তেল চড়ছেই, অস্থির স্বর্ণ

বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েই চলছে। গত এক সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে এক শতাংশের ওপর। তিন সপ্তাহ ধরেই তেলের এই দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত। ফলে মাসের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম টানা বাড়লেও স্বর্ণের দামে বেশ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ বড় উত্থান, এরপরই আবার বড় পতনের ঘটনা ঘটছে। কয়েক মাস ধরেই স্বর্ণের বাজারে এ অবস্থা চলছে। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা চলায় গত দেড় মাসে দেশের বাজারে তিন দফা স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের কারণে গত ২০ এপ্রিল প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়। রেকর্ড এই দরপতনের পরই তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে রেকর্ড দরপতনের ধকল সামলে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনার সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং লিবিয়ার তেল উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঝে বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় দরপতন হয়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অপরিশোধিত ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়। এতে নভেম্বরের শুরুতে ৪০ ডলারের নিচে নেমে যায় অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল।

এই পতনের ধকল কাটিয়ে আবার তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১ দশমিক শূন্য ৩ ডলার বেড়ে ৪৬ দশমিক ১১ ডলারে উঠেছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে এখনও তেলের দাম ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম রয়েছে।

অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি দাম বেড়েছে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের। গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ দশমিক শূন্য ৯ ডলারে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ১৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। বছরের এই তেলের দাম ২৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কম রয়েছে।

অপরদিকে হান্টিং অয়েলের দাম গত এক সপ্তাহে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি গ্যালনের দাম ১ দশমিক ৩৯ ডলারে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে হান্টিং অয়েলের দাম ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম রয়েছে।

এদিকে করোনার প্রকোপের মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। দফায় দফায় দাম বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২ হাজার ৭৪ ডলারে ওঠে। ৭ আগস্ট থেকে পতনের কবলে পড়ে উঠতে থাকে স্বর্ণের দাম। ১১ আগস্ট এসে বড় পতন হয় স্বর্ণের দামে। একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতনের ধারা। এতে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম সাড়ে ১৮শ ডলারের কাছাকাছি চলে আসে।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার মধ্যেই ইউরোপজুড়ে শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ধাপ। এতে বিশ্ববাজারে আবার স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ১৯শ ডলারের নিচে নেমে যাওয়া স্বর্ণের দাম আবার ১৯শ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ১৫ অক্টোবর থেকে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়।

তবে নভেম্বরে শেষদিকে এসে আবার পতনের মধ্যে পড়ে স্বর্ণের দাম। এতে ২৫ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতনের ধারা গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও দেখা যায়। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম সাড়ে ১৭শ’ ডলারের কাছাকাছি চলে আসে। বিশ্ববাজারে এমন দরপতন দেখা দেয়ায় সপ্তাহ না ঘুরতেই ২ ডিসেম্বর থেকে স্বর্ণের দাম আর এক দফা কমানো হয়।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৫১৭, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৭৬৯ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার ৪৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অবশ্য দেশের বাজারে স্বর্ণার দাম কমানোর ঘোষণা দেয়ার দিনই (১ ডিসেম্বর) বিশ্ববাজারে আবার বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। দাম বাড়ার প্রবণতা চলে পরের দুই কার্যদিবসেও। শেষ কার্যদিবস শুক্রবার স্বর্ণের দাম কিছুটা কমেছে। এর পরও সপ্তাহের ব্যবধানে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৩৭ দশমিক ৯৫ ডলারে উঠে এসেছে।