দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে, রফতানি এবং প্রবাস আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমন পরিবেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সামনের দিনগুলোতে আরও বেগবান হবে। সোনার বাংলায় ‘দারিদ্র্য’ হবে সুদূর অতীতের কোনো ঘটনা।

বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘের বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ও সম্ভাবনা, ২০১৯ প্রতিবেদনে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে সবচেয়ে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ১০টি দেশের মধ্যে (৭ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী) বাংলাদেশ একটি। এই ১০টি দেশের তালিকায় এশিয়া অঞ্চলে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

সংসদ নেতা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, এপ্রিল ২০১৯-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধির সমান। এ তালিকায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রথম স্থানে অছে রুয়ান্ডা, যার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে আমাদের সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার দক্ষ বাস্তবায়ন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি যে, পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতুসহ আমরা ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এসব পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০১৫ সালে নিুমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘ আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এটি দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি বড় অর্জন। আশা করছি, আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব।

১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক কোটি কর্মসংস্থান : পনির উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর এলাকাসহ সম্ভাবনাময় সব এলাকায় পরিকল্পিতভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন আমাদের এ উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন সম্পন্ন হলে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও রফতানি করা সম্ভব হবে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে।

আমার গ্রাম, আমার শহর : আহসানুল হক টিটুর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করে গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম পর্যায়ে নিরাপদ কৃষি পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন ভ্যালুচেইন উন্নয়ন এবং কৃষিক্ষেত্রে আইসিটিভিত্তিক তথ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৫৪টি এগ্রিকালচারাল ইনফর্মেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার টন। শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে কৃষকের আয় বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের চাহিদা ও মজুরি বেড়েছে। বর্তমানে একদিনের মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিক প্রায় ১৫ কেজি চাল কিনতে পারছে।

ইতিহাস বিকৃতকারীদের উচিত জবাব দিয়ে গেছেন রুশেমা ইমাম : সংসদ সদস্য রুশেমা ইমামের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বুধবার শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্য তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। বাজেট আলোচনায় দেয়া তার বক্তব্যে অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছে। যেটা ইতিহাস বিকৃতকারীদের উচিত জবাব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম ও শাহাজান খান এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ ও বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।

আলোচনা শেষে প্রয়াত সংসদ সদস্যের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর সংসদের অধিবেশন আজ বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। সংসদের রীতি অনুযায়ী চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে তার ওপর আলোচনা শেষে ওই দিনের জন্য অধিবেশন মুলতবি করা হয়ে থাকে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রুশেমা বেগম অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। একটা যুগে মেয়েদের লেখাপড়া করা কঠিন ছিল, তিনি সেই সময় লেখাপড়া করেছেন। তিনি শিক্ষিকা ছিলেন। আমি বাব-মা-ভাই সব হারিয়ে যখন দেশে ফিরি তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও তার সহচর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। রুশেমা বেগম এবং তার স্বামী ইমাম উদ্দিন ছিলেন তাদের অন্যতম।

রুশেমা ইমাম অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন বলে মন্তব্য করেন বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, দু’শ বছর আগে নারীদের জন্য বেগম রোকেয়া যে কাজটি করেছিলেন, এ সময়ে এসে রুশেমা সেই কাজটি করেছেন।

রাজনীতিতে ইমাম উদ্দিনের পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রবীণ সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, সেই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের পরিবার ঝুঁকিতে থাকত। সেই ঝুঁকির মধ্যে আওয়ামী লীগের আদর্শে অটল ছিলেন রুশেমা ইমাম।

সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইমাম উদ্দিন আহমেদ ও রুশেমা ইমাম দু’জনই বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধু রুশেমা ইমামকে নারী পুনর্বাসনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রয়াত সংসদ সদস্য রুশেমা ইমামকে মহীয়সী নারী আখ্যায়িত করে সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয় ছিল ওই বাড়িতে। কেন্দ্রীয় নেতারাও সেখানে আশ্রয় নিতেন। পেশায় প্রধান শিক্ষক এই নারীকে সম্মানিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, রুশেমা ইমামরা যখন কাজ শুরু করেছেন তখন তাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। স্বামীকে জেলখানায় রেখে একদিকে স্কুল, অন্যদিকে পরিবার সামলেছেন তিনি। অথচ সবসময় সাধারণ জীবনযাপন করেছেন।

শিক্ষার বিস্তার ও সমাজসেবামূলক কাজে তৃণমূলে রাজনীতি করা এ সংসদ সদস্যের অবদানের কথা তুলে ধরেন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নির্যাতিত নারীদের জন্য রুশেমা ইমাম যা করেছেন তা আমাদের অনন্তকাল মনে রাখতে হবে।