রবিবার , ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

দুই দশকে পদার্পণ করলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Paris
অক্টোবর ২০, ২০২৪ ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দুই দশকে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৬৭ বছরে পদার্পণ করলো আজ ২০ অক্টোবর। ২০০৫ সালের এই দিনে রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ঊনষত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান, ’২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও অসামান্য অবদান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। ইকরামুল হক সাজিদ ও আহসান হাবিব তামিম নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির দুইজন শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। এছাড়াও অনেকে আহত হয়েছেন। জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন অনেকে।

এবছর জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে ১৯তম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ‘বিপ্লবে বলীয়ান, নির্ভীক জবিয়ান’ স্লোগানে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সকাল সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে জাতীয় পতাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল ৯টায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে আয়োজিত হবে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন।

সকাল সাড়ে দশটায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি র‍্যালি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে রায়সাহেব বাজার ও ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে এসে শেষ হবে।

বেলা ১১টা ১০ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কর্তৃক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা ফলক (পুনঃস্থাপন) উন্মোচন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। ১১টা ১৫ মিনিটে নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় দিনব্যাপী চারুকলা প্রদর্শনী ও চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হবে।

বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে মুক্ত মঞ্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম দিবস উপলক্ষে নবীন শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে মুক্তমঞ্চে স্বাগত জানানো ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সবশেষে বিকাল ৩টা থেকে ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের থিমকে ধারণ করে ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে মুক্ত মঞ্চে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৮ সালে দীননাথ সেন, প্রভাতীচরণ রায়, অনাথবন্ধু মল্লিক এবং ব্রজসুন্দর কৈত্র ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। পুরানো ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এ কলেজে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ভাষা সৈনিক তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী রফিক। ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান আবার কো-এডুকেশন চালু করেন। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারিকরণ করা হয়, কিন্তু পরের বছরেই আবার এটি বেসরকারি পর্যায়ে চলে যায়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জগন্নাথ কলেজে পাকিস্তানি সেনারা হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রঙ্গনে গণহত্যা চালানো হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শহীদ হন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। জগন্নাথ কলেজে পাকিস্থানি সেনাদের ক্যাম্প করা হয়।

যুদ্ধ শেষে এখানে গণকবরের সন্ধান মেলে, উদ্ধার করা হয় কয়েক ট্রাকভর্তি মানব কঙ্কাল। ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হয় এলাকার প্রভাবশালীদের জগন্নাথ কলেজের হল দখলের পাঁয়তারা। ছাত্রদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ বাধে বারবার। প্রথমে বেদখল হয়ে যায় কুমারটুলি ছাত্রাবাস। এরপর একের পর এক বেদখল হয় ৮৪ জিএল পার্থ লেন, কুমারটুলিতে (ওয়াইজঘাট স্টার সিনেমা হলের পিছনে) অবস্থিত হলগুলো। ১৯৯২ সালে ১৪টি ছাত্রাবাসের মাত্র ৩টি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাকিগুলো সময়ের সঙ্গে প্রভাবশালীদের হাতে চলে যায়। ৩টি ছাত্রাবাসের দুটি (মাহমুদা স্মৃতি ভবন ও এরশাদ হল) বর্তমানে ভেঙ্গে মসজিদ ও কলা অনুষদ করা হয়েছে।

২০০৫ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাসের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে মোট সাতটি অনুষদের অধীনে ৪০টি বিভাগের ও ২টি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আবাসিক সংকট নিরসনে হল আন্দোলনের মুখে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গরূপে আধুনিক নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের লক্ষ্যে ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেন। যেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ চলমান রয়েছে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - শিক্ষা