দক্ষিণ আফ্রিকায় মৃত্যুর মিছিলে দাগনভূঞার ৬২ জন

সোনার হরিণ ধরার জন্য দেশ-মাটি-মানুষসহ মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনদের ছেড়ে দাগনভূঞার প্রায় ৫০ হাজার যুবক পাড়ি দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। নিদারুণ কষ্ট ভোগ করে আদম ব্যবসায়ীদের কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলেও ফিরে আসছে লাশ হয়ে।

যে পরিবারের সন্তান পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য ধার-দেনা বা পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা বাণিজ্য বা চাকরি করার অভিযাত্রা শুরু করে দেশে রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও পরিবারকে সচ্ছলতার মুখ দেখিয়েছিল। দেশে লাশ হয়ে আসায় রেমিটেন্স বন্ধসহ সে পরিবারের সব স্বপ্ন তাসের ঘরের মতো তছনছ হয়ে গেছে। যারা এখনও সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য বা চাকরি করছে তাদের ও তাদের পরিবারের সময় কাটছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়।

এমন লোমহর্ষক ও নির্মম হত্যাকাণ্ড হিংস্রপশুকেও হার মানায়। কালো নিগ্রোরা হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাস, রিক্রুটিং এজেন্সি অথবা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো কড়া প্রতিবাদ বা ক্ষতিপূরণ আদায় করার কোনো নজির এখনও পাওয়া যায়নি।

নিহতদের পরিবার ও থানার রেকর্ডমতে, দাগনভূঞা পৌরসভার উত্তর শ্রীধরপুর গ্রামের হোসেন সেরাং বাড়ির আবদুর রাজ্জাক প্রকাশ রেজু মিয়ার ছেলে নাজমুল হুদা বিপ্লব, দাগনভূঞার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউপির চন্দ্রদ্বীপে ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন মহিন, পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বজলের রহমান খানের ছেলে মমিনুল হক চর মজলিসপুর গ্রামের আবুল খায়ের সওদাগরের নতুন বাড়ির আবুল খায়েরের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও মোশাররফ হোসেন, পৌর এলাকার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের নুরু কোম্পানি বাড়ির মৃত অজি উল্যাহর ছেলে কবির আহম্মদ, দাগনভূঞা বাজারের জামিল ফার্মেসির মো. বেলালের পুত্র সালাউদ্দিন শাকিল, পৌরসভার বেতুয়া গ্রামের আবদুল হকের ছেলে আবুল কাশেম, মাতুভূঞা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইছহাক জগলুর বড়ভাই মো. ইয়াকুব বাবলু, উপজেলার দুধমুখা বাজারের ফার্মেসি ব্যবসায়ী মাইন উদ্দিনের ভাই হানিফ, গণিপুর গ্রামের ইসলাম সওদাগরের বাড়ি আবুল হোসেনের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, পৌরসভার জগতপুরের আবদুল করিম হারুন, পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বৈঠারপাড় গ্রামের আবুল কালামের ছেলে নূরুল হুদা ছুট্টু, মাতুভূঞা ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের মজিব মুন্সিবাড়ির মালেক সর্দারের ছেলে দুলাল, পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম এ তালিকায় আছেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর দাগনভূঞা শাখার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. আবু তাহের বলেন, প্রবাসীদের ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী বিনিয়োগ। তাই এসব ঘটনার প্রতিকার ও ন্যায়বিচার করা জন্য কুটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি।

 

সুত্রঃ যুগান্তর