অবশেষে দেখা হলো ঢালিউডের আলোচিত জুটি শাকিব খান ও বুবলীর। একই টেবিলে পাশাপাশি বসে নতুন সিনেমার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরও করলেন তাঁরা। লম্বা সময় পর এই জুটিকে নিয়ে ছবি বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন পরিচালক তপু খান। ছবিটি প্রযোজনা করছে বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার তেজগাঁওয়ে আরটিভি স্টুডিওতে ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
শাকিব খানের কথায় স্পষ্ট, গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে অন্য রকম একটি গল্পের ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলেন তিনি। একই মন্তব্য ছবির নায়িকা শবনম বুবলীরও। ছবিটি প্রসঙ্গে শাকিব খান বলেন, ‘এটি আমার দেশের চমৎকার একটি গল্প। সামাজিক সচেতনতার এই সিনেমা দেশের প্রত্যেক তরুণের মনের কথা বলবে। “লিডার, আমিই বাংলাদেশ” সিনেমার গল্প বলবে, বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষই একেকজন লিডার। আমার দেশের প্রত্যেকের নিজের অবদান রাখার মাধ্যমেও যে দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়—সেই গল্পটাই উঠে আসবে এই ছবিতে। একজন শিল্পীই শুধু নন, ভালো মানের সিনেমা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ উপভোগ করতে চায়। দেখে গর্বিত হতে চায়। আমি বলব, এটি তেমনই একটি সিনেমা। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, সুন্দরভাবে সিনেমাটির শুটিং শেষ করে দর্শকের সামনের উপস্থাপনের।’
চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বর্তমানে মানহীন গল্প আর স্বল্প বাজেটে সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা বাড়ছেই। দর্শকেরাও এমন ছবি দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান সময় বিরক্তি প্রকাশ করে থাকেন।
এতে করে চলচ্চিত্রশিল্পের অবস্থা যেমন খারাপের দিকে যাচ্ছে, দেশের সিনেমাপ্রেমী মানুষও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এমন ধারণা শাকিব খানেরও। সংবাদ সম্মেলনে তাই তো তাঁর বক্তব্যে কিছুটা উঠে এসেছে। শাকিব বলেন, ‘৫০০ কিংবা ১০০ সিনেমা নির্মাণ না করে একটি ভালো মানের সিনেমা নির্মাণ করা উচিত। বিশ্ব সিনেমা বা আমরা যদি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের দিকেও তাকাই; সেখানে ছোট ছোট সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ছিল, যাদের আমরা বলি ডোমেস্টিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। বলিউডের তুলনায় ছোট টালিউড, পাঞ্জাব, মালায়ালামের মতো ইন্ডাস্ট্রিগুলো এখন বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে টক্কর দিয়ে সিনেমা বানাচ্ছে। তারা বলিউডকে ছাড়িয়ে সিনেমা বানাচ্ছে। “কেজিএফ”-এর কথাই যদি বলি, মালায়ালামের মতো ইন্ডাস্ট্রি ৩০০-৪০০ কোটি রুপি দিয়ে সিনেমা বানাচ্ছে। আর আমার দেশের সিনেমা এখন ১০ লাখ, ২০ লাখে নেমে এসেছে! হোয়াট অ্যা ফিল্ম ম্যান! কী চিন্তাধারা! কী রকম ব্যাপার।’
কথায় কথায় শাকিব খান বলেন, ‘অনেকেই বলছে, চলচ্চিত্রের না খেয়ে থাকা মানুষদের আমি কাজ দিচ্ছি। তোমার কাজ দেওয়ার দরকার নেই স্টুপিড ! তুমি কে কাজ দেওয়ার? আমার ১০০/৫০০ সিনেমার দরকার নেই, আমাদের একটি সিনেমা দরকার। একটি ভালো সিনেমা, সিনেমা হলকে এবং ইন্ডাস্ট্রিকে কীভাবে চাঙা করতে পারে সেটা আপনারা সকলেই জানেন। একটি ভালো সিনেমা কমপক্ষে ১ মাস একেকটা প্রেক্ষাগৃহে চলে। অনেক ব্যবসা দেয়। আমি আমার অনেক সিনেমার ক্ষেত্রে বলতে শুনেছি, ভাই গত ৬ মাস যত লোকসান ছিল, পুষিয়ে ফেলেছি এই একটা সিনেমা দিয়ে। সিনেমা তো সেটাই। ’
‘লিডার, আমিই বাংলাদেশ’ ছবিটি বানাচ্ছেন তপু খান, যিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম ওয়েব সিরিজ বানান। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্র নাটক সব মিলিয়ে তিন শতাধিক কনটেন্ট বানিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল সিনেমা নির্মাণের। নির্মাতা তপু খান প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, ‘আমি বরবারই নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি সেই নতুনের সঙ্গে কাজ করতে চাই না, যে শুধু এসে বলে, আমাকে নিয়ে সিনেমা বানাতে চায়। আমি তার সঙ্গে সব সময় হাঁটতে চাই, যে আমাকে নতুন পথচলা শেখায়। নতুন গল্প দেয়। নতুন করে ভাবায়। তেমনই একজন নির্মাতা তপুকে মনে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এ সিনেমা মুক্তির পর দর্শক তা কিছুটা হলেও বুঝবেন।’
‘লিডার, আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমা প্রসঙ্গে শবনম বুবলী বলেন, ‘আরটিভি থেকে যখন আমার সঙ্গে সিনেমাটি নিয়ে যোগাযোগ করে, আমি গল্পের ভাবনাটা শুনে মুগ্ধ হই। তা ছাড়া এই সময়ে এমন একটি বড় সিনেমার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়াকে সাধুবাদ জানাই। গল্পটা অসম্ভব সুন্দর। জেনেছি, পরিচালক তপু খান পাঁচ-ছয় মাস শুধু এই সিনেমার গল্পটি নিয়েই কাজ করছেন আর এটি তাঁর প্রথম সিনেমা। তখন মনে হয়েছে, সত্যি এবার দারুণ কিছু একটা হবে। তাঁর মধ্যে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।’
মার্চের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে ‘লিডার , আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার শুটিং। তপু খান বলেন, ‘যে স্বপ্নটা আমি এত দিন জেগে দেখতাম সেটার আংশিক পূরণ হয়েছে।
সুন্দরভাবে শুটিং শেষ করতে চাই। সবার সহযোগিতা চাই। আশা করছি, সততা বজায় রেখে সামনে এগোতে পারব। শাকিব খান ভাই এক মাস ধরে যেভাবে সিনেমাটির ভালোর জন্য সহযোগিতা দিচ্ছেন, তাতে আমি সত্যি মুগ্ধ। তিনি আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন, আমি সবটুকু মেধা দিয়ে তাঁর বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বীর’ ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন শাকিব খান ও বুবলী। একই সময়ে সৈকত নাসির পরিচালিত ‘ক্যাসিনো’ সিনেমার শুটিং করেন বুবলী। এরপর আড়ালে চলে যান বুবলী। দীর্ঘ ১১ মাস পর আবারও আড়ালে ভেঙে সবার সামনে এলেন তিনি।
সুত্রঃ প্রথম আলো