তালেবানের প্রত্যাবর্তন: কোন পথে আফগানিস্তান?

আফগানিস্তানে আবার ক্ষমতায় ফিরেছে তালেবান। অনেকটা বিনা বাধায় একের পর এক প্রদেশ, শহর দখল করে নেওয়ার পর ১৬ আগস্ট বিকালে তারা রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে ২০ বছরের মার্কিন দখলদারি ও তাদের মদদপুষ্টদের শাসনের অবসান ঘটেছে।

তালেবান এখন কাবুলসহ বিভিন্ন শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতোমধ্যেই তারা বেশকিছু নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। রাজধানী দখলে নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান নেতারা যা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে এই তালেবান ২০ বছর আগের তালেবান নয়। এখনকার তালেবান অনেকটাই পরিশীলিত ও বাস্তববাদী। তারা বলেছেন, ‘নারীরা বাইরে বের হতে পারবে- তবে বোরকা পড়তে হবে। নারীরা স্কুল-কলেজেও যেতে পারবে।’ সব জাতিগোষ্ঠীকে সরকারে অন্তর্ভুক্তির কথাও তারা বলেছেন। এছাড়া কোনো জঙ্গি সংগঠনকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বলেছেন- ‘তালেবানের বিপক্ষে লড়েছে, সরকারের হয়ে কাজ করেছে- এমন লোকজনের ভয়ের কারণ নেই। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।’

তালেবানের পরিবর্তিত এ অবস্থান দেখে আন্তর্জাতিক মহল আশ্বস্ত হলেও আফগান জনগণের মধ্যে কিন্তু চরম ভয় ও ভীতি কাজ করছে। এ কারণেই তারা দলে দলে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে। কাবুল দখলের মুহূর্তে একজন খ্যাতনাম কবিকে হত্যা, খাবার না দেওয়ায় এক নারীকে নির্যাতন করে হত্যা, কাবুলের রাস্তায় লোকজনকে ধরে ন্যাড়া করে দেওয়া, দোকানে নরীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা কিংবা কালি দিয়ে মুছে দেওয়া, বিদেশে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরের দেওয়াল টপকানোর সময় লোকজনকে গুলি- এসব ঘটনা জনমনে ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও এখন তারা সরকার ও মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা লোকজনকে খুঁজছে। না পেয়ে পরিবারের লোকজনকে নির্যাতন করছে। শুধু তাই নয়, নারী সাংবাদিকদের ওপরও নির্যাতন নেমে এসেছে। তালেবান জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক নারী সাংবাদিককে খুঁজছে। বাসায় না পেয়ে তার এক স্বজনকে হত্যা করেছে তালেবান। ইতোমধ্যে সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের এক নারী সাংবাদিককে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, তালেবান যা বলছে তা তাদের মনের কথা নয়। আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায় করার জন্য তারা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। বাইরের সমর্থন নিয়ে ও সরকার গঠন করার পর তারা আগের রূপে আর্বিভূত হবে। তালেবানি জামানায় স্বাধীন মতপ্রকাশ ও নারীর স্বাধীনতা অলীক ধারণা মাত্র। ধর্মের নামে মধ্যযুগীয় বিচার ব্যবস্থা শিগগিরই মানুষ দেখতে পাবে।

যে কারণে তালেবানের প্রত্যাবর্তন: অনেকে মনে করছেন, শক্তি দিয়ে কিংবা যুদ্ধে জয়ের মধ্যদিয়ে তালেবান আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরেছে। আপাতদৃষ্টিতে এটা মনে হতে পারে; কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। তালেবানের এই ফিরে আসার পেছনে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, আফগানিস্তানের ভৌগোলিক বাস্তবতা, প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থ, জাতিগত বিভেদ ইত্যাদি।

দুনিয়াজুড়ে মাতুব্বরি তথা প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন রয়েছে। এর পেছনে প্রতিনিয়ত ব্যয় এবং ইরাক ও আফগানযুদ্ধে বিশাল ব্যয় মার্কিন অর্থনীতিকে বড় ধরনের চাপে ফেলেছে।  দেশটিতে অভ্যন্তরে বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। অবকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগে চীনের অনেক পেছনে যুক্তরাষ্ট্র।

গবেষণা ও উদ্ভাবনে চীনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র তিন ধাপ পিছিয়ে। চীন বর্তমানে এমন সব ডিভাইস উদ্ভাবন ও উৎপাদন করছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনার বাইরে। এসব নিয়ে মার্কিন জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। মোড়লিপনায় অর্থ ব্যয় না করে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি তাদের। মার্কিন নীতিনির্ধারকরাও সরকারকে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও গবেষণায় ব্যয় বাড়াতে বলছেন। এসব কারণে মার্কিন সরকার বহির্বিশ্বে সামরিক ব্যয় কমাতে চাচ্ছে। আফগান মিশন যেহেতু অলাভজনক; তাই এখান থেকে সরে পড়াকে উত্তম মনে করেছে তারা।

ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লক্ষ্য পূরণ হয়েছে ঠিক। কিন্তু অন্য লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বড় বাধা চীন ও রাশিয়া। পাকিস্তান মার্কিন ব্লক থেকে বের হয়ে চীনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। এই তিনটি দেশই আফগানিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরেক শত্রু রাষ্ট্র ইরানের অবস্থানও আফগানিস্তানের পাশে। এই চারটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য স্বার্থ হাসিলের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে। ভৌগোলিক কারণে যা দূর করা অসম্ভব। সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শের হলেও তালেবান ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে অনেক আগেই। তালেবান রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র পাচ্ছিল। ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’ এ বিষয়টিই তালেবানকে সুবিধা করে দেয়। এ কারণেই চীন ও রাশিয়া তালেবানকে সহযোগিতা করছিল। ইরানেরও নৈতিক সমর্থন ছিল তালেবানের ওপর। আর আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতি রোধ করতে পাকিস্তান মরিয়া হয়ে তালেবানের পাশে ছিল- যদিও বিষয়টি স্বীকার করতে চাচ্ছে না ইমারান খান সরকার। তালেবানের সঙ্গে এই চার দেশের সখ্যতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীটির ক্ষমতা দখলের পর। চারটি দেশই তালেবানের সঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। তালেবান কাবুল দখলের পর অনেক দেশই তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিলেও চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের দূতাবাস ঠিকই খোলা রয়েছে।

সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে আফগানিস্তানে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় ছাড়া অন্য কোন লক্ষ্য অর্জন করা যাচ্ছে না। তাই আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়াই ভালো মনে করে দিশটি। আর ছেড়ে যাওয়ার জন্য কৌশল হিসেবে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নেয় তারা। এ নিয়ে দোহায় তালেবানের সঙ্গে অনেকবার বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘ আলোচনা শেষে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দু’পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় বিদেশি বাহিনীর গত মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গত এপ্রিল মাসে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার ২০তম বার্ষিকীর (১১ সেপ্টেম্বর) মধ্যেই সেনা প্রত্যাহার শেষ হবে। সে কারণে এখনও আফগানিস্তানে কিছু সেনা রয়ে গেছে। গত ২৯ মে মাসে কাবুল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাগরাম বিমান ঘাঁটি ছেড়ে যায় মার্কিন সেনার। এই ঘাঁটি থেকেই তালেবান ও অন্য জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা পরিচালনা হতো।

আসলে এই চুক্তির মধ্যে দিয়েই তালেবানের ফিরে আসার পথ সৃষ্টি হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পরই তালেবান বিজয় উল্লাস করে। কারণ চুক্তিতে একে অপরকে আক্রমণ না করার এবং মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে- যা ছিল তালেবানদের জন্য বড় অর্জন। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে- যেদিন মার্কিন সেনারা বাগরাম ঘাঁটি ত্যাগ করে সেদিনই কাবুল পতনের ধ্বনি বেজে ওঠে। এরপরই কাবুল দখলের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে তালেবান। সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা জোরদার করে তারা। একের পর এক এলাকা দখলে নিতে থাকে। মার্কিন-তালেবান চুক্তি যে আফগান সরকারি বাহিনীর মনোবলে আঘাত করেছে, তা তালেবানকে প্রতিরোধ না করার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে ছায়ায় আফগান সরকারি বাহিনী গড়ে উঠে সে ছায়া সরে যাওয়া তাৎক্ষণিক এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া আফগান সেনা ও পুলিশ বাহিনীর গঠন প্রক্রিয়া. নিয়োগ এবং বেতন কাঠামোতে অসঙ্গতি- ওই বাহিনীর ভেতর অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এ কারণেই আফগান বাহিনীর অনেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাই যদি না হতো, এতবড় বাহিনীর ২০ হাজার সেনা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শুধু দাঁড়িয়ে থাকলেও এত তাড়াতাড়ি তালেবানের পক্ষে কাবুল দখল করা সম্ভব হতো না। আফগান বাহিনীর একটি বিমান ইউনিট ছিল। সেই ইউনিট তালেবানের ওপর শক্তিশালী হামলা চালিয়েছে এমন কোনো তথ্যও নেই। এছাড়া সরকারে মূল্যায়ন না হওয়ায় কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর নেতারা তালেবানের সঙ্গে যোগ দেয়।

এ কারণেই বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রই তালেবানকে ক্ষমতায় ফেরার পথ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই চিন্তাও থাকতে পারে যে, অদূর ভবিষ্যতে এই তালেবানকেই চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে। কারণ ধর্ম দ্বারা পরিচালিত তালেবানের সঙ্গে এক সময় চীন-রাশিয়ারও বিরোধ বাধবে। বিরোধ বাধার অনেক কারণও রয়েছে। চীনের উইঘুর কিংবা রাশিয়ার চেচেন মুসলমানদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের মন্ত্র এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য তালেবান কিংবা তাদের সঙ্গে থাকা অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠী (আলকায়দা, হাক্কানি নেটওয়ার্ক) যে কাজ করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়। হয়তো যুক্তরাষ্ট্র তখনই তালেবান কিংবা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।

কোন দিকে যাচ্ছে আফগানিস্তান?: এই প্রশ্নের উত্তর সহজ; যেহেতু বিজয়ী শক্তি তালেবান। তারা দেশকে কোন পথে পরিচালিত করবে তা স্পষ্ট। আফগানিস্তান যে শরিয়াহ আইনে চলবে, তা তারা ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। এই ব্যবস্থার পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য এখন তারা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে সরকার গঠনের কথা বলছে। শরিয়াহ শাসন কাঠামোতেই তারা একটি অংশগ্রহণমূলাক সরকার গঠন করতে চাচ্ছে। এ নিয়ে হামিদ কারজাই ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান। এই প্রচেষ্টা সফল হলে তালেবান টিকে যাবে। তা নাহলে এই গোষ্ঠীর পক্ষে দেশ পরিচালনা কঠিন হবে। হয়তো দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে তালোবানের বিরুদ্ধে জালালাবাদসহ দেশটির কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। সেই বিক্ষোভে তালেবান গুলি চালিয়েছে। এতে ৫ জন মারা গেছেন। নারীরাও রাস্তায় নেমেছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমারুল্লাহ সালেহ নিজেকে বৈধ প্রেসিডেন্ট দাবি করে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। তিনি এখন নিজ জন্মস্থান পাঞ্জশিরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানের উত্তরের এই জায়গাটি এখনো নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের নিয়ন্ত্রণে। যেখানে তালেবান এখনো ঢুকতে পারেনি। ১৯ আগস্ট চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তালেবান। তাদের হটিয়ে দেয় নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। শুধু তাই নয়, মুজাহিদীন এ জোট ইতোমধ্যে তালেবান নিয়ন্ত্রিত তিনটি জেলা দখল করে নিয়েছে। এই অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে আছেন প্রখ্যাত আফগান নেতা আহমেদ শাহ মাসুদের ছেল আহমেদ মাসুদ। আফগানিস্তানে অন্তত ১৪টি জাতি গোষ্ঠীর বাস। এদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে। ধর্মের আবরণ দিয়ে এই দ্বন্দ্ব নিরসন করা কঠিন।

অতীতেও তালেবান এটা করতে পারেনি। এছাড়া তালেবানদের মধ্যেও বিরোধ রয়েছে। অপেক্ষাকৃত নরমপন্থি অংশ নারীদের কিছুটা স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে হলেও কট্টর অংশটি এর ঘোরবিরোধী। তাদের মতে এটা শরিয়াহ আইনের সঙ্গে যায় না। যদিও পাকিস্তান ফেতরে ভেতরে দুই পক্ষের এই দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করছে। পাকিস্তান চাচ্ছে আফগানিস্তানে একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার হোক। তা নাহলে দেশটিতে যে স্থিতিশীলতা ফিরবে না তা পাকিস্তান ভালো করেই জানে। আর স্থিতিশীলতা না ফিরলে আফগানিস্তানে পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া, ইরান কোনো দেশের স্বার্থই উদ্ধার হবে না। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ উজবেকদের প্রভাবশালী নেতা আমরুল্লাহ সালেহ, আহমেদ মাসুদ (আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে) ইতোমধ্যেই তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দিয়েছেন।

সব মিলে পরিস্থিতি জটিল। চীন, রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও তুরস্কের সমর্থন নিয়ে হয়তো তালেবান সরকার গঠন কিংবা অন্য কোনো কায়দায় দেশ চালাবে। কিন্তু বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নিজেদের মধ্যকার স্বার্থের দ্বন্দ্ব তালেবানের টিকে থাকার পথকে বন্ধুর করে তুলবে। নারী স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হলে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে তালেবানকে।

লেখক: সাংবাদিক

 

সূত্রঃ যুগান্তর