তিনমাস ধরে শূন্য কোষাধ্যক্ষের পদ: আর্থিক কার্যক্রমে চরম স্থবিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় তিনমাস ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোষাধ্যক্ষের পদটি শূন্য রয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট, বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দের কার্যক্রমেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। উপাচার্যের মৌখিক আদেশে উপ-উপাচার্য কোষাধ্যক্ষের রুটিন কাজ চালিয়ে নিলেও উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে দিতে পারছেন না তিনি। একইসঙ্গে উপ-উপাচার্যকে অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সায়েন উদ্দিন আহমেদের মেয়াদ শেষ হয়। পরেরদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ এ পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। ওই সময় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদও শূন্য ছিল। তবে ৭ মে উপাচার্য ও ১৭ জুলাই উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে কোষাধ্যক্ষ পদটি এখনও শূন্য পড়ে আছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় প্রণীত ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের ১৪ ধারাতে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের নিয়ম ও কাজ বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কোষাধ্যক্ষ পদে একজনকে নিয়োগ দেবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ড অনুমোদন করবেন এবং আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন করবেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর জুলাই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাশ হয়নি। দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জুন মাসের মধ্যে তাদের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করিয়ে নিলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে রাবি কর্তৃপক্ষ। এর মূলে রয়েছে কোষাধ্যক্ষ না থাকা। পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া নিয়েও সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) রাবির সার্বিক উন্নয়নে ৩৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করে। সেখানে শিক্ষার্থীদের দু’টি আবাসিক হল, শিক্ষকদের উন্নতমানের কোয়ার্টার, প্রধান ফটকের সামনে ফুটওভার ব্রিজ, নির্মাণাধীন ভবনগুলোর নির্মাণ শেষসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ আগামী চার বছরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে বাকি অর্থ সরকারে ফান্ডে ফেরত চলে যাবে বলেও একনেকের সভায় বরাদ্দ অনুমোদনের শর্তে উল্লেখ ছিল। অথচ প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো পদপেক্ষ নিতে পারেনি রাবি প্রশাসন। এক্ষেত্রেও কোষাধ্যক্ষ না থাকাকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘কোষাধ্যক্ষ না থাকায় উপাচার্যের মৌখিক নির্দেশনায় কোষাধ্যক্ষের বিভিন্ন কাজ দেখভাল করতে হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দেখভাল করা কষ্টসাধ্য। দ্রুত কোষাধ্যক্ষ পদ পূরণ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি মহোদয়। এ বিষয়ে উপাচার্য কিংবা উপ-উপাচার্যের কিছু করার নেই। কোষাধ্যক্ষ না থাকায় তাঁর দায়িত্ব উপ-উপাচার্য দেখভাল করছেন। তবে পদ শূন্য থাকলে বড় ধরনের কাজগুলো করা সম্ভব হয় না।’

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। শিক্ষা মন্ত্রাণালয় দ্রুত এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি দফতরে ফাইল পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিলে দ্রুত পদটি পূরণ হবে।’

স/বি