রবিবার , ১৯ মে ২০১৯ | ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

তোতা পাখির দৌরাত্ম, মামলা-হামলা ও রাবির বর্তমান প্রশাসন

Paris
মে ১৯, ২০১৯ ১:১৬ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপিট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ্ তেমনি সম্মান জনকও। গত কয়েকদিন ধরে সম্মান জনক এই পদটি নিয়ে নানা মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা থেকে শুরু করে সু-উক্তি, কুটুক্তি কোনো কিছুই আর বাদ যায়নি। তাই নিজে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যদিও বিষয়টি বেশ স্পর্ষকাতর। আবার এটিও সত্য যে, প্রতিটি প্রশাসনের তেলবাজদের তেলেচমাতিতে সমাজে বিচূর্ণ এক মানুষ আমি।

এর মধ্যেও আবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর মধ্যে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী গ্রুপ রয়েছে। উক্ত বিষয়টি আরও স্পর্ষকাতর এই জন্য বলছি- কেননা মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

একই সাথে হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ১৯৭৩-এর এ্যাক্ট এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত। এই আইনেই দেখা যায়, মাননীয় উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কে কে দায়িত্ব পালন করতে পারেন? প্রথমত: উপ-উপাচার্য এবং তার অনুপস্থিতিতে কোষাধ্যাক্ষ যদি কোষাধ্যাক্ষও না থাকেন তবে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন (পূর্বে কলা অনুষদের ডিন ছিল)। যেহতু উক্ত সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়র উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যাক্ষ পদ দুটি শূন্য ছিলো তাই বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।

এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেমন অযৌক্তিক তেমনি বোকামিও। সংবাদ মাধ্যমে খবরের শিরোনাম- ‘প্রতারণা করে বিভাগ থেকে অবসর, রাবি উপাচার্যের পদে থাকা নিয়ে চ্যালেঞ্জ’। এখানে ‘প্রতারণা’ শব্দটির ব্যবহার যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি আপত্তিকরও বটে। কেননা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যকে নিয়ে এ ধরণের ব্যাক্যের ব্যবহার দুঃখজনক।

অন্যদিকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির দেওয়া নিয়োগকে যে আইন বিশারদ চ্যালেঞ্জ করছেন তিনিও যে আইন লঙ্ঘন করেছেন। কেননা একটি দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন-তা সকল আইনের উর্দ্ধে।

উক্ত বষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে লিগ্যাল নোটিসটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন যেমন আসবে, তেমনি মানহানিকর বিষয় উপস্থাপনের জন্য আইন উল্টো পথেও হাঁটতে পারে। এ কথা ভূলে গেলে চলবে না যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-এর মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানকে আগামী চার বছরের জন্য উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছেন।

উক্ত সময়ের মধ্যে তিনি তাঁর বিভাগের অধ্যাপক-এর দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করলেও উপাচার্য পদ থেকে কিন্তু পদত্যাগ করেননি। বরং বলা যায়- যে সময়ের জন্য তিনি অধ্যাপক এর দায়িত্ব থেকে অবসর নেন, সেই সময়টুকু নিয়মানুযায়ী অন্যের উপর উপাচার্যের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দিয়েছেন।

আরও উল্লেখ্য যে, অবসর গ্রহণপূর্বক উপাচার্যের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতির অনুমতি পার্থনা করেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিষয়টির অনুমোদনও দিয়েছেন।

সংবাদের শিরোণামে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৭ মে চার বছরের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানকে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। ওই দিনই তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু আচার্যের পূর্বানুমতি না নিয়ে ওই বছরের ২১ জুন পূর্বাহ্নে উপাচার্যের পদে থেকে নিজ বিভাগে অর্থাৎ ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। ওই দিন অপরাহ্নে উক্ত পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এ কারণে ওই বছরের ২১ জুন পূর্বাহ্ন থেকে অপরাহ্ন পর্যন্ত উপাচার্যের পদে সাময়িক শূন্যতা সৃষ্টি হয়।

উপাচার্যের পদের সাময়িক শূন্যতা পূরণের জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়াই অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান শুধু একদিনের জন্য (২১০৬২০১৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড আখতার ফারুক দায়িত্ব প্রদান করেন, যা সম্পূর্ণ বে-আইনি ও নীতির বিরোধী। এ কথাটি ভূলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশের কোর্ট-কাচারী দ্বারা কিন্তু রাষ্ট্রপ্রতি পরিচালিত হয় না বরং মহামান্য রাষ্ট্রপতি দ্বারা বাংলাদেশের আইন পরিচালিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ পূর্বক উপাচার্যের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে রাষ্ট্রপতির অনুমতি প্রার্থনা করেন। তাই এটিও সত্য যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন চলতি দায়িত্ব পালনে অনুমতি প্রদান করেছেন, তখন উপাচার্যের পদটি কোনো ভাবেই বে-আইনী নয়। বরং যে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উল্লিখিত বিষয়টি নিয়ে রম্যরচনায় সামিল হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আহ্বান জানাই।

শুধু তাই নয় এদের পিছনেও যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোরতম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। বর্তমান মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর রাজনীতি করেন বলেই ১/১১ মতো দঃসময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। তবুও পিছপা হননি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী হিসেবে যে কোন সভা সেমিনারে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য সর্বদাই রেখেছেন।

পূনরায় প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্ষমতালোভী কিছু ব্যক্তির যোকসাজসে যে এ সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, ষঢ়যন্ত্র করে কোনো লাভ আছে কি? তাই বলছি, ভালো শিক্ষক, আইন বিশারদ, সাংবাদিক বা ভালো ছাত্র হওয়ার আগে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

বর্তমান মাননীয় উপাচার্য অনেক ধৈর্যশীল। কেননা কিছুদিন আগেও যারা নিজ সন্তানের চাকুরীচুত করেছিলেন, তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি। তবে এটিও সত্য যে তেলবাজ ও ক্ষমতালোভীরা অনেক চালাক এবং ভয়ংকর চতুর। আর বর্তমান প্রশাসনেও তেলবাজদের দৌরাত্ব চোখে পড়ার মতো।

প্রকৃত দুঃসময়ের মানুষগুলো তেলবাজদের ভীড়ে এখন ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। আবার অন্যদিকে তেলবাজরা তোতা পাখীর মতো সর্বময় সুবিধা নিয়ে চলছে কিন্তু দুঃসময়ের মানুষগুলো তাদের প্রাপ্ত অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কি? একবার ভাববার দরকার আছে। অথচ পূর্বের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর এম মিজান উদ্দিনের সময় তার কাছের মানুষগুলো অনেক সুবিধা নিয়েছেন এবং বিরোধীদের বিনা অপরাধে অধিকার থেকেও বঞ্চিতও করেছেন। এখন কিন্তু তা হচ্ছে না তবে তোতা পাখির দৌরাত্ত বেড়ে চলেছে দেদারছে।

লেখক: ড. মোঃ হুমায়ুন কবির সহযোগী অধ্যাপক চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগ, রাবি ও সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখা এবং সদস্য সচিব, রাবি প্যারিস রোড সংরক্ষণ উপ-কমিটি।

সর্বশেষ - মতামত