দস্যুতা ছেড়ে ভালো আছেন তারা

সিল্কসিটিনিউ ডেস্ক: ভিলেজ পলেটিকস ও হয়রানিমূলক মামলার খরচ চালাতে বারেক তালুকদার ও সোহাগ আকন দস্যুতার পথ বেছে নিয়েছিলেন। অস্ত্রের দাপট থাকলেও  ফেরারি জীবনে শান্তি ছিল না। তাই সরকারের পুনর্বাসনের আশ্বাসে দস্যুতার পথ ছেড়ে আত্মসমপর্ণণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। বারেক, সোহাগের মতো ৯৪ জন দস্যু এখন পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছেন। সরকার ঘোষিত পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বিলম্বিত হওয়ায় সাময়িকভাবে আর্থিক সংকটে পড়েছেন অনেকে। তাইতো জীবিকা নির্বাহ করতে অনেকেই দিনমজুরি ও কৃষি কাজ করছেন। এ জীবনে স্বচ্ছলতা না থাকলেও আক্ষেপ নেই তাদের। আর সমাজও ভালোভাবে গ্রহণ করায় ভালো আছেন তারা।

সোহাগ আকনের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার যাত্রা শুরু হয়। গত বছর ৩১ মে সোহাগসহ কয়েকজন দস্যু আত্মসমর্পণ করেন।

সোহাগ আকনের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের বড়কাটালি গ্রামে। আত্মসমর্পণের পর থেকে তিনি ফরিদপুর সদরের মাছচর এলাকায় বাস করছেন।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জঙ্গলে থাকা অবস্থায় আয় করা টাকা দিয়ে ফরিদপুরে ৯ শতক জমি কিনেছিলাম। স্ত্রী ও ২ ছেলে নিয়ে সেই জমিতে বাড়ি বানিয়ে থাকছি। আয় রোজগারের জন্য ২ বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে চাষ করছি।’

তিনি বলেন, আত্মসমর্পণের পর পুনর্বাসনের জন্য সবাইকে একটি করে মাহেন্দ্র দেওয়ার কথা রয়েছে। বয়স থাকলে আগ্রহীদের বিদেশে পাঠানোর কথাও বলা হয়েছিল। এখন সে প্রক্রিয়াগুলো চলছে। কিন্তু সরকারের ঘোষণায় তিনি আস্থা রেখেছেন। কিছুটা আর্থিক সংকট পড়েছেন, তারপরও চেষ্টা করছেন স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।

সোহাগ বলেন, ‘আমার ডান হাতে সমস্যা রয়েছে। তাই বড় ছেলেকে একটা সরকারি দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি। যদি হয় তবে ভালো লাগবে। সে ক্ষেত্রে আমার কিছুই লাগবে না। আর যদি মাহেন্দ্র দেয় তবে বড় ছেলেই সেটা চালাবে।’

দস্যুবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ভিলেজ পলেটিকসের কারণে তাকে ৯টি মামলার আসামি করা হয়েছিল। মামলাগুলো লড়ার প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করতেই ২০০৯ সালে রাজু বাহিনীতে যোগদান করেন। ২০১৩ সালে তিনি ফেনিতে গিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে রাজুর চাচাতো ভাই নোয়া বাহিনীর সদস্য হন। সেখানে নোয়ার দুর্ব্যবহারের জন্য তারা ৭ জন মিলে নোয়ার সব কিছু কেড়ে নিয়ে নিজেই মাস্টার বাহিনী গঠন করেন। মাস্টার বাহিনীর প্রধান করা হয় মোস্তফা শেখকে। তবে সব কিছুই তার নিজের নির্দেশেই চলতো। সাগরের ইলিশের ট্রলার ও মাঝিদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ই ছিল তাদের অর্থের উৎস।

গতবছর ১৬ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় শান্ত বাহিনীর প্রধান বারেক তালুকদার আত্মসমর্পণ করেন। তার বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের জামিরতলা গ্রামে। স্ত্রী, তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার চলে দিনমজুরি আর ছেলের ভাড়া গাড়ি চালানোর আয়ে।

তিনি বলেন, ‘আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফেরত পাওয়া গেছে এটাই বড় বিষয়। শান্তিতে আছি, আর কিছুই চাওয়ার নেই। একটি মাহেন্দ্র দেওয়ার কথা রয়েছে। সেটা পেলে ছেলেকে আর ভাড়ার গাড়ি চালাতে হবে না।’

দস্যু দলের নাম লেখানো প্রসঙ্গে বলেন, একজনের ঘের থেকে পরিত্যক্ত একটি অস্ত্র উদ্ধারের পর তার নামে মামলা দেওয়া হয়। এ মামলার কারণে নিজেকে রক্ষা করতে ২০০৮ সালে তিনি বিডিআর সোরাফ বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর বেল্লাল বাহিনীতে যান। ২০১৪ সালের শেষে দিকে নিজেই বাহিনী গঠন করেন। গত ২ বছর সুন্দরবনে পাস পারমিট বন্ধ থাকার ফলে আয় তেমন একটা ছিল না। লোকজনকে জিম্মি করে অল্প কিছু আয় হতো। তাতে ১০ জনের বাহিনী চালানো ছিল কষ্টকর। আত্মসমর্পণের পর এখন স্বাভাবিক জীবনে এসে আর্থিক কষ্ট থাকলেও মানসিক স্বস্তি রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাব-৮ এর মেজর আদনান কবীর বলেন, এখন পর্যন্ত ৯৪ জন দস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে ৪৫ জন মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে রয়েছে। যাদের ওপর প্রশাসনিক নজরদারি রয়েছে। আত্মসমর্পণকারী সবার পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন