দুই কিশোরের বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ব্রাজিলের হেনরিক ডুবাগ্রাস এবং পেড্রো ফ্রানসেসকি দুই বন্ধু। উভয়ের বয়স ১৬ বছর। ঘটনাচক্রে একদিন দু’জনের দেখা হওয়ার পর কিছুক্ষণ আলাপ-সালাপে উভয়ে বুঝতে পারল দু’জনের নেশা একই। আর তা হচ্ছে—হ্যাকিং! জিনিসটা খারাপ তাই তাদের মায়েরা যখন ছেলেদের লেখাপড়ার চেয়ে হ্যাকিংয়ে আগ্রহের কথা জানতে পারলেন তখন দুঃশ্চিন্তায় পড়লেন। কারণ অধিকাংশ দেশে হ্যাকিং করে ধরা পড়লে বড় ধরনের শাস্তির আইন আছে। ফলে কঠোর শাসন শুরু হলো। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। হ্যাকিং করে অবৈধভাবে কারো নেটওয়ার্কে ঢুকে না পড়লেও তারা প্র্যাকটিস ছাড়লো না।
গত বছর অ্যাপল ধুমধাম করে আইফোনের দু’টি ভার্সন বাজারে ছাড়ে। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিল আগের যে কোনো ভার্সনের চেয়ে নিরাপত্তার দিক দিয়ে সেরা নতুন এই আইফোন। কিন্তু হেনরিক ও ফ্রানসেসকি অ্যাপলের কথিত নিরাপত্তা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে সময় নিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরপর তার কিছু অংশ ইন্টারনেটে ছেড়ে দিলো। এরপর তাদের মায়েরা আইফোনের কাছ থেকে লিগ্যাল নোটিশ পেল। আইফোনের গোপনীয় প্রযুক্তি এভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করলে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর তাদের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল। ছেলেদের এমন শাসন করলেন যে, তারা হ্যাকিং ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো।
তবে এই হ্যাকিং শিক্ষা যে তাদের জন্য শাপে বর হয়েছে, সেটা ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়েছে। এই হ্যাকিং বিদ্যা দিয়ে তারা নিজেরা তৈরি করেছে অনলাইনে নিরাপদ অর্থ লেনদেনের পদ্ধতি। প্রতিষ্ঠা করেছে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি। ব্রেক্স (brex.com) নামের এই কোম্পানির বর্তমান বাজার মূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তাদের এই কোম্পানি বিশ্বের অনেক বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঈর্ষার পাত্র হয়ে উঠেছে। কারণ কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৭ সালে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় এই বছরের জুনে। মাত্র এই কয়েক মাসেই এর বাজারমূল্য আকাশ ছুঁয়ে যায়।
কোম্পানির সিইও হেনরিক ডুবাগ্রাস প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রান্সকে জানিয়েছে, তার বয়সী ছেলেরা যখন স্কুলের পরবর্তী পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে চিন্তা করত, তখন সে চিন্তা করত তার নতুন বিজনেস আইডিয়াটা কি হবে। শেষমেশ ভেবে বের করল সহজে ও স্বল্প খরচে উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রেডিট কার্ড দিলে কেমন হয়। সেই ভাবনা থেকে ব্রেক্সের জন্ম। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে কাজ করছে শতাধিক কর্মী। ব্যাপক সাড়া পেয়েছে গণমাধ্যমেও। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই দুই কিশোর স্কুলের ক্লাস কিংবা খেলার মাঠের দিকে মনোযোগ না দিয়ে অসীমের দিকে হাত বাড়িয়েছে। এরাই যে আগামী দিনের জাকারবার্গ হতে যাচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই।