সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়- এরকম ২২টি উৎস চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেওয়া, নতুন সংযোগ দিতে অনীহা এবং অবৈধ সংযোগ বৈধ না করা, অবৈধ লাইন পুনঃসংযোগ, অবৈধ সংযোগ বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ার চিত্র উঠে এসেছে দুদকের এক প্রতিবেদনে।
দুদকের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কাছে কমিশনের ওই প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
সেখানে বলা হয়েছে, তিতাসে ‘সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি’ হয় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে। দুর্নীতি বন্ধে ১২টি সুপারিশও করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
দুদক বলছে, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য পেয়েছে তারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবাসিকের চেয়ে শিল্পেই অবৈধ সংযোগ বেশি।
“তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী তিতাসে কর্মরত নয় এমন কিছু টেকনিক্যাল ব্যক্তির সাথে যোগসাজশে ঘুষের বিনিময়ে স্বাভাবিক সংযোগের পাশাপাশি রাতের আঁধারে অবৈধভাবে এসব সংযোগ দিয়ে থাকে।”কেউ নতুন সংযোগের জন্য বা সংযোগ বৈধ করার জন্য আবেদন করলে তা সহজে অনুমোদন পায় না।
“বৈধ সংযোগের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায় না। তাই দুর্নীতিবাজরা অবৈধ সংযোগকে বৈধ করতে আগ্রহী নয়।”
এ বিষয়ে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টের তথ্য দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, “একটি অবৈধ সংযোগ নিতে সে সময় তিতাসের কর্মচারীকে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হত। বর্তমানে তা আরও বেড়েছে।”
তিতাসের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, “ভ্রাম্যমাণ আদালত তিতাসের অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিলেও রাতে অর্থের বিনিময়ে পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। অবৈধ সংযোগ বন্ধে সহসাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অনেক সময় অদৃশ্য হস্তক্ষেপে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়। শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ প্রদানে নীতিমালা মানা হয় না।”
এছাড়া ঘুষের বিনিময়ে বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহককে শিল্প শ্রেণির সংযোগ দেওয়া, মিটার টেম্পারিং, অনুমোদনের অতিরিক্ত বয়লার ও জেনারেটরে গ্যাস সংযোগ, বৈধ সংযোগ দিতে হয়রানি, মিটার বাইপাস করে দুর্নীতি, ইচ্ছাকৃতভাবে আবাসিক গ্যাসের চাপ কমিয়ে রাখা, ইচ্ছাকৃতভাবে ইভিসি (ইলেকট্রনিক ভলিউম কারেক্টর) না বসানো, দীর্ঘদিন ধরে শিল্প এলাকায় পোস্টিং নিয়ে রাখা, গ্যাস কম সরবরাহ করেও সিস্টেম লস দেখানো, অবৈধ চুলাপ্রতি বৈধ চুলার সমান টাকা আদায় করে অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া সংকেত দিয়ে অবৈধ গ্রাহকের কাছ থেকে বিল আদায়, আঞ্চলিক ব্যাংক হিসাব থেকে তিতাসের মূল হিসাবে যথাসময়ে টাকা স্থানান্তর না করা, দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বিল আদায় না করা এবং দরপত্রে অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মত অভিযোগের কথা উঠে এসেছে দুদকের প্রতিবেদনে।
এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধের পাশাপাশি মিটার টেম্পারিং বন্ধ এবং গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় রোধে ডিস্ট্রিবিউশন এবং গ্রাহক পর্যায়ে প্রি-পেইড মিটার চালু করার সুপারিশ করেছে দুদক।
অবৈধ সংযোগ রয়েছে এ রকম তথ্যের ভিত্তিতে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর ফলোআপ করা, কর্মীদৈর দীর্ঘদিন শিল্প এলাকায় বা একই বিভাগে না রাখা, জনবলের দক্ষতা বাড়ানো, অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা, তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনের সুপারিশে।
এছাড়া অডিট আপত্তিগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি, সিস্টেম লসের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ, তিতাসের নিজস্ব সার্ভেইলেন্স এবং মোবাইল কোর্ট, নিজস্ব প্রসিকিউশন বিভাগ এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের থেকে তিতাস গ্যাস কোম্পানির প্রায় ৪০৩ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বকেয়া পাওনা আদায়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে দুদক।
কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, এই প্রতিবেদনে ২২টি সম্ভাব্য দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে।
“কমিশনের এই প্রতিবেদন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সহজ হবে। এভাবে দুর্নীতি সংঘটনের আগেই তা প্রতিরোধ করা গেলে, মামলা-মোকদ্দমার করার প্রয়োজন পড়বে না।”
এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছেও প্রতিবেদনের একটি কপি পাঠিয়েছেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত।