দর্শন এবং বিশ্বাস না থাকলে শিল্পচর্চা অন্তঃসারশূন্য

কি লিখবো? কি লিখবো না? কাকে লিখবো?

কাকে জানাবো? অথবা জানাবো না?
কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো? আমি কি দায়ী? আমার দায় কি এড়াতে পারি?
অনেকেই আমার ছাত্র, স্নেহভাজন। তারা মান্যিগন্যি করে। এ এক বড় কষ্ট! তাদের কি ভুল শিক্ষা দিয়েছি? বোধ হয় তাই! তাদেরকে শিল্পের ও শিল্পীর দায়বদ্ধতা বোঝাতে পারিনি, এ ব্যর্থতা আমার, আমাদের অনেকের।

তাদেরকে ইতিহাস জানাতে পারিনি- ‘৬৯ এর গণ-আন্দোলনে শিল্পীদের, অভিনেতাদের কি বিশাল ভূমিকা ছিল। ‘৭১-এ স্বাধীনতা অর্জন করতে সেই অভিনয় শিল্পীরা কি করে যোদ্ধা হয়ে উঠেছিল! তারপর .. ‘৮৪, ‘৮৫, ’৯০… সামরিক শাসন বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আন্দোলন…। কেউ কেউ বলতে পারে এগুলো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত .. আমি রাজনীতি করতে চাই না।… তাহলে তো বাংলাদেশ হতো না! শিল্প, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য এবং তার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে আমার এ দেশের অস্তিত্ব কি?

 

এ আমারই ব্যর্থতা, আমার পরবর্তী প্রজন্মকে শিল্পীর দায়বদ্ধতার জায়গাটা বোঝাতে না পারা। জনপ্রিয়তা, অর্থ উপার্জন দোষের কিছু নয়। কিন্তু সস্তা জনপ্রিয়তা, অর্থ গৃধ্নুতা, ভোগ বিলাসে মত্ত জীবন- মানুষের মনে (যাদের জন্য শিল্পকর্ম করি) ভালোবাসার স্থায়ী আসন গড়তে পারে না। আমাদের মঞ্চ নাটক, টেলিভিশন নাটক এখনো ঐতিহ্যকে ধারণ করে দর্শকের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে আছে। তাকে কোনোভাবেই অমর্যাদাকর স্থানে নামানো যাবে না। সুখের কথা, নাটকে একটা পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেটাকে এগিয়ে নিতে হবে। চাই- সুস্থ সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

‘অটিজম’ সম্পর্কে যে কথা একটি নাটকে বলা হল সেটি শিক্ষা এবং জ্ঞানের অভাব নিঃসন্দেহে। আগামী দিনে এই বিশেষ শিশু/মানুষগুলো আমাদের পৃথিবীকে হয়তো অন্যভাবে চেনাবে; কে জানে! শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জড মানুষগুলো ইতিমধ্যেই তা আমাদের দেখিয়েছেন। তবে আমি ধন্যবাদ জানাই যে ভুলটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে নাটক সংশ্লিষ্টরা অনেকেই ক্ষমা চেয়েছেন। তবে তারা যদি এই বিষয়ে সমাজ সচেতনতার জন্য এগিয়ে আসেন খুশি হবো। শুধু এই নাটকে নয় অনেক নাটকেই শিক্ষা, সচেতনতার বড় অভাব দেখতে পাই। মেয়েদেরকে হেয় করা, অপ্রয়োজনীয় ভায়োলেন্স, রুচিহীন উপস্থাপন, আমাদের অনেক অর্জনকেই খাটো করে দিচ্ছে।

আজ খুব বড় প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষা। শিল্পের শিক্ষাটা, সঠিক পাঠটা গ্রহণ করে শিল্প কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করা। সমাজের জন্য দরদ ভালোবাসা না থাকলে অর্থ উপার্জনের আরো অনেক পথ আছে সেগুলো খোঁজাই শ্রেয়। দর্শন এবং বিশ্বাস না থাকলে শিল্পচর্চা অন্তঃসারশূন্য ভাঁড়ামো কেবল।

কাল বড় নিষ্ঠুর, সে কাউকে ক্ষমা করে না। দায়বদ্ধতাহীন, শৃঙ্খলাহীন শিল্পচর্চা বেশি দিন টিকে থাকে না। আজ যাকে খুব প্রয়োজন, কাল সে মূল্যহীন- ইতিহাস তাই বলে।’’ “Love Art in Yourself, not Yourself in Art” – Konstantin Stanislavsky.

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন