তানোরে সিএনজি-মোটরবাইক গায়েব: ওসিকে তলব

তানোর প্রতিনিধি :

সিএনজি ও মোটরবাইক গায়েব করা রাজশাহীর তানোর থানার সেই বিতর্কিত ওসি কামরুজ্জামান মিয়াকে নোটিশের মাধ্যমে তলব করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার সকালের দিকে রাজশাহীর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গোদাগাড়ী সার্কেল এসপির কার্যালয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে বর্তমান ওসি ও বদলি হওয়া ওসি রাকিব এবং সিএনজির মালিক আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ফলে একজন ওসির বিরুদ্ধে সিএনজি বিক্রি মত গুরুতর অপরাধের খবরে চরম বিব্রত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট জানা গেছে, চলতি ২০২২ সালে আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে থানা থেকে সিএনজি গায়েব বা বিক্রি কিংবা উধাও হয়ে গেছে মর্মে সিএনজি মালিক তানোর পৌর এলাকার আমশো তাঁতিয়ারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আবুল হোসেন ধলু ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় ৬১০২ নম্বর স্বারকে ৩০ আগস্ট নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে সিএনজি মালিক, অভিযুক্ত ওসি এবং বদলি হওয়া ওসি রাকিবুল হাসানকে মঙ্গলবার সকালে তলব করা হয়।

তবে ওসি রাকিবুল হাসান রাকিব জব্দকৃত সিএনজি ও জিডির কাগজপত্রসহ যাবতীয় সবকিছু বুঝিয়ে তিনি বদলি হন বলে সার্কেল এএসপিকে অবহিত করেন তিনি। বিষয়টি তদন্তে সত্যতাও মিলেছে। ফলে বর্তমান তানোর থানায় নিযুক্ত ওসি কামরুজ্জামান মিয়া সিএনজি গায়ে করেছেন বলে অভিযোগ।

এব্যাপারে সিএনজি মালিক আবুল হোসেন ধলু জানান, আমাকে এএসপি স্যার বলেছেন, তিনি তো দুই ওসিকে নোটিশের মাধ্যমে ডেকেছেন। ধলু আরও জানান, আমি স্যারকে বলেছি ওই সিএনজি আমার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আশ্বাস দিয়েছেন, সিএনজি বের করার ব্যাপারে পুলিশের লোকজন কাজ করছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিগত প্রায় দেড় বছর আগে তৎকালিন ওসি রাকিবুল হাসান আবুল হোসেন ধলুর সিএনজি জব্দ করেন। এর কয়েকদিন পর তানোর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে থানায় যান পৌর এলাকার আমশো তাঁতিয়ালপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মৃত আমজাদ আলীর পুত্র আবুল হোসেন ধলু। কিন্তু সিএনজির কাগজপত্র হালনাগাদ না থানায় তাকে দেওয়া হয়নি। এঅবস্থায় ওসি রাকিবুল হাসান বদলি হয়ে যান। গত ১২ ফেব্রæয়ারী থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেন কামরুজ্জামান মিয়া। তিনি যোগদানের পর সিএনজি ও মটরবাইক ছাড়াও বেশ কিছু মটরযান গায়েব করেছেন।

সিএনজি মালিক আবুল হোসেন আরও জানান, বর্তমান ওসি আসার পরও তার সিএনজি থানায় ছিল। কিন্তু প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে সিএনজি থানায় দেখতে পাননি তিনি। এহেন অবস্থায় ওসির কাছে সিএনজির কথা বলা মাত্রই তিনি নানা ধরনের হুমকি ধামকি এবং বিভিন্ন মামলার ভয় দেখান। এতে তিনি নিরুপাই হয়ে অভিযোগ করেছেন।

এব্যাপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গোদাগারী সার্কেল) আসাদুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সকালে তানোর থানার বর্তমান ওসি কামরুজ্জামান মিয়া ও বদলি হওয়া ওসি রাকিবুল হাসান ছাড়াও সিএনজি মালিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলা হয়েছে। বদলি হওয়া ওসি রাকিবুল হাসান সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছিল। তদন্ত চলমান রয়েছে। এছাড়াও আরো কিছু ব্যক্তির সাথে কথা বলে দ্রæত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গ, এরআগে ৩ মার্চ আটককৃত মোটরবাইক থানা থেকে গায়েব হয়ে যায়। পরে ওই মটরবাইকের মালিক তানোর পৌর এলাকার বুরুজ মহল্লার বাসিন্দা বেলাল হোসেন পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেলো ২২ আগস্ট মোটরবাইক নিতে থানায় ডাকেন ওসি। তিনি বুধবার ২৪ আগস্ট সকালে থানায় যান। তার সঙ্গে আরও লোকজন ছিল। তিনি মোটরসাইকেল পাননি। কিন্ত ওসি তাকে বাইকের মূল্য হিসেবে নগদে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন বেলাল।

এবিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ব্যস্ত আছি বলে মোবাইল সংযোগ নিছিন্ন করে দেন।