তিন মাসে পাঁচ রুশ ধনকুবেরের আত্মহত্যা: রিপোর্ট

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিক থেকে শুরু করে পরবর্তী তিন মাসে কমপক্ষে পাঁচজন রুশ ধনকুবের আত্মহত্যা করেছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তাদের মধ্যে তিনজন পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর নিজের জীবন নিয়ে নেন।

নিহত এই পাঁচজনের মধ্যে চারজনই রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি জায়ান্ট ‘গ্যাজপ্রম’ বা এর একটি সহযোগী সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন।

মার্কিন গণমাধ্যম ‘সিএনএন’ এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সিএনএন’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কোনও সাড়া দেয়নি।

লিওনিদ শুলম্যান

রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তির খবর অনুযায়ী, তিনি ছিলেন রুশ জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রমের শীর্ষ নির্বাহী। গত ৩০ জানুয়ারি লেনিনগ্রাদের কাছে লেনিনস্কি গ্রামে নিজের কটেজে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পাশে পাওয়া একটি চিরকুট পাওয়া যায়। এ কারণে তদন্তকারীদের ধারণা তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

সে সময় রাশিয়ার জাতীয় সম্প্রচারকারী রেনটিভি লিওনিদ শুলম্যানকে গ্যাজপ্রম ইনভেস্টের পরিবহন বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে হিসেবে শনাক্ত করে।

আলেক্সান্ডার তাইয়ুলিয়াকভ

লিওনিদ শুলম্যানের মৃত্যুর এক মাসের মাথায় গ্যাজপ্রমের আরেক শীর্ষ নির্বাহী আলেক্সান্ডার তাইয়ুলিয়াকভকেও মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন গ্যাজপ্রমের ইউনিফাইড সেটেলমেন্ট সেন্টার ফর করপোরেট সিকিউরিটির উপ-মহাপরিচালক। আলেক্সান্ডার তাইয়ুলিয়াকভের মরদেহ সেন্ট পিটার্সবুর্গের একটি কটেজে উদ্ধার করা হয়। গ্যারেজে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া গেছে। তার মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিশ। এতে তদন্তকারী ধারণা করছেন, এই রুশ ধনকুবের আত্মহত্যা করেছেন।

ভাসিলি মেলনিকভ

আরেক রুশ ধনকুবের ভাসিলি মেলনিকভ। গত ২৩ মার্চ তাকেও একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সঙ্গে তার সঙ্গে স্ত্রী গ্যালিনা ও দুই ছেলের মরদেহও উদ্ধার করা হয়।  তাদের শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থলে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিও পাওয়া গেছে।

৪৩ বছর বয়সী ভাসিলি মেলনিকভ মেডস্টম নামে মেডিকেল সংস্থার মালিক ছিলেন।

তদন্তকারীরা বলছেন, ৪১ বছর বয়সী স্ত্রী এবং ১০ ও ৪ বছরের দুই ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন মেলনিকভ। রুশ দৈনিক পত্রিকা কমারসান্টের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

জানা গেছে, পুলিশ বাইরের হস্তক্ষেপ বা ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্ন পায়নি মেলনিকভের অ্যাপার্টমেন্টে। ছেলেদের মরদেহ তাদের কক্ষে এবং মেলনিকভের স্ত্রীর মরদেহ শয়নকক্ষে পাওয়া গেছে। বাথরুমে পাওয়া গেছে মেলনিকভের মরদেহ।

ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, মেলনিকভের কোম্পানি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ছিল।

ভ্লাদিস্লাভ আভায়েভ

গত ১৮ এপ্রিল গ্যাজপ্রম ব্যাংকের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিস্লাভ আভায়েভের মরদেহ মস্কোর বিলাসবহুল বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। একই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় তার স্ত্রী ও মেয়ের মরদেহ।

কয়েক দিন ধরে যোগাযোগ করতে না পারা আভায়েভের এক আত্মীয় তাদের মরদেহ প্রথম দেখতে পান। অ্যাপার্টমেন্টটি ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল। আভায়েভের হাতে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, নিজের স্ত্রী ও ১৩ বছরের মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, বেসরকারি মালিকানাধীন গ্যাজপ্রমব্যাংক সম্পদের হিসাবে রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক।

সের্গেই প্রোটোসেনিয়া

ভ্লাদিস্লাভ আভায়েভের মৃত্যুর ঠিক একদিন পর ১৯ এপ্রিল রুশ জ্বালানি জায়ান্ট নোভাটেকের সাবেক শীর্ষ ব্যবস্থাপক সের্গেই প্রোটোসেনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  ইউরোপের দেশ স্পেনের একটি ভিলায় প্রোটোসেনিয়া, তার স্ত্রী ও মেয়েকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখানে ইস্টারের ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন তারা।

স্পেনের কাতালোনিয়া পুলিশ ৫৫ বছর বয়সী এই ধনকুবেরের লাশ বাগানে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। তার স্ত্রী ও মেয়েকে বিছানায় ছুরিকাঘাতের কারণে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রোটোসেনিয়ার মরদেহের পাশে একটি কুড়াল ও ছুরিও পাওয়া গেছে।

পুলিশ দুটি সম্ভাব্য পরিণতি মাথায় নিয়ে তদন্ত করছে। স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন প্রোটোসেনিয়া অথবা পুরো পরিবারকে হত্যার পর এটিকে হত্যার পর আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়েছে।

তবে প্রোটোসেনিয়ার ছেলের দাবি, তার বাবা তার মা ও বোনকে অত্যধিক ভালবাসতেন। তার দ্বারা স্ত্রী-মেয়ের এমন ক্ষতি হতে পারে না বলে মন্তব্য তার।

জানা গেছে, প্রোটোসেনিয়ার পরিবার মূলত ফ্রান্সে বসবাস করে। আর নোভাটেক রাশিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি।

নোভাটেকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যবশত গণমাধ্যমে এসব মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।  কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে এই জল্পনাগুলো বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত নয়। আমরা আশা করি- স্পেনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত পরিচালনা করবে এবং যা ঘটেছে তা খুঁজে বের করবে।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন