সোমবার , ৯ জুলাই ২০১৮ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

থাইল্যান্ডের গুহা থেকে ৮ কিশোরকে উদ্ধার করেছে ডুবুরিরা

Paris
জুলাই ৯, ২০১৮ ৮:২৫ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া আরও চার কিশোরকে বের করে এনেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এ নিয়ে আট কিশোর ফুটবলারকে উদ্ধার করা হলো। এর আগে রোববার চার কিশোরকে উদ্ধার করা হয়।

ইন্ডিপেনডেন্ট, বিবিসি ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, রোববার প্রথম দিনে উদ্ধার অভিযান শেষে চারজন কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১১ টার দিকে দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু হয়। রোববারের উদ্ধারকারী ডুবুরিরাই গুহায় প্রবেশ করেন। স্থানীয় সময় সাড়ে ৪টার দিকে পঞ্চম কিশোরকে গুহা থেকে বের করে আনে উদ্ধারকারী। এরপর আরও তিনজনকে গুহা থেকে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা। এখনো চার ফুটবলার ও কোচ গুহার ভেতরে আছেন। উদ্ধারের পরই অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ফুটবলাররা সুস্থই আছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।

গুহায় আটকে পড়া খুদে ফুটবলাররা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: এএফপিগুহায় আটকে পড়া খুদে ফুটবলাররা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: এএফপিচিকিৎসকেরা জানিয়েছে, সোমবার উদ্ধারকৃত কিশোরদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত । রোববার চার কিশোরকে উদ্ধার করার পর উদ্ধার অভিযানে প্রায় ১০ ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়েছিল। পুরো উদ্ধার প্রক্রিয়ায় ৯০ জনের একটি ডুবুরি দল কাজ করছে। তাদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। অন্যরা বিদেশি।

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় ঢোকার পর গত ২৩ জুন নিখোঁজ হয় ওই ১৩ জন। ১২ কিশোরের একজনের জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে এবং বেড়াতে তারা সেখানে গিয়েছিল। ১২ কিশোরের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর। তারা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য।

থাম লুয়াং গুহায় আটকে পড়া ১৩ জনকে উদ্ধারে রোববার সকাল থেকে মূল অভিযান শুরু হয়। স্থানীয় সময় রাত প্রায় নয়টা পর্যন্ত অভিযানে চার কিশোরকে গুহা থেকে বের করে আনা হয়। সেখান থেকে তাদের সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

কিন্তু উদ্ধারকারী দলের হাতে বেশি সময় নেই। রোববার রাতের শেষ দিকে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী কয়েক দিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এমন বৃষ্টি হলে এত দিন ধরে গুহার ভেতর থেকে পাম্পের মাধ্যমে যেভাবে পানি বের করে আনা হয়েছে, সে কাজ পুরোটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। অন্য কিশোরদের গুহার ভেতরই আটকা পড়ে থাকতে হবে।

রোববার বৃষ্টি শুরুর পর অভিযানের প্রধান এবং চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোত্তানাকর্ন বলেন, ‘আমাদের সামনে দুটি প্রতিবন্ধকতা। পানি ও সময়। প্রথম দিন থেকেই আমরা এই দুটি বাধার বিরুদ্ধে পাল্লা দিচ্ছি। প্রকৃতির সঙ্গে টক্কর দেওয়া কঠিন কাজ হলেও আমাদের যতটুকু করার আছে, সবই করতে হবে।’

থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া খুদে ফুটবলারদের উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীতথাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া খুদে ফুটবলারদের উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

সিএনএনের আবহাওয়াবিদ অ্যালিসন চিনচার বলেন, ভারী বৃষ্টি আসতে এখনো দেরি। এটি তিন দিন ধরে চলবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের কাছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহা থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা। কম চওড়া আর অনেক প্রকোষ্ঠ থাকায় গুহার ভেতরে চলাচল করা কঠিন। ২৩ জুন গুহায় ঢোকার পর ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট প্লাবন আর কাদার জন্য প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে আটকা পড়ে ফুটবল দলটি। এর নয় দিন পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান। এরপর কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ১২ খুদে ফুটবলার আর তাদের কোচকে উদ্ধারে তিন থেকে চার মাস সময় লাগতে পারে। তাদের অবস্থান জানার পর গুহার ভেতরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার পাশাপাশি পাঠানো হয়েছে খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম।

গত শুক্রবার উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে কিশোরদের অক্সিজেন সরবরাহ করে ফেরার পথে প্রাণ হারান থাই নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি সামান কুনান। নেভি সিলের অবসরপ্রাপ্ত এই সদস্য মারা যান অক্সিজেন-স্বল্পতায়। সর্বশেষ গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ার এক চিকিৎসক গুহায় ঢুকে কোচ ও কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উদ্ধার অভিযান শুরু করার সবুজসংকেত দেন। তাদের অবস্থানস্থলে যাওয়ার জন্য ওই পাহাড়ে শতাধিক গর্ত করা হয়। যার মধ্যে ৪০০ মিটার গভীর গর্তও ছিল। তবে কিশোরদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের অবস্থান ৬০০ মিটার নিচে।

গুহার ভেতরে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধারে কাজ করছেন থাই নেভির সদস্যরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: এএফপিগুহার ভেতরে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধারে কাজ করছেন থাই নেভির সদস্যরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: এএফপি

গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। উদ্ধারকাজের জন্য বাইরে থেকে ওই ফুটবল দলের অবস্থানস্থল পর্যন্ত দড়ি বাঁধা হয়। উদ্ধারের সময় প্রত্যেক কিশোরকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়, দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় সামনে থাকা ডুবুরির সঙ্গে। তিনি গুহায় বাঁধা দড়ি এবং কিশোরের অক্সিজেনের বোতল নিয়ে অগ্রসর হন। কোনো সমস্যা হলে সহায়তার জন্য তাদের পেছনে ছিলেন আরেকজন ডুবুরি। গুহার সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গাটি ‘টি-জংশন’ নামে পরিচিত। এই এলাকা এতটাই সংকীর্ণ যে এখানে ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাংকও খুলে ফেলতে হয়। এই এলাকার আগে ‘চেম্বার-থ্রি’ নামের প্রকোষ্ঠে বেস ক্যাম্প বানানো হয়েছে। সর্বশেষ ধাপটি অতিক্রমের আগে এখানে কিছু সময় বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হয়।

উদ্ধার অভিযানের শুরু থেকে গুহার বাইরে অবস্থান নেয় ১৩টি চিকিৎসক দল। ১৩ জনের প্রত্যেকের জন্য একটি করে দল। প্রতি চিকিৎসক দলে রয়েছে একটি করে হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুলেন্স। গুহা থেকে বের করে আনার পরপরই ওই ১৩ জনের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর তাদের হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চিয়াং রাই প্রাচানুক্রহ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

উদ্ধারকারী দলে যোগ দেন দেশ-বিদেশের ১ হাজার জন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন দেশ থেকে নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সাহায্যও। থাইল্যান্ডে এরকম গুহার মধ্যে আটকে পড়ার ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। তবে গুহার এত গভীরে এভাবে একসঙ্গে এতজন আটকে পড়ার ঘটনা আগে ঘটেনি।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক