি ক্যারেটে পেয়ারা ও আলুর সাথে রক্ষিত অবস্থায় ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ফেনসিডিলের মালিক জাহাঙ্গীরকে আটক করে। এ নিয়ে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গেল ২২ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি মাদক ব্যবসায়ীদের সাজানো চক্রান্ত ছিল। প্রশাসনকে কোণঠাসা করতে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সোর্স সেজে পুলিশকে সংবাদ দেয়, আবার কেউ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ফেনসিডিলের পরিমাণ বাড়িয়ে সংবাদ দেয়। উদ্ধারকৃত ফেনসিডিল থানায় নিয়ে আসার পর পরই তুলকালাম কা- শুরু হয়। এরপর এসআই আইনুল হক তার কক্ষে ১০০ বোতল ফেনসিডিল রাখা হয়। এ নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলেও তিনি ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের কথাই বলে। কিন্তু উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সংবাদ আছে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে এবং বাকি ৩০০ বোতল ফেনসিডিল গায়েব হয়েছে। তাই তাৎক্ষণিক এসআই আইনুল ও তার সাথে থাকা এএসআই বাবুল আকতারকে ক্লোজ করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে এসআই আইনুল ও এএসআই বাবুলকে সাময়িক বরখাস্তের খবর মাদক ব্যবসায়ীর জানতে পেরে আনন্দ উল্ল¬াস করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমনকি তারা উল্ল¬াসের সাথে পিকনিক আয়োজন সম্পন্ন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিকনিক পার্টিতে অংশ নেয়া এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, এর আগেই এসআই আইনুলকে বলেছিলাম আমাদের পিছনে লাগিও না। কিন্তু সে আমাদের কথা না শুনে একাধিকবার আমাদের ফেনসিডিল উদ্ধার করে আমাদেরকে ধরাশায়ী করেছে। আমাদের ব্যবসাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। তাই দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে এ কাজ করেছি।

ওইদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, ওই দিন আমরা দুটি ক্যারেটে ১০০ অথবা ১২৫ বোতল ফেনসিডিল দেখেছি। ক্যারেট দুটিতে পেয়ারা ও আলুর মধ্যে রক্ষিত ছিল। তারা বলেন, দুটি ক্যারেটে কোন পণ্যের সাথে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল ধরবে না। সূত্র মতে, যদি ৩০০ বোতল ফেনসিডিল পুলিশ অফিসার বিক্রি করে গায়েব করে থাকে তবে কার কাছে, কোন স্থানে বা কত টাকায় বিক্রি করলো তার কোন সংবাদ তারা বলতে পারেননি। সূত্রটি আরও জানায়, ঘটনাস্থল কানসাট হলেও ওই ফেনসিডিলগুলোর মূল মালিক উপজেলার সীমান্ত ঘেষা এমন একটি গ্রামের যেখানে প্রায় চার শতাধিক শুধু মাদক ব্যবসায়ী বসবাস করে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রশাসনের লোকজনকে হয়রানী ও হুমকির মুখে ফেলার চেষ্টা করে থাকে। আর ঘটনার সত্যতা মিলে সাম্প্রতিককালে মাদক ব্যবসায়ীর চক্রান্তে মাদকবাহী এক ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিবগঞ্জ থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। শুধু তাই নয় মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় সাম্প্রতিককালে মাদক ব্যবসায়ী ও সোর্সদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। সে সংঘর্ষেও প্রশাসনকে তারা জড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও এখনো থেকে নেই তাদের মাদক ব্যবসা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম খান জানান, ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তদন্তে শেষে সত্যতার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/শা